মোবাইল ফোন : এক বিস্ময়কর আবিষ্কার
↬ মোবাইল ফোনের সুফল ও কুফল
↬ মোবাইল ফোন ও জনজীবনে এর প্রভাব
↬ আধুনিক জীবনে মোবাইলের ব্যবহার
↬ মুঠোফোন ও আধুনিক জীবন
↬ আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় মোবাইল
ভূমিকা
সেলুলার ফোন বা মোবাইল ফোন হচ্ছে আধুনিক বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর অবদান। এ ফোনের আকার, আকৃতি ও ব্যবহার পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে এটিকে মুঠা ফোন বলা হয়ে থাকে। এটি টেলিফোনের সর্বাধুনিক সংযোজন। মোবাইল ফোন আজ বিশ্বের মানুষের জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম। সেলুলার বা মুঠো ফোন বিশ্ববাসীকে যেন এক নেটওয়ার্কের মধ্যে নিয়ে এসেছে। এ ফোন সারা বিশ্বের যোগাযোগের সার্বিক অবস্থাকে নতুনত্ব দান করেছে।
মোবাইল ফোনের পরিচয়
টেলিফোন বা ল্যান্ডফোন ব্যবহারের জটিলতা দূর করতে এ ফোনের আবিষ্কার। হাতের মুঠোয় সহজে বহনযোগ্য সেটে সিম কার্ড বা রিম কার্ড ব্যবহার করে এ ফোন ব্যবহার করা হয়। বর্তমান বিশ্বে রয়েছে মোট চার প্রযুক্তির মোবাইল ফোন। তন্মধ্যে বাংলাদেশে দুটি প্রযুক্তির ব্যবহার চালু রয়েছে। তা হলো— জিএসএম প্রযুক্তি ও সিডিএমএ প্রযুক্তি।
মোবাইল ফোনের ইতিবাচক দিক
মোবাইল ফোন বর্তমানে অত্যাবশ্যকীয় উপাদানে পরিণত হয়েছে। এর আবিষ্কার যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে। মানবজীবন হয়েছে অধিকতর গতিশীল। মানবজীবনে মোবাইল ফোনের ইতিবাচক দিকসমূহ নিচে আলোচনা করা হলো—
সহজ যোগাযোগ মাধ্যম বিশ্বের যেকোনো মানুষের সাথে যেকোনো মুহূর্তে যোগাযোগের সহজ মাধ্যম হচ্ছে মোবাইল ফোন। মোবাইল ফোনের কল্যাণে মুহূর্তের মধ্যে আমরা আমাদের যেকোনো তথ্য বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে পৌঁছে দিতে পারি। ব্যবসায় বাণিজ্য, ব্যক্তিগত যোগাযোগ, শিক্ষা, চাকরি, তথ্যের আদান-প্রদান প্রভৃতি ক্ষেত্রে যোগাযোগের জন্য মোবাইল ফোন সহজতর যোগাযোগ মাধ্যম।
ইন্টারনেটের ব্যবহার
সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু হয়েছে। মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা যেকোনো সময় বিশ্বের যেকোনো খবরাবর জানতে পারছি এবং তথ্য আদান-প্রদান করতে পারছি। মোটকথা, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গোটা বিশ্ব যেন আজ আমাদের হাতের মুঠোয়।
বিনোদনের মাধ্যম
মোবাইল ফোন বর্তমানে বিনোদনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমরা রেডিও’র অনুষ্ঠান শুনতে পারি, টেলিভিশন দেখতে পারি, বিভিন্ন ধরনের গেমস খেলতে পারি, রেকর্ডকৃত গান বা বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখতে পারি। অর্থাৎ, মোবাইল ফোন ক্লান্তি দূর করে আমাদেরকে প্রাণবন্ত করে তুলছে। কাজেই একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, মোবাইল ফোন অবসর সময় কাটানোর গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে।
ব্যাংকিং লেনদেন
সম্প্রতি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাংকিং লেনদেন শুরু হয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশসমূহে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া যায় এবং টাকা ওঠানো যায়। এতে মানুষের সময় ও শ্রম উভয়ই সাশ্রয় হয়। অধিকন্তু আমাদের দেশে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকিং সেবা ইতিমধ্যে চালু হয়েছে।
হিসাব-নিকাশের কাজে ব্যবহার
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমরা হিসাব-নিকাশের কাজ সমাধা করতে পারি। এটি বর্তমানে সহজে বহনযোগ্য ক্যালকুলেটর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাথে একটি মোবাইল থাকলে আমরা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে হিসাব-নিকাশ দ্রুত করতে পারি।
সঠিক তারিখ ও সময় নির্ণয়
মোবাইল ফোনের বহুমুখী ব্যবহারের মধ্যে তারিখ ও সময় নির্ণয় অন্যতম। প্রতিটি মোবাইলে তারিখ ও সময় নির্ণয়ের জন্য ঘড়ি ও ক্যালেন্ডার সংযোজন করা হয়ে থাকে। তাছাড়া ক্যালেন্ডার থেকে বিভিন্ন দেশের স্থানীয় সময় জানা যায়।
তথ্য সংরক্ষণ : সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল ফোনে এমন সব সফটওয়্যার সংযোজন করা হচ্ছে যাতে করে মোবাইলে বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংরক্ষণ করা যায়। এক্ষেত্রে অনেকে মোবাইল ফোনকে মিনি কম্পিউটার বলে আখ্যায়িত করে থাকেন।
রেকর্ডিং
বর্তমান সময়ে বাজারে যেসব মোবাইল ফোন পাওয়া যায় তার অধিকাংশে ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা, অডিও রেকর্ডিং সুবিধা রয়েছে। এসব সেট দিয়ে বিভিন্ন স্মরণীয় মুহূর্তের দুর্লভ ছবি যেমন ধারণ করে রাখা সম্ভব তেমনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানও রেকর্ডিং করে রাখা যায়।
মোবাইলের নেতিবাচক দিক
মোবাইল ফোনের যেমন রয়েছে কতিপয় ইতিবাচক দিক তেমনি এর নেতিবাচক দিকও কম নয়। এর নেতিবাচক দিকসমূহ নিচে তুলে ধরা হলো—
আর্থিক অপচয়
মোবাইল অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্য হলেও বর্তমানে এটি ফ্যাশন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেকে ফ্যাশন হিসেবে ব্যবহার করতে গিয়ে অপ্রয়োজনেও মোবাইল ব্যবহার করছে। ফলে আর্থিক অপচয় হচ্ছে।
শারীরিক ক্ষতিসাধন
সাম্প্রতিক সময়ে গবেষণায় দেখা গেছে মোবাইল ফোন আমাদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ক্ষতিসাধন করে থাকে। যেমন— অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে মানুষের শ্রবণশক্তি ও স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়, হৃদরোগীদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় ইত্যাদি। এছাড়া গবেষকদের কেউ কেউ বলেছেন- মোবাইল ফোন অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মানুষের ব্রেইন ক্যান্সার হতে পারে।
লেখাপড়ায় ক্ষতি
সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল কোম্পানিগুলো পরস্পর প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে বিভিন্ন লোভনীয় অফার দিয়ে থাকে। এ সুযোগ গ্রহণ করতে গিয়ে স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা অনবরত মোবাইল ফোনে কথা বলে। অনেক সময় তারা রাত জেগে কথা বলে। এতে করে তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে তাদের লেখাপড়ায় ক্ষতিসাধিত হয়।
অপরাধ বিস্তার
এক শ্রেণির মোবাইল ব্যবহারকারী রয়েছে যারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। এসব অপরাধীরা মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে অপরাধ বিস্তারে ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের প্রচলন
১৯৯৩ সালে সিটিসেল কোম্পানির মাধ্যমে বাংলাদেশ মোবাইল ফোনের জগতে প্রবেশ করে। ১৯৯৩ সালে প্রথম সরকার সিটিসেল কোম্পানিকে লাইসেন্স প্রদান করে। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত মোবাইল ফোন ছিল সাধারণ মানুষের কাছে স্বপ্নের মতো। পরে ১৯৯৬ সালে সরকার গ্রামীণ ফোন, একটেল এবং সেবা-এ তিনটি কোম্পানিকে মোবাইল ফোনের লাইসেন্স প্রদান করে। প্রতিযোগিতা শুরু হয় মোবাইল কোম্পানিগুলোর মধ্যে। মোবাইল ফোন সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আসে।
বর্তমানে আমাদের দেশে রয়েছে ৬টি মোবাইল অপারেটর কোম্পানি। এগুলো হলো- গ্রামীণ ফোন, রবি (একটেল এর পরিবর্তিত নাম), সিটিসেল, বাংলালিংক (সেবা টেলিকম এর পরিবর্তিত নাম), টেলিটক (টিএন্ডটি) ও এয়ারটেল (ওয়ারিদ এর পরিবর্তিত নাম)।
উপসংহার
সেলুলার ফোন বা মোবাইল ফোন, যাকে আমরা মুঠো ফোন বলে থাকি। এ ফোন আধুনিক বিজ্ঞানের এক অভিনব সংযোজন। দ্রুত সম্প্রসারিত হয়েছে এ ফোন। মুঠো ফোনের মাধ্যমে মানুষ বিশ্বকে এনেছে হাতের মুঠোয়। সহজতর যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে এটি মানবসভ্যতাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এর ব্যাপক ব্যবহার এর আবিষ্কারকে সার্থক করে তুলেছে। কতিপয় খারাপ দিক থাকা সত্ত্বেও মোবাইল ফোন আধুনিক সভ্যতার আশির্বাদ বলা যায়।
- রচনা : মোবাইল ফোন
- Paragraph : Social Impact of Mobile Phone
- Paragraph : Mobile Phone
- অনুচ্ছেদ : মোবাইল ফোন