ভূমিকা
সৃষ্টির আদিকাল হতে মানুষকে ঘরে বাইরে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। সংগ্রামই মানুষের জীবনের ধর্ম। এ জীবন সংগ্রামের যাত্রাপথে বিজ্ঞান হলো মানুষের হাতিয়ার। বিজ্ঞান মানুষকে জীবনযাত্রার সুকঠিন নিগড় থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। মানুষকে মানবিক চেতনা ও গুণে উন্নত করে প্রেরণা দিয়েছে উন্নত সমাজ গড়ার। ইন্টারনেট আধুনিক বিজ্ঞানের সে রকম একটি বিস্ময়কর আবিষ্কার। বর্তমান বিশ্বের বহুল আলোচিত গতিময়তার এক মাইফলক ইন্টারনেট। ইন্টারনেটকে কাজে লাগিয়ে গবেষণার কাজে সংগ্রহ করা যায় নতুন নতুন তথ্য শিক্ষার্থীরা জেনে নিতে পারে তার সমস্যার সমাধান এবং যোগযোগ ব্যবস্থার চরম উৎকর্ষ সাধন হয়েছে এর বদৌলতেই।
ইন্টারনেট কী
ইন্টারন্যাশনাল কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভিস যা বর্তমানে ইন্টারনেট নামে পরিচিত। নেটওয়ার্কভুক্ত কম্পিউটারসমূহকে অন্যান্য নেটওয়ার্কভুক্ত কম্পিউটারের সঙ্গে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলাই ইন্টারনেটের কাজ। নেটওয়ার্কসমূহ একত্রিত হয়ে পৃথিবীব্যাপী যে নেটওয়ার্ক সিস্টেম তৈরি করেছে তাকেই ইন্টারনেট বলে।
ইন্টানেটের প্রকারভেদ
ব্যবহারকারি দুভাবে ইন্টারনেটের গ্রাহক হতে পারে। প্রথমটি হলো অন লাইন ইন্টারনেট। টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে সরাসরি কম্পিউটারে ইন্টারনেটের অন্য যে কোনো সার্ভিস প্রভাইভারের সঙ্গে যুক্ত করার পতিকে অন লাইন ইন্টারনেট বলা হয়। তাতে ব্যবহারকারিগণ যে কোনো সময় অন্য যেকোনো প্রভাইডারের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে। এছাড়াও IPACCES তে সন্ত্রাসরি অনলাইন ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া যায়। কিন্তু এই পদ্ধতি অতি ব্যয়বহুল হওয়ায় সাধারণ হক ভাঙে অগ্রহজেধ করেন না।
দ্বিতীয়টি হলো অফ লাইন ইন্টারনেট বা ই মেইল নামে পরিচিত। এই প্রক্রিয়ায় গ্রাহকরণ নিকটবর্তী কোনো সার্বারকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে বলেই এটাকে অফ লাইন ইন্টারনেট বা ই মেইল বলা হয়ে থাকে। এই পদ্ধতিতে গ্রাহকগণ কম খরচে অফ লাইন বা ই মেইল ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ ও তথ্য আদান প্রদান করতে পারে।
ইন্টারনেট তৈরির ইতিহাস
ইন্টারনেট উদ্ভাবনের প্রাথনিক কারণ ছিল সামরিক। বিশ্বের দুই পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে হরনায়ুযুদ্ধের কারণে দুই পরাশক্তির সমর বিশারদগণ পারমাণবিক বোমার ভয়ে অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। তাঁদের সন্দেহ ছিল ধ্বংসাত্মক পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরিত হলে পুরো যোগাযোগ যাকথা ভেঙে পড়তে পারে। এজন্য যোগাযোগ মাধ্যমকে অবদলের করুণ থেকে রক্ষা করার চিন্তায় টেলিফোনের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ইন্টারনেট উদ্ভাবন করা হয়। সর্বপ্রথম মার্কিন সামরিক অতৃঙ্খ্য বিশ্বব্যাপী নিজেদের অবস্থানগুলোর সঙ্গে সার্বক্ষণিক গোপন যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু করে। এখন এটি পরিচিত ছিল MILNET নামে। এ প্রযুক্তিকে আরও জনকল্যাণমুখী করে তোলার জন্য পরীক্ষামূলকভাবে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দায়িত্ব দেওয়া হলে তারা শিক্ষা গবেষণা এবং তথ্য আদান প্রদানের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে। তখন শিক্ষা জগতে এর নামকরণ হয় অ্যাপরনেট। পরবর্তীকালে এটি আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় যা বর্তমানে ইন্টরনেট নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
ইন্টারনেটের সুযোগ সুবিধা
ইন্টারনেটের মাধ্যমে নানা প্রকার সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। যেমন- নিউজগ্রুপ একটি তথ্য বা সংবাদ প্রদানকারী সংহ্যা। ইন্টারনেটে নিউজগ্রুপ ব্যবহার করে বিশ্বের খবরাখবর জানা যায়। লেখাপড়া ও গবেষণার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো নম্বার্থ রই। বিশেষ করে গবেষণাধর্মী বইয়ের জন্য অনেককে বিদেশে যেতে হয়। কিন্তু ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাংলাদেশে বসে আমেরিকার ইউনাইটেড স্টেট অব কংগ্রেস। বা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিসহ বিশ্বের যে কোনো দুষ্প্রাপ্য বই পড়া এবং তথ্যাদি জানা যায়। এর সাহায্যে এক প্রতিষ্ঠানের সাথে আরেক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা বাণিজ্য সম্পর্কিত লেনদেন সম্পাদিত করা সহজ হয়। জটিল কোনো মামলার ক্ষেত্রে মানুষ আইনের পরামর্শের জন্য বিদেশের আইনজ্ঞদের স্মরণাপন্ন হয়। কিন্তু এখন আর এজন্য বিদেশে না গেলেও চলবে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই যে-কোনো পরামর্শ লাভ করা যায়। ভ্রমণের ক্ষেত্রেও ইন্টারনেট অত্যন্ত সহজ পথের সন্ধান এনে দিয়েছে। অফিসে হাজারো ফাইলের মধ্য থেকে প্রয়োজনীয় ফাইলটি খুঁজে বের করা যায় ইন্টারনেটের Archi পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে। ইন্টানেটের সুবাদে ঘরে বসেই উন্নত চিকিৎসা লাভ করা যায়। বর্তমানে অফিস আদালত ও ব্যাংকে ইন্টারনেট ব্যবহৃত হচ্ছে। এভাবেই ইন্টারনেট বিভিন্ন কাজের এক সহজ মাধ্যম হিসেবে অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার
বাংলাদেশে কম্পিউটারের ব্যবহার শুরু হয়েছে ষাটের দশক থেকে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে এখানে শতকরা নব্বই ভাগ কম্পিউটার প্রকাশনার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে টাইপরাইটারের বিকল্প হিসেবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সম্পৃক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক তথ্য প্রবাহের সম্রাজ্য ইন্টারনেটের সঙ্গে। ১৯৯৬ সালের মাঝামাঝি থেকে বাংলাদেশে এই নেটওয়ার্কের প্রচলন শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে টি এন্ড টি বোর্ড আই এস এন রয়টার ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বেক্সিমকো সাইটেক কোম্পানি লিঃ নামে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে ভিস্যাটি স্থাপনের অনুমতি প্রদান করে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের প্রায় সাতশ সদস্য ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু করেছে।
ইন্টারনেটের বিকাশ
১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাহিনী সর্বপ্রথম ইন্টারনেট ব্যবহার করে। শুরুতে কেবল যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের গবেষণার প্রয়ােজনে এ ইন্টারনেট সিস্টেমকে কাজে লাগায়। সেসময় এনএসএফ ইন্টারনেটের দায়িত্ব নেয়। ইন্টারনেটের টেকনিক্যাল সাপাের্ট দেয় এনএসএফ । যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা মাত্র ৪টি কম্পিউটারের মধ্যে গড়ে তুলেছিলেন প্রথম অভ্যন্তরীণ যােগাযােগ ব্যবস্থা। এর তিনটি কম্পিউটার ছিল। ক্যালিফোর্নিয়ায় ও একটি ছিল উটাই তে। এ যােগাযােগ ব্যবস্থার নাম ছিল ডাপার্নেট। এরপর শুধু বিস্ময়কর সাফল্যের ইতিহাস। তিন বছর যেতে না যেতেই ‘ডাপানেট’-এর নাম বদল করতে হয়। কম্পিউটারের সংখ্যা তখন চার থেকে তেত্রিশে পৌছায়। এর নাম রাখা হয় আপার্নেট। যার উদ্দেশ্য ছিল পারমাণবিক আক্রমণ ঠেকানাের জন্যে বৈজ্ঞানিক তথ্য আদান প্রদান করা। সত্তর ও আশির দশকে যুক্তরাষ্ট্রের আরও অনেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় এ নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। ক্রমশ চাহিদা বাড়তে থাকলে ১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন সর্বসাধারণের জন্যে এরকম অন্য একটি যােগাযােগ ব্যবস্থা চালু করেন। এর নাম দেওয়া হয় নেস্ফেনেট । তিন বছরের মধ্যে নেস্ফেনেট এর বিস্তার সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। আর তখনই প্রয়ােজন দেখা দেয় একটি কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্ক গড়ে তােলার। গত শতকের নব্বই দশকের শুরুতে এ নেটওয়ার্ক গড়ে তােলা হয়। বিশ্বের মানুষ পরিচিত হয় ইন্টারনেট নামক একটি নতুন ধারণার সঙ্গে।
বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবস্থা
বাংলাদেশ ১৯৯৩ সালের ১১ নভেম্বর ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু করে । সেসময় অফলাইনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সার্ভিস চালু হয়। এর মধ্যে প্রদেষ্টা ছক ট্যাপ আগ্র সিস্টেম বিডিমেল বিডিনেট এবং অরােরা ১ উল্লেখযােগ্য। অফলাইনে যুক্ত থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তথ্যের বিশাল জগতের সকল সম্পদ ব্যবহার করা যায়নি। ই মেইলের কেবল ডাউনলােড (মেইল গ্রহণ) ও আপলােড (মেইলপ্রেরণ) ছাড়া আর কিছুই করা সম্ভব হয়নি। এক্ষেত্রে গ্রাহকরা তাদের কম্পিউটার থেকে যােগাযােগ সফটওয়্যারের মাধ্যমে মডেম ও টেলিফোন লাইনের সাহায্যে সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মেইল বিনিময় করত। সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলাে দিনে কয়েকবার আইএসডি টেলিসংযােগ তারের সঙ্গে সংযুক্ত কম্পিউটারে পাঠিয়ে দিত। একই সঙ্গে গ্রাহকদের কাছে আসা মেইলগুলাে ডাউনলােড করা হতাে । উল্লিখিত ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনাে যােগাযােগ প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় একটি প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক অন্য প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের কাছে সরাসরি ই মেইল পাঠাতে পারত না। তাদের একজনের পাঠানাে তথ্য সারাবিশ্ব ঘুরে আবার অপর গ্রাহকের কাছে যেত। কিন্তু অনলাইন সার্ভিস চালু হওয়ার পর যােগাযােগের সকল বাধা দূর হয়। বাংলাদেশ অনলাইন ইন্টারনেট সার্ভিসের বিশাল জগতে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে। ১৯৯৬ সনের ৪ জুন VSAT চালুর মাধ্যমে প্রথম অনলাইন ইন্টারনেট চালু করে ISN (Information Services Network)এরপর গ্রামীণ সাইবার নেট ইউ অনলাইন BRAC BDMAIL PRADESHTA NET AGNI SYSTEM ইত্যাদি সংস্থাসহ মােট ১২টি সংস্থা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রােভাইডার হিসেবে কাজ করছে। সম্প্রতি SEA-ME-WE 4 ও 5 অপটিক্যাল হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ফলে বাংলাদেশের মানুষ আর দুত ও সহজে বিশ্বের সঙ্গে যােগাযােগ করতে পারছে। তথাপি বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা সেভাবে বৃশ্মি। পায়নি। জাতিসংঘের তথ্য ও যােগাযােগপ্রযুক্তি উন্নয়নসূচক ২০১৬ এর প্রতিবেদনে বাংলাদেশে প্রকৃত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ শতাংশের কম বলা বলা হয়েছে। এছাড়াও অ্যাফোর্ডবিলিটি রিপাের্ট ২০১৭ এর প্রতিবেদনে।
ইন্টারনেটের গুরুত্ব
যােগাযােগ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আজ অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করা যাচ্ছে। তথ্য প্রেরণ ও গ্রহণ থেকে শুরু করে বিশ্বের সকল প্রান্তের মানুষের সঙ্গে আড্ডা সম্মেলন ৷শিক্ষা বিপণন অফিস ব্যবস্থাপনা বিনােদন ইত্যাদি ইন্টারনেটের সাহায্যে করা যাচ্ছে। মাল্টিমিডিয়ার বিকাশের সাথে সাথে প্রতিদিন এর সম্ভাবনা আরও বাড়ছে। বাংলাদেশের একজন লােক ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিউইয়র্কের কোনাে ওপেন এয়ার কনসার্ট উপভােগ করতে পারছে। বাংলাদেশের একজন রােগী লন্ডনের একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে এক দেশে বসে অন্য দেশের জিনিসপত্র কেনাকাটা সম্ভব হচ্ছে। মহাকাশ গবেষণায় ইন্টারনেট বিজ্ঞানীদের অধিক সহায়তা দিচ্ছে। এ ছাড়াও ই মেইলসহ ইন্টারনেটের রয়েছে বহুবিধ ব্যবহার। বাস্তবতা হলাে বিশ্বের যােগাযােগ ব্যবস্থার সঙ্গে ইন্টারনেট আজ নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে।
ইন্টারনেটের অপকারিতা
ইন্টারনেট ব্যবহারে রয়েছে উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতা । এক শ্রেণির মানুষ আছে যারা ভালােটা থেকে মন্দটা গ্রহণ করে বেশি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেকেই বিভিন্ন অশ্লীল এবং কুরুচিপূর্ণ দৃশ্যাবলি দেখে সময় নষ্ট করছে। যুবসমাজকে এ অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্যে চাই সুনির্দিষ্ট নীতিমালা । যদিও সরকার তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার রােধে আইন তৈরি করেছে ।
ইন্টরনেট ধারণার
১৯৬১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাহিনী সর্বপ্রথম ইন্টারনেট ব্যবহার করে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা মাত্র ৪টি কম্পিউটারের মধ্যে গড়ে তুলেছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী অভ্যন্তরীণ এক যােগাযােগ ব্যবস্থা। এই যােগাযােগ ব্যবস্থার নাম ছিল ডপার্নেট। ক্রমশ চাহিদার ভিত্তিতে ১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন সর্বসাধারণের জন্য এরকম অন্য একটি যােগাযােগ ব্যবস্থা চালু করে। এর নাম দেওয়া হয় নেস্ফোনেট। ৩ বছরের মধ্যে নেস্ফোনেট এর বিস্তার সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ইতােমধ্যে গড়ে ওঠে আরও অনেক ছােট মাঝারি নেটওয়ার্ক। এতে এর ব্যবস্থাপনায় কিছুটা অরাজকতা সৃষ্টি হয়। এ অরাজকতা থেকে মুক্তি পেতে পুরাে ব্যবস্থাটি নিয়ন্ত্রণের আবশ্যকতা দেখা দেয়। এজন্য একটি কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্ক গড়ে তােলা হয়। বিশ্বের মানুষ পরিচিত হয় ইন্টারনেট নামক একটি ধারণার সাথে। বর্তমান বিশ্বে এর প্রায় ২০০ কোটি সদস্য। এ সংখ্যা প্রতি মাসে শতকরা ১০ ভাগ হারে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।
ইন্টারনেট যেভাবে কাজ করে
ইন্টারনেট নামক যােগাযােগ ব্যবস্থাটি কোনাে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সম্পত্তি নয়। এর কোনাে মূল কেন্দ্রও নেই। এক Server থেকে আরেক Server এর সংযােগের ফলেই ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে বিশাল Internet Networking সাম্রাজ্য। Server এর মাধ্যমে এর কর্মকাণ্ড সম্পাদিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রধান প্রধান শহরে স্থাপিত হয়েছে একাধিক Server। যেকোনাে স্থান থেকে যেকোনাে একটি Server এর সাথে যােগাযােগ স্থাপন করলেই বিশ্বের সকল Server-এর সাথে যােগাযােগ স্থাপিত হয়।
কম্পিউটার
এটি তথ্যাদি টাইপ করতে সাহায্য করে ও এর নিজস্ব মেমােরিতে জমা রাখে। এরপর তা নেটওয়ার্কিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রাপকের কাছে তথ্যাদি পাঠানাের ব্যবস্থা করে।
মডেম
এর পূর্ণ নাম modilator/Demodulator এর দ্বারা সাধারণত তথ্যাদি টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে পাঠানাের উপযােগী করা হয়। এটি এক কম্পিউটার থেকে অপর কম্পিউটারে তথ্যাদিকে ডিজিটাল থেকে এনালগ আবার এনালগ থেকে ডিজিটালে রূপান্তরিত করার একটা ডিভাইস।
টেলিফোন লাইন
টেলিফোন বা সেলুলার লাইন ছাড়া ইন্টারনেটের কোনাে প্রক্রিয়াই সম্ভব নয়। লাইনের স্পিড এর ওপর তথ্যাদি দ্রুত স্থানান্তরিত হওয়া নির্ভর করে। এনালগের তুলনায় ডিজিটাল টেলিফোনে তথ্যাদি দ্রুত স্থানান্তরিত হয়।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রােভাইডার (সংক্ষেপে ISP)
এদের কাজ অনেকটা পােস্ট অফিসের মতাে। এদের সদস্য হলে এরা মাসিক বা ব্যবহৃত সময়ের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট একটা চার্জ নিয়ে সদস্যদের কম্পিউটার, ফাইবার অপটিক্স বা স্যাটেলাইটের (vSAT) মাধ্যমে দেশেবিদেশে অন্যান্য ইন্টারনেট সদস্যদের সাথে যােগাযােগ করিয়ে দেয়। ১৯৯৬ সালের ৪ জুন TAST চালুর মাধ্যমে প্রথম অনলাইন ইন্টারনেট চালু করে ISN (Information Services network)।এরপর গ্রামীণ সাইবারনেট Brae Bdmail Pradeshto Net Agni System ইত্যাদি সংস্থাসহ মােট ১২টি সংস্থা বর্তমানে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রােভাইডার হিসেবে কাজ করছে।
তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে করণীয়
জ্ঞান বিজ্ঞান ও ইন্টারনেট ব্যবহারে নিজ অবস্থান সুদৃঢ় করতে তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের কোনো বিকল্প নেই। বর্তমানে এক্ষেত্রে যারা পিছিয়ে পড়ছে তারা এক ধরণের বৈষম্যের শিকার হচ্ছে যাকে ডিজিটাল বৈষম্য বলা হয়। বাংলাদেশও এরূপ বৈষ্যমের শিকার। এই বৈষম্য দূর করতে চাইলে যে কাজগুলো করতে হবে তা হলো-
1.আমাদের তরুণ সমাজকে তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে।
2.ব্যাপক সংখ্যক জনগণের নিকট ইন্টারনেট পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য তথ্য প্রযুক্তির অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
3.টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
4.তথ্য প্রযুক্তির জগতে ভাষা হিসেবে ইংরেজির অধিপত্য একক। তাই ইংরেজির ব্যবহারে দক্ষতা বাড়াতে হবে।
5.তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ জনসম্পদ এবং সরকার গড়ে তুলতে হবে।
উপসংহার
বিংশ শতাব্দীর এক বিস্ময়কর প্রযুক্তি ইন্টারনেট। একবিংশ শতাব্দী শুরু হওয়ার সাথে সাথে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এ প্রযুক্তির বিস্তার ঘটছে। ফলে তথ্য আদান প্রদান ব্যবসা বাণিজ্য চিকিৎসা শিক্ষা যোগাযোগসহ সকল ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের এক মহাবিপ্লবের সূত্রপাত ঘটবে। বিশ্বের সমস্ত কঠিন কাজ মনুষের হাতের মুঠোয় বন্দি হয়ে যাবে। উন্নত বিশ্বের সাথে সাথে তৃতীয় বিশ্বও তখন এগিয়ে যাবে অগ্রগতির দিকে।