ভূমিকা
বর্তমান বিশ্বের সার্বিক ও গুণগত মান উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। এক শতকের তথ্য প্রযুক্তি বিপ্লব মানব সভ্যতার গতি ও প্রকৃতিকে আরও বেগবান করেছে। ফলে দুত বদলে কাছে মানুষের জীবনমান। তাই তৃতীয় বিশ্বের একটি জাতি হিসেবে দারিদ্র্য বিমােচন করে জনগণের জীবনমান উন্নত করার চ্যালেঞ্জ মােকাবিলায় তথ্য প্রযুক্তির সুষ্ঠু ব্যবহার করা প্রয়ােজন। দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও সমৃন্দি লাভে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বিশেষ অবদান রাখতে পারে। বর্তমান প্রবন্ধে আমাদের বিবেচ্য বিষয় তথ্য প্রযুক্তি জাতীয় জীবনে এর অবদান এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সমস্যা ও সম্ভাবনা এবং কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জনে প্রয়ােজনীয় কৌশল সম্পর্কে আলােচনা।
তথ্য প্রযুক্তি
কম্পিউটার কিংবা টেলিযােগাযােগ মাধ্যমের সাহায্যে তথ্য সংরক্ষণ গ্রহণ প্রেরণ তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি কাজের জন্য ব্যবহৃত প্রযুক্তিকে তথ্য প্রযুক্তি (Information Technology) ৰঙ্গে একে সংক্ষেপে IT বলা হয়। বর্তমান যুগে তথ্য প্রযুক্তির প্রভাব ও ব্যবহার ব্যাপক। তথ্য প্রযুক্ততির ক্ষেত্রে কম্পিউটার মােবাইল হার্ডওয়্যার সফটওয়্যার নেটওয়ার্কিং ইন্টারনেট ডাটাবেস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য দিক।
জাতীয় জীবনে তথ্য প্রযুক্তির অবদান
বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ। এমন দেশের সার্তি উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ অন্তরায় হলাে- দারিদ্র সুশাসনের অভাব দুর্নীতি শিক্ষার অভাব দুর্বল অবকাঠামাে সরকারের জবাবদিহিতার অভাব ইত্যাদি। এছাড়াও বাণিজ্য চিকিৎসা কৃষি প্রভৃতি পেশাগত জ্ঞানের অন্তৰও গুরুত্বপূর্ণ দিক। তথ্য প্রযুক্তির অবাধ সুষ্ঠু এবং প্রচুর ব্যবহার এ সকল বিষয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। সকল তথ্য যদি জনগণের হাতের নাগালে এসে যায় তবে জনগণ সকল কাজের সিদ্বান্ত ভেবে চন্তে নিতে পারে। ফলে জাতীয় জীবনের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব হয়।
বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উন্নয়নের কৌশল
দল সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি বিভাগকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রাথমিক মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তিবিদ্যাকে বাধ্যতামূলক করা। মূল পর্যায়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তথ্য। প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা। তথ্য ও প্রযুক্তি খাতকে আনুষ্ঠানিকভাবে Thrust Sector হিসেবে চিহ্নিত করা। তথ্য প্রযুক্তির অবকাঠামাের উন্নয়ন করতে হবে। বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে হবে। তারা প্রতি সেবার বয় করতে হবে।প্রতির সরঞ্জাম দেশে উৎপাদনের ব্যবহ করতে হবে।
তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্ভাবনা
বাংলাদেশের মােট জনসংখ্যার সিংহভাগই তরুণ। এই তরুণদের যদি তথ্য প্রযুক্তির জ্ঞান ঠিকভাবে দিয়ে দক্ষ জনবল হিসেবে গড়ে তােলা যায় তবে দেশের উন্নয়ন অবশ্যম্ভাবী। এছাড়া দেশে সুশাসনের অভাব এবং দুর্নীতি অনেকাংশে ই – গভর্নেন্সের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব। অন্যদিকে তথ্য প্রযুক্তি কেন্দ্রিক শিল্প গড়ে তুলে বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থান করা সম্ভব। এছাড়াও শিক্ষা চিকিৎসা যােগাযােগ কৃষি নগরায়ণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে বাংলাদেশের উন্নয়ন দ্রুত তরান্বিত করা যাবে। বলা যায় তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্ভাবনা অপার প্রয়ােজন সঠিক পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন।
সভ্যতার বিকাশে তথ্যপ্রযুক্তি
তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের জীবনমানের অগ্রগতির মাধ্যমেই গড়ে উঠেছে আধুনিক সভ্যতা। সভ্যতার অগ্রযাত্রার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে তথ্যপ্রযুক্তি। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার মানুষকে সুখ স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন এনে দিয়েছে। বিজ্ঞানের সব রকম চেষ্টা চিন্তা আবিষ্কার তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের মানুষের কাছে অতি দ্রুত পৌছে যাচ্ছে। আধুনিক যুগে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিবিদ্যা একই স্রোতধারায় আবর্তিত হচ্ছে। প্রযুক্তিবিদ্যার কারিগরি জ্ঞান মানুষকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করে।
প্রযুক্তিবিদ্যাই সভ্যতাকে আধুনিক করে তুলেছে। মানুষের যখন যান্ত্রিক শক্তি অজানা ছিল তখন জীবনসংগ্রামে মানুষ শ্রমকেই আশ্রয় করেছিল। শস্য উৎপাদনে হাতিয়ার নির্মাণে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত বিভিন্ন দ্রব্যাদি যেমন কাপড় চোপড় ঘরবাড়ি তৈজসপত্র তৈরিতে মানুষ হাত ব্যবহার করত। পরবর্তীতে তা পরিবর্তিত হয়ে প্রযুক্তির আওতায় আসে। তখন স্বল্পশ্রমে স্বল্প সময়ে অধিক পণ্য উৎপাদন সম্ভব হয়। আধুনিক যুগে প্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ময়কর বিকাশে পৃথিবীজুড়ে নবচেতনার সঞ্চার হয়েছে এবং তা পৃথিবীকে দ্রুত উন্নয়নের দিকে পরিচালিত করছে। তথ্যপ্রযুক্তি সেই অগ্রযাত্রাকে করছে আরও গতিশীল। বিজ্ঞানে প্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের ফলেই সভ্যতার ক্রমােন্নতি হতে হতে আজকের আধুনিক সভ্যতা গড়ে উঠেছে।
আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার
প্রযুক্তি মানুষের উপকারী বন্ধুর মতাে। আর তথ্যপ্রযুক্তি হচ্ছে মানুষের জীবনযাপনের অঙ্গ। তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা ভােগ করছে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে কারণ যেখানে মানুষ আছে সেখানেই পৌছে গেছে বিজ্ঞানের কল্যাণের আলাে। মানুষের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের প্রয়ােজনীয় উপাদানের জোগানে তথ্যপ্রযুক্তি নানাভাবে সহায়তা দান করছে। নিচে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের কয়েকটি দিক তুলে ধরা হলাে:
- ১. কৃষি উৎপাদনের জন্য প্রয়ােজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহ।
- ২. দেশ বিদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও উন্নয়নের অন্তরায়কে তুলে ধরা।
- ৩. শিশু ও মায়ের মৃত্যুরােধে প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ সংক্রান্ত তথ্যাদি পরিবেশন করা।
- ৪. মানুষের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতামত ও পরামর্শ সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করা।
- ৫. বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে অর্থনৈতিক লেনদেন সূচক নিয়ন্ত্রণ ক্ষেত্রে প্রয়ােজনীয় তথ্য সরবরাহ করা।
- ৬. বিশ্বের জ্ঞান বিজ্ঞানের সাথে পরিচয় ঘটিয়ে নিজস্ব সংস্কৃতির উন্নতি ও সমৃদ্ধি সাধনে সহায়তা করা।
- ৭. বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মােকাবিলায় আগাম তথ্য সরবরাহ ও পরিবেশন করা।
- ৮. বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অগ্রগতির মূল বিষয় সম্পর্কে উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়ন কর্মীদের সচেতন ও সহায়তা দান করা।
যােগাযােগ ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি
আদিকাল থেকেই মানুষ একজন অন্যজনের সাথে এক দেশ অন্য দেশের সাথে যােগাযােগ করতে চেয়েছে। বিভিন্ন সময় তারা বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। কবি কালিদাস মেঘদূতের মাধ্যমে তাঁর প্রিয়ার কাছে প্রণয়বার্তা পাঠানাের কথা বলেছেন। ক্রমান্বয়ে চিঠিপত্রাদির প্রচলন হয়। সম্ভবত খ্রিষ্টপূর্ব ৩২২ অব্দে মৌর্যের রাজত্বকাল থেকে প্রশিক্ষিত পায়রা সংবাদ বহন করত। পরে ঘােড়া রাজদূত রানার এ কাজ করত। চিঠি মানুষের কাছে প্রামাণ্য দলিল বিধায় এখনও টিকে আছে। একসময় আধুনিক প্রযুক্তি হিসেবে ছিল টেলিগ্রাফ। বর্তমানে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়ায় যােগাযােগের জন্য এসেছে টেলিফোন মােবাইল ফোন ইন্টারনেট ই মেইল। ফেসবুকের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে টেক্সট পাঠিয়ে যােগাযােগ করা যায়। বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে পৃথিবীর এক প্রান্তের মানুষের সাথে অন্য প্রান্তের মানুষের যােগাযােগ রক্ষার জন্য ফোন করা যায় কম্পিউটারে বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে বক্তা ও শ্রোতার ছবি এবং তার অবস্থান মুভমেন্ট ইত্যাদি দেখা যায়। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ যােগাযােগ মাধ্যম হচ্ছে ইন্টারনেট। এর মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্তের কম্পিউটার থেকে অন্য প্রান্তের আর একটি কম্পিউটারে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ ও প্রেরণ করা যায়। পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িয়ে আছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ অনলাইনে বই পড়ে দেশ বিদেশের সাহিত্য সংস্কৃতির সাথে জ্ঞানের যােগাযােগ রক্ষা করছে। ই মেইলের মাধ্যমে চিঠিপত্র আদান-প্রদান ও দরকারি ফাইল প্রেরণ করা যায়।
শিক্ষা ও চিকিৎসাক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি
বিজ্ঞান প্রযুক্তির কল্যাণে শিক্ষা ও চিকিৎসাক্ষেত্রে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে তার সুফল বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিচ্ছে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি। চিকিৎসাক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আছে। মুহূর্তের মধ্যেই এ প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি রােগনির্ণয় কৌশল এবং নতুন রােগ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে সাধারণ মানুষ জানতে পারছে।তথ্যপ্রযুক্তি আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সম্পর্কে তথ্য ও নির্দেশনা প্রদান করে। শিক্ষার বিভিন্ন উপাদান সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় রেডিও টেলিভিশনের মাধ্যমে নিয়মিত শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
বিনােদন তথ্যপ্রযুক্তি
বিনােদনের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। রেডিও টেলিভিশন ডিভিডি মােবাইল এখন বিনােদনের অন্যতম মাধ্যম। বর্তমানে প্রায় সব মােবাইল সেটেই বিবিসিসহ দেশি বিদেশি বহু রেডিও স্টেশন থেকে প্রচারিত অনুষ্ঠান শােনা যায়। ছবি তােলা যায়। মেমােরি কার্ড ব্যবহার করে গান ভিডিও ইত্যাদি দেখা যায়। ইন্টারনেট সংযােগ দিয়ে দেশ বিদেশের তথ্যচিত্র ও বিনােদন উপভােগ করা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির বৈচিত্র্যময়তা সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা যায়। এক কথায় আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ঘরে বসেই প্রয়ােজনীয় সব রকম আনন্দ বিনােদন পাওয়া যায়।
গবেষণা ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি
বিজ্ঞান অর্থনীতি রাজনীতিন কৃষি চিকিৎসা প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতির পূর্বশর্ত হলাে গবেষণা। এজন্য প্রতিটি দেশেই গড়ে উঠেছে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ইন্টারনেট কম্পিউটার নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে দেশি বিদেশি বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তথ্যের আন্তঃপ্রবাহ চলে আসছে। ফলে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক বিভিন্ন প্রকাশনা জার্নাল তথ্য ফিচার প্রভৃতি আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির বদৌলতে আমরা খুব সহজেই ঘরে বসে পেয়ে যাই। আর তা কাজে লাগিয়ে আমাদের গবেষণাধর্মী কাজ সম্পন্ন করে থাকি।
তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য করণীয়
বর্তমান একবিংশ শতাব্দীর প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে বাংলাদেশকে টিকে থাকতে হলে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের বিকল্প নেই। আমাদের দেশের শিক্ষিত তরুণ সম্প্রদায় তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় তাদের যোগ্যতা বারবারই প্রমাণ করেছে। তাই আমাদের তরুণদের মেধা সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য কার্যকরী করে তুলতে হবে। এজন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা দরকার।
তথ্যপ্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাব
তথ্যপ্রযুক্তিকে মানুষ নানা রকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করতে পারে। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বর্তমানে বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলাের অপরের সাথে পারস্পরিক মধ্যে ক্ষতিকর মারণাস্ত্র ব্যবহার করছে দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে হানাহানি বাড়ছে। তথ্যপ্রযুক্তির অন্যতম প্রধান মাধ্যম ইন্টারনেটের মাধ্যমে সাইবার অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। ব্যবহারকারী অনেক সময় নিজের আসল পরিচয় গােপন রেখে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মানুষকে ধোকা দিচ্ছে। এছাড়া পর্নোগ্রাফি চিত্রের মাধমে নৈতিক অবক্ষয় ঘটানাে হয়। কেউ কেউ আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন অপসংস্কৃতি চর্চায় মেতে ওঠে যা আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ক্ষতিকর। কাজেই ইন্টারনেটসহ অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তিকে ইতিবাচক অর্থে ব্যবহার করতে হবে এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জনকল্যাণমূলক কাজে আত্মনিয়ােগ করতে হবে।
বাংলাদেশে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির বাস্তব প্রয়ােগ
বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়ােগ ও চর্চার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে আছে। সরকার প্রযুক্তিনির্ভর একটি আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন পরীক্ষার ফল প্রকাশ টেক্সস্ট বুক সফটকপির ব্যবস্থা অনলাইনে বিভিন্ন সরকারি চাকরির আবেদন ফি জমাদান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আবেদন ফরম জমা দেওয়া প্রভৃতি কাজ প্রযুক্তির মাধ্যমে করা হচ্ছে। সারাদেশের জেলাগুলাের সমস্ত তথ্য এবং প্রতিদিন ঘটে যাওয়া তথ্য জানার জন্য সরকার জেলা তথ্য বাতায়ন নামে একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে। শুরু হয়েছে ডিজিটাল কৃষিব্যবস্থা। ইতােমধ্যে দেশে ডিজিটাল ভূমি জরিপের কাজও শুরু হয়েছে। ই কমার্স ই লার্নিং ই বুকিংয়ের পাশাপাশি ই ভােটিং কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে। দেশে প্রথম আইসিটি ইনকিউবেটর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এতে প্রায় ৬০ টি সেবাদাতা ও সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের এক হাজারের বেশি দক্ষ কর্মী এতে কাজ করছেন। বাংলাদেশের ঢাকার আগারগাঁওস্থ আইডিবি ভবনে প্রতিষ্ঠিত হয় বিসিএস কম্পিউটার সিটি। সরকার ঢাকার অদূরে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে আইটি প্রজেক্টের কাজ শুরু করেছে।
তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালুকরণ
সুদক্ষ ব্যাংকিং ব্যবস্থা দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি। আর এই ব্যাংকিং খাতকে দক্ষ যুগোপযোগী ও আধুনিক করার জন্য তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালুকরণের কোনো বিকল্প নেই।
তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক দক্ষ সরকারব্যবস্থা গঠন
তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়ন সাধন করার জন্য প্রয়োজন তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক দক্ষ সরকারব্যবস্থা গড়ে তোলা। আর এ জন্য অন্যতম করণীয় হলো সরকারি তথ্যে অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইন্টারনেটভিত্তিক তথ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা।
উপসংহার
তথ্যপ্রযুক্তির ক্রমবিকাশে পৃথিবীর প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। সাইবার মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট এবং নতুন মােবাইল অ্যাপলিকেশনের হাত ধরে অনলাইন আজ বিশ্বের অবিচ্ছেদ্য একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম। আগামী ২০৩০ সালে এটি হবে অপরিহার্য। বিশ্বের অধিকাংশ কাজেই মােবাইলের মতাে সহজে পৌছে যাবে ইন্টারনেটের সুফল। ব্যবসায় বিপণন ভার্চুয়াল যােগাযােগে এ তিন পথই এখন তথ্যপ্রযুক্তির প্রধান প্রযুক্তি ইন্টারনেটের দখলে। পরবর্তী সময়ে এই তথ্যপ্রযুক্তিই বিশ্বের পুরাে কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ করবে। গবেষকরা জানিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তির বৈপ্লবিক উন্নতির মাধ্যমে বিশ্বের অনুন্নত জাতিগােষ্ঠীর মানুষেরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবে।