বৃক্ষরোপণ অভিযান
অন্য ভূমিগর্ত হতে শুনেছিলে সূর্যের আহ্বান
প্রাণের প্রথম জাগরণে তুমি বৃক্ষ আদি ভোট আদিপ্রাণ উচ্চশীর্ষে উচ্চারিলে আলোকের প্রথম বন্দনা
অস্পোহীন পাষাণের বক্ষ পরে আনিলে বেদনা নিঃসাড় নিষ্ঠুর মরুস্থলে
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ভূমিকা:
বৃক্ষরোপণ অভিযান বর্তমান সময়ের বাধ্যতামূলক কার্যক্রম গুলোর একটি। কারণ, বন প্রকৃতি মানুষের নিকটতম প্রতিবেশী। বনভূমিই পৃথিবীর প্রথম আগন্তুক। মানুষের আগমনের পূর্বেই সে এসে মানুষের ক্ষুধা মিটাবার খানা এবং মাথা খুঁজবার শীতল ছায়া সৃষ্টি করে প্রতীক্ষা করছিল মানুষের আবির্ভাবের। তারপর মানুষ এল এবং সৃষ্টির সেই প্রথম প্রভাতে মানুষ ভূমিষ্ট হয়েছিল বিশ্ব শ্যামল অরণ্যের কোলেই। অরণ্য তার অবারিত শ্যামল ছায়া বিস্তার করে তাকে সূর্যের প্রখর দহন জ্বালা থেকে রক্ষা করেছিল। তার ক্ষুধার্ত মুখে অরণ্যই দিয়েছিল খাদ্য প্রকৃতির নানা বিরুদ্ধ শক্তির হাত থেকে রক্ষা করবার জন্যে দিয়েছিল নিরাপদ আশ্রয়। কিন্তু কালক্রমে কৃতঘ্ন মানুষ তার সেই পরম হিতৈষী অরণ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে কঠোর হাতে কুঠার নিয়ে পৃথিবীকে বৃক্ষহীন করতে উদ্যত হয়েছে। কিন্তু বৃক্ষ না থাকলে মানুষ পৃথিবীতে বসবাস করতে পারত কি না সন্দেহ। শুধু মানুষই নয় গোটা প্রাণিঝগতই বিলুপ্ত হয়ে পড়ত। কাজেই বলা যায় বৃদ্ধ প্রাণিজগতের জন্যে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বৃক্ষকে টিকিয়ে রাখা নতুন নতুন বৃক্ষরোপণ করা পরিবেশ সংরক্ষণের জন্যে ব্যায়নের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি আজ প্রাণিকূলের অপরিহার্য কর্তব্য। বৃক্ষরোপণ অভিযানের মাধ্যমে সেই শুভবোধ আজ মানুষের মনে জাগ্রত হচ্ছে।
বৃদ্ধের গুরুত্ব
অরণা হনন যে আত্মহননের নামান্তর তা এতদিনে মানুষের উপলব্ধি হয়েছে। অরণ্য হননের ফলে যে একদিন জলহীন ছায়াহীন মরুভূমি নেমে আসবে এবং তাতে যে একদিন মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে সেই শুভবোধ আজ মানুষের মনে জাগ্রত হচ্ছে। বৃক্ষরোপণ অভিযান সেই শুভবোধের আনন্দময় প্রকাশ। বুদ্ধ আমাদের নানাবিধ প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বৃদ্ধ আমাদের পাকা ফল জীবনধারণের জন্যে প্রয়োজনীয় খাদ্য বস্ত্র তৈরির সুতা বাসগৃহ তৈরির উপকরণ আসবাবপত্র তৈরির কাঠ জ্বালানি ইত্যাদি দিয়ে থাকে। তাছাড়া বনজসম্পদ । দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে। এমনকি বৃক্ষ দেশের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করে। আবহাওয়াকে ঠাণ্ডা রাখতে ভূমিক্ষয়কে রোধ করতে ঝড় বন্যাকে প্রতিরোধ করতে বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে ভূমিকে উর্বর ও সরস করতে বৃক্ষ খুবই দরকার। জীবন রক্ষাকারী অনেক ওষুধও তৈরি হয় বৃদ্ধ থেকে। এছাড়া কাগঞ্জ দিয়াশলাইয়ের কাঠি ইত্যাদির জন্যে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। মোটকথা বৃক্ষ ছাড়া মানবজীবন অচল।
বাংলাদেশে বনের অবস্থা
বৃক্ষের সীমাহীন গুরুত্বের পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করা হলে বাংলাদেশে বনের অবস্থা নৈরাশাজনক বলে হবে বাংলাদেশে বিখ্যাত সুন্দরবন দীর্ঘ ঐতিহ্যের পরিচায়ক। ভাওয়াল মধুপুর সিলেট চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে বনাঞ্চল রয়েছে। কিন্তু ব্যাপকভাবে ও অপরিকল্পিত উপায়ে বনের গাছপালা কেটে ফেলায় দেশের সামগ্রিক বনাঞ্চল কমে যাচ্ছে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্যে দেশের আয়তনের এক চতুর্থাংশ বনাচ্ছাদিত থাকার কথা। কিন্তু দেশে মোট আট শতাংশ বনভূমি রয়েছে। তাছাড়া প্রতিনিয়ত প্রচুর বনসম্পদ বিনষ্ট করে ফেলা হয়। এর ফলে দেশে এখন গাছের অভাব ঘটছে, বনাঞ্জল কমে যাচ্ছে। পরিণামে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় দেশে বৃষ্টিপাত কমে যাচ্ছে বলে অনুমান করা হয়। এভাবে বৃক্ষের অবসান ঘটলে, নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনযজ্ঞ চলতে থাকলে দেশের জন্যে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।
বনজসম্পদ উন্নয়ন
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বনজসম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম কিন্তু পরিতাপের বিষয় বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় বনভূমি খুবই কম। নির্বিচারে বৃক্ষকর্তনের ফলে আমাদের বনভূমি সংকুচিত হয়ে আসছে। আমাদের বনভূমি সংকুচিত হয়ে বর্তমানে মোট স্থলভাগের শতকরা ১৭.০৮ ভাগে এসে দাঁড়িয়েছে। আমাদের অর্থনীতির উন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশের বনজসম্পদের উন্নয়ন ও সংরক্ষণ দরকার। নিম্নবর্ণিত উপায়ে বাংলাদেশের বনজসম্পদের উন্নয়ন করা যেতে পারে :
নতুন বনভূমি সৃষ্টি
বাংলাদেশের নদীতীর উপত্যকা পাহাড়ি উচ্চ অঞ্চল এবং সমুদ্র উপকূলে বনভূমি গড়ে তুললে বনাঞ্চল বৃদ্ধি পাবে।
নির্বিচারে বৃক্ষকর্তন রোধ
আমাদের বনজসম্পদের ওপর মানুষের বেপরোয়া হামলা চলছে। নির্বিচারে বৃক্ষকর্তন রোধ করে বিনষ্ট হয়ে যাওয়া বনকে পুনরায় সজীব করে তোলার সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আবাদযোগ্য জমি সৃষ্টি রোধ
মানুষ আবাদযোগ্য জমি সৃষ্টি করতে নির্বিচ্চারে বৃক্ষকর্তন করে চলছে বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে এটি রোধ করতে হবে।
জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি
বণাঞ্চলের অর্থনৈতিক ও প্রাকৃতিক গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে বিনামূল্যে বিভিন্ন জাতের চারাগাছ সরবরাহ করতে পারলে বনায়ন প্রক্রিয়া জোরদার হবে।
পরিবেশ সংরক্ষণে বৃক্ষ
শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয় পরিবেশ সংরক্ষণের জন্যেও বাংলাদেশে বৃক্ষরোপণের প্রয়োজন আছে। আমরা জানি প্রাকৃতিক ভারসাম্যের জন্যে বাংলাদেশের ২৫ শতাংশ বনভূমি আবশ্যক কিন্তু এখানে বর্তমানে আছে মাত্র ১৬.৪৬ শতাংশ বনভূমি। আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে বনায়ন বৃদ্ধি করা উচিত। তা না হলে আমরা ঐশিহাউস ইফেক্ট এর করাল গ্রাস থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারব না। বৈজ্ঞানিকদের সমীক্ষায় জানা গেছে যে, গ্রীন হাউসের প্রভাবে বাংলাদেশে এক কিলোমিটার সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেতে পারে আর তাতে উপকূলীয় এলাকা প্রায় ২২ ৮৮৯ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ পানির নিচে চলে যেতে পারে। তাছাড়া আমাদের প্রাণিজগতে বেঁচে থাকার জন্যে প্রয়োজনীয় উপাদান হলো অক্সিজেন। অক্সিজেন আমরা সাধারণত পেয়ে থাকি বৃদ্ধ বা বনভূমি থেকে। আমাদের বাংলাদেশের মানুষের জন্যে যে পরিমাণ অক্সিজেনের প্রয়োজন সে পরিমাণ অক্সিজেন মেটাবার মতো বনভূমি বাংলাদেশে নেই। ১৯৪৭ সালে আমাদের দেশে বনের পরিমাণ ছিল ২৪ শতাংশ। কিন্তু বর্তমানে তা কমে অনেক নিচে নেমে গেছে। এমতাবস্থায় আমাদের বনভূমি বা উদ্ভিদ থেকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন আমাদের পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফলে বনভূমি বাড়ানো একান্ত প্রয়োজন।
বনভূমি ও মানবজীবন
মানবজীবন ও অরণ্য জীবন প্রাণের এই দুই মহান প্রকাশের মধ্যে বাজে একটিমাত্র ছন্দ। ঋতুচক্রের আবর্তনের পথে উভয়ের একই স্পর্শকাতরতা। বসন্তের দক্ষিণ বাতাসে মানুষ তার হৃদয়ের আনন্দানুভূতিকে চিত্রে সংগীতে কিংবা কবিতায় প্রকাশ করে। আর অরণ্য তার বাসন্তী বেদনাকে প্রকাশ করে অশোক পলাশ আর কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম প্রগলভতায়। উভয়ের আদান প্রদানের সম্পর্কও অতি নিবিড়। এক বিপুল ভ্রান্তিবিলাসের জন্যে মানুষ এতদিন তার পরম বন্ধুকে চরম শত্রু মনে করে নির্বোধ ঘাতকের মতো ধ্বংসের পৈশাচিক লীলায় মেতে উঠেছিল। আজ আর বনভূমি ধ্বংস নয় বনভূমি সৃজনই প্রয়োজন। অরণ্য ছাড়া পৃথিবী পরিণত হত মরুভূমিতে। অরণ্যই প্রাণের অগ্রদূত।
বনজসম্পদ উন্নয়নে সরকারি ব্যবস্থা
বাংলাদেশ সরকার দেশের বনজসম্পদের গুরুত্বের পরিপ্রেক্ষিতে এর উন্নয়ন ও সংরক্ষণের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বনজসম্পদের উন্নয়ন ও তার সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশে বনশিল্প উন্নয়ন সংস্থা গঠন করা হয়েছে। তাছাড়া বন গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে এবং বনবিষয়ক শিক্ষা প্রদানের জন্য সিলেটে একটি বন মহাবিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বনজসম্পদের ওপর স্নাতন ডিগ্রি প্রদান করা শুরু করেছে।
বৃক্ষহীনতার প্রতিক্রিয়া:
বৃক্ষহীনতার প্রতিক্রিয়া যে কী ভয়াবহ তার পরিচয় আজ পৃথিবীব্যাপী স্পষ্ট। আমাদের দেশেও এর প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। বৃক্ষহীনতার সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হচ্ছে গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠে কার্বন ডাই অক্সাইড আটকে পড়া। এর ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে বন্যা ঘূর্ণিঝড় জলােচ্ছাসের হার অনেক বেড়ে যাবে। এর প্রমাণ ইতােমধ্যে আমাদের দেশে ও বিশ্বের অনেক দেশে পাওয়া যাচ্ছে। আবার ওজোন স্তরের ক্ষয়ের কারণে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে চলে আসায় মানুষ ও জীবজন্তুর নানা রােগ দেখা দেবে। সুপ্রাচীনকাল থেকে মানুষ ও অন্যান্য জীবজন্তুর খাদ্য বস্ত্র ও বাসস্থানের প্রধান সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে বৃক্ষ। আবার প্রাকৃতিকভাবে বন্যপ্রাণীদের খাদ্য ও আশ্রয়দাতা হলাে বৃক্ষরাজি। ফলে বৃক্ষহীনতার ফলে জীববৈচিত্র্যের বিলুপ্তি অবশ্যম্ভাবী। এককথায় বিশ্ব পরিবেশের বিপর্যয় ও হুমকি প্রধানত বৃক্ষহীনতারই ফল।
বাংলাদেশে বৃক্ষ নিধন ও তার প্রভাব
বাংলা প্রকৃতির ঐতিহাময় সবুজ শ্যামল রূপ আজ মানুষের স্বেচ্ছাচারিতা ও নির্মমতার আঘাতে বিলীন হতে বসেছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য যেকোনাে দেশের মােট জমির অন্তত ২৫ শতাংশ দরকার সেখানে সরকারি হিসাব অনুযায়ী আমাদের দেশের বনভূমির পরিমাণ মাত্র ১৭ শতাংশ।ওয়ার্ল্ড রিসাের্সেস বনভূমি ইনস্টিটিউটের মতো মাত্র পাঁচ শতাংশ যা প্রয়ােজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। উপরন্তু অধিক জনসংখ্যার চাপে তাও দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। দেশের সর্বত্র বৃক্ষ নিধনের ব্যাপকতা লক্ষণীয়। কিন্তু বৃক্ষ লাগানােতে যেন সবারই অনীহা। ফলে বনজসম্পদে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বন উজাড়ের মাধ্যমে ধারণ করেছে কাঙালরূপ। বৃক্ষের ক্রমনিধন বাংলাদেশের আবহাওয়াতে সৃষ্টি করেছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। বিশেষত উত্তরাঞ্চলের আবহাওয়ায় দিনের বেলা দুঃসহ গরম আর রাতে প্রচণ্ড শীত। ঋতুবৈচিত্র্যের বাংলাদেশে এখন কেবলই বৈচিত্রতার অভাব সময়মতাে বৃষ্টির অভাব অসময়ে প্রবল বৃষ্টিপাত বন্যা ঘূর্ণিঝড় সামুদ্রিক জলােচ্ছ্বাস অস্বাভাবিক উষ্ণতা ইত্যাদি আমাদের দেশের আবহাওয়ায় নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।
বৃক্ষরােপণের প্রয়ােজনীয়তা
দেশকে দেশের পরিবেশকে তথা বিশ্ব পরিবেশকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে প্রয়ােজন বনায়ন। আধুনিক সভ্যতার শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ফলে বহু জায়গা সম্পূর্ণ বৃক্ষহীন হয়ে পড়েছে। দেশ যেন দিন দিন মরুভূমির রূপ ধারণ করেছে। রুক্ষ নগরসভ্যতায় বৃক্ষের ছায়াশীতল স্নিগ্ধতা ফিরিয়ে দিতে হলে বৃক্ষরােপণ অপরিহার্য। বৃক্ষ নিধনের ফলে বায়ুমণ্ডলে প্রতিনিয়ত কার্বন ডাই অক্সাইড বৃদ্ধি পেয়ে পরিবেশের যে বিপর্যয় নেমে আসছে তা থেকে রক্ষা পেতে হলে বৃক্ষরােপণ করা প্রয়ােজন। পর্যাপ্ত বনভূমির অভাবে সৃষ্ট অনাবৃষ্টির কারণে দেশের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিনের পর দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য জীবনােপযােগী পরিবেশের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক গাছ। লাগানাে আজ অবশ্য পালনীয় দায়িত্বে পরিণত হয়েছে।
বনায়নের উপায়
বাংলাদেশে রয়েছে বনায়নের বিপুল সম্ভাবনা। তাই পরিকল্পিত উপায়ে বৃক্ষরােপণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে । সামাজিকভাবে এ কর্মকাণ্ডে সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হবে। বাঁধ সড়ক রেললাইন খালের পাড় পুকুর পাড় খাস পতিত জমি অর্থাৎ যেখানেই খালি জায়গা থাকবে সেখানেই গাছ লাগানাের জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য অর্থনৈতিক প্রণােদনা অর্থাৎ অতিরিক্ত আয়ের উৎস প্রদান করতে হবে। গাছ নির্বাচনের ক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে যেন গ্রামবাসী এবং বনায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তা থেকে খাদ্য ফল ও জ্বালানি সংগ্রহ করতে পারে। প্রয়ােজনে সরকারি ঋণ ভর্তুকি অনুদান এবং বিনামূল্যে বীজ ও চারা সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণকে বৃক্ষরােপণের উপকারিতা সম্বন্ধে অবহিত করতে হবে। সর্বোপরি সুপরিকল্পিতভাবে সরকারি ও বেসরকারি সহায়তার আওতায় বৃক্ষরােপণ কর্মসূচি ও পরিচর্যার ভার গ্রহণ করতে হবে।
সামাজিক সচেতনতা ও সম্মিলিত প্রয়াস
যেকোনাে কর্মসূচির সফলতা নির্ভর করে জনসাধারণের সচেতন ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর। বৃক্ষরােপণ অভিযানকে সফল করতে হলে সরকারের পাশাপাশি জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। সাধারণ জনমনে এ প্রসঙ্গে সচেতনতার সার করতে হবে। কেননা সাধারণ জনগণ পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার ভয়াবহতা সম্বন্ধে অবহিত হলেই বৃক্ষরােপণের তাগিদ অনুভব করবে। আর তখনই পরিবেশকে বাঁচানাের এ মহৎ ও বৃহৎ প্রচেষ্টা সফল হবে। সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রয়ােজনে বিভিন্ন সভা সমাবেশ পথনাটক পােস্টার ছাপানাে লিফলেট বিতরণ ও মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি সফল করার উপায়
বনভূমির কাছ থেকে উপকার পাওয়ার জন্যে দরকার ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করা। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করতে হলে প্রয়োজন পুরাতন গাছকে নির্বিচারে না কাটা এবং নতুন গাছের চারা লাগানো। নতুন করে গাছ লাগাতে বা রোপণ করতে হলে প্রয়োজন চারার। সকল ধরনের গাছের চারা সংগ্রহ করা খুবই কঠিন কাজ। কারণ গাছের চারা কোনোটা হয় ফল থেকে কোনোটা বীজ থেকে আবার কোনোটা হয় ডাল থেকে কলমের মাধ্যমে। এরূপ চারা সাধারণ মানুষের পক্ষে সংগ্রহ করা কঠিন কাজই বটে। তাই এই সংগ্রহের কাজ করতে হবে সরকারের বিভাগগুলোকে। সরকার যদি এই চারা সংগ্রহ করে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতরণ করে তা হলে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি সফল করা সম্ভব। তাছাড়া গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে উৎসাহিত করতে হবে।বনাঞ্চল কমে যাওয়ার পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্যে পরিকল্পিত উপায়ে বৃক্ষরোপণ করে সমস্যার সমাধান করতে হবে। চারা রোপণের নিয়ম কানুন ও পরিচর্যা সম্পর্কে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের সাহায্যে জনগণকে অবহিত করতে হবে। সাম্প্রতিককালে বৃক্ষমেলা আয়োজনের মাধ্যমে গাছের চারা সবার কাছে সহজলভা হচ্ছে। প্রত্যেকের বাড়ির পাশের অনাবাদি জায়গায় পুকুর পাড়ে রাস্তার পাশে স্কুলের পতিত জায়গায় বৃক্ষরোপণ করতে হবে। ছাত্র শিক্ষকসহ সকল স্তরের জনগণের মধ্যে যদি বৃক্ষরোপণের উৎসাহ উদ্দীপনা ও জাগরণ ঘটানো যায় তাহলে বৃক্ষরোপণ অভিযান সফল হবে বলে আশা করা যায়।
উপসংহার
বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিকে সফল করার জন্যে আমাদের প্রত্যেকের প্রয়োজন প্রতিবছর গাছ লাগানো এবং গাছকে যত্নের সাথে রক্ষণাবেক্ষণ করা। ফলে গাছ থেকে আমাদের প্রয়োজন মেটাতে পারব আমরা গ্রীন হাউস ইফেক্ট থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে এবং পরিবেশগত ভারসাম্য ও প্রাকৃতিক অবক্ষয় থেকে মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে পারব।