আমার / তোমার জীবনের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য
ভূমিকা
মানব জীবন ক্ষণিকের অথচ মূল্যবান। দুর্লভ এ মানব জীবনকে সার্থক করে তোলার অন্যতম শর্ত হচ্ছে নিজেকে সেই জীবনের উপযোগী করে গড়ে তোলা। জীবনকে কর্মের পথে আদর্শ ও কল্যাণের পথে পরিচালনা করার জন্য প্রত্যেক মানুষেরই একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকা দরকার। বিদ্যাশিক্ষা করে জ্ঞানলাভের মাধ্যমে মানুষ নিজেকে তার সেই লক্ষ্যপথে এগিয়ে নিয়ে চলে। লক্ষাবিহীন জীবন হালবিহীন নৌকার মত। হালবিহীন নৌকা যেমন নির্দিষ্ট গন্তব্য পৌঁছতে পারে না স্রোতের আবর্তেই ঘুরপাক খেতে থাকে লক্ষ্যবিহীন জীবনও তেমনি সময়ের ঘূর্ণাবর্তে পড়ে দিশেহারা হয়ে যায়।
লক্ষ্য স্থির
আমি খুব ছোটবেলা থেকেই আমার জীবনের উদ্দেশ্যের কথা ভেবেছি। তখন বয়স ছিল কম মন ছিল চঞ্চল। চারদিকে তাঁকিয়ে যা দেখতাম তাই মনে হতো আনন্দের, রোমাঞ্চকর। আকাশে গর্জন করে উড়ে যাওয়া বিমান দেখে ভাবতাম পাইলট হবে। অসুখ বিসুখ হলে হাতে ব্যাগ আর গলায় স্টেথিস্কোপ ঝুলিয়ে বাড়িতে আসতেন ডাক্তার। সঙ্গে সঙ্গে স্থির করতাম বড় হয়ে আমিও ডাক্তার হবো। বড় বড় বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারের চমকপ্রদ কাহিনী পড়ে ভাবতাম নিউটন আর এডিসনের মতো বিজ্ঞানী হবে। ডাকঘর নাটকের সেই অমলের মতো দইওয়ালা হবার ইচ্ছেটাও অনেকদিন গোপনে লালন করেছিলাম। বর্তমানে আমি নবম শ্রেণীর ছাত্র। জ্ঞান লাভের সাথে আমার বুদ্ধিও বেড়েছে। চারদিকে তাঁকিয়ে বুঝতে পারি আমার পরিবেশ আমার দেশ ও সমাজকে। বুঝতে পারি কি করলে নিজের জীবনের উন্নতি ছাড়াও সাধিত হবে দেশ ও জাতির কল্যাণ। তাই অনেক ভেবে চিন্তে আমি আমার জীবনের লক্ষ নির্ধারণ করেছি। আমি একজন কৃষি গবেষক এবং খামার বিশেষজ্ঞ হবো। আমার এ লক্ষ্য নির্বাচনের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে প্রত্যক্ষভাবে নিজেকে যুক্ত রেখে দেশের খাদ্য সমস্যা বেকার সমস্যা পুষ্টি সমস্যা দূর করা এবং বিশ্বের দরবারে ধন ধান্য পুষ্পে ভরা বাংলাদেশের গৌরবময় ঐতিহ্য তুলে ধরা।
আমার যা হতে ও করতে ইচ্ছে করে
আমার একজন ডাক্তার হয়ে মানুষের চিকিৎসাসেবা দিতে ইচ্ছে করে। মনুষ্যজীবনে মানুষের সেবা করার চেয়ে আর বড়াে কোনাে ধর্ম নেই। তাছাড়া আমাদের জনবহুল দেশে প্রয়ােজনের তুলনায় দক্ষ চিকিৎসকের সংখ্যা অপ্রতুল বিধায় ব্যাধিগ্রস্ত গরিব দুঃখী মানুষের ভােগান্তির শেষ নেই। তাই আমি অনেক ভেবেচিন্তে আমার জীবনের লক্ষ্য স্থির করেছি । যে বড়াে হয়ে আমি একজন ডাক্তার হব। বস্তুত আমার এ লক্ষ্য নির্ধারণের অন্যতম উদ্দেশ্য হলাে মানবসেবা।
কারণ :বাংলাদেশ সম্পূর্ণভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। কিন্তু জনসংথার অবরনীয় বিস্ফোরণে দেশের কৃষি আজ বিপর্যন্ত। পরিত্যু অশিক্ষা বেকারত্বও বিভিন্নভাবে এ দেশের কৃষির উপর চাপ সৃষ্টি করছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে কমে যাচ্ছে চাষের জমি কমে যাচ্ছে ঋষির উৎপাদন শক্তি। বাড় বন্যা জলোচ্ছ্বাস লবণাক্ততা অনাবৃষ্টি প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নষ্ট করে দিচ্ছে ক্ষেত্রের বসল। কাজেই কৃষ্ণব জীবিকা নির্বাহের জন্য আজ আর শুধুমাত্র শস্য উৎপাদনের উপর নির্ভর করতে পারছে না। অপর পক্ষে শিক্ষা দীক্ষা ও অর্থের অভাবে বেঁচে থাকার অন্য কোন পথও অবলম্বন করতে পারছে না। দেশের ভয়াবহ অবস্থা দেখে আমি দৃঢ়চিত্তে নিজেকে একজন কৃষিবিদ এ নাম হিসেবে গড়ে তোলার কথা ভাবছি। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি লাভের পর আমি নিজেকে পূর্ণোদ্যমে কৃষি উন্নয়ন ও গবেষণা কর্মে নিয়োজিত করব। এজন্য আমি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে এখন গবেষক হিসেবে চাকরি গ্রহণ করব। সেখানে আমার কাজ হবে এ দেশের জমির প্রকৃতি, উৎপাদন ক্ষমতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে সহাবস্থানের ভিত্তিতে উন্নত ফলনশীল শস্যবীজ উদ্বুখন করা। কি করে অর্থ সময়ে জমি থেকে অধিক পরিমাণে শনা পাওয়া যায় নদীমাতৃক বাংলাদেশে শুকনো মৌসুমে জমি থেকে কত বেশি করে কোন শসা লাভজনকভাবে উৎপাদন করা যায়, অথবা বন্যা ও স্রোতের সাথে সগ্রাম করে বেঁচে থাকার মত শক্তিশালী শসা কি অপর কেমন করে হতে পারে এ সকল বিষয়ে গবেষণাই হবে আমার প্রধান কাজ। এ ছাড়াও আমি নিজ প্রচেষ্টায় গড়ে তুলব বিভিন্ন প্রকার খামার উন্নত জাতের গবাদি পশুর খামার দুগ্ধ খামার নিজ বাড়িতে একটি হাস মুরগির খামার এবং একটি মৎস্য খামার থাকবে। আমার অর্জিত জ্ঞান ফাসম্ভব প্রয়োগ করে এসব খামারকে দেশের আদর্শ খামাররূপে গড়ে তুলব। এ সকল খানার আমি এ দেশের অশিক্ষিত দরিদ্র মানুষ ও ভূমিহীন কৃষকের নিকট আদর্শ হিসেবে তুলে ধরব। হাস মুরগি মৎস্য গবাদি পশু ইত্যাদি থেকে যে খুব অল্প খরচে এবং অল্প সময়ে পাভজনক আর হতে পারে সে বিষয়ে আমি তাদের জ্ঞান দিতে সাহায্য করব। এ কাজে মানুষকে হাতে কলমে শিক্ষাদানের জন্য আমি আমার নিজ গ্রাম একটি ‘কৃষিখামার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং মাঠ প্রশিক্ষক দল গড়ে তুলব। প্রশিক্ষকগণ বাড়ি বাড়ি গিয়ে লোকজনকে হাঁস মুরগি গবালিপশু ও মৎস্য চাষ সম্পর্কে অবহিত করবে। এর প্রয়োজনীয়তা ও লাভজনক আয়ের চিত্র তুলে ধরবে। সভা সমিতি আলোচনা প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলাদেশের খামার ব্যবস্থাকে জনপ্রিয় করে তোলার বিরাট কর্মোদ্যোগ গ্রহণ করব। এভাবে দেশের উৎপাদনে উন্নয়নের একটি নতুন ধারা তৈরি করব আমি। এ দেশের মানুষ তখন বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে। আবার এদেশের ঘরে ঘরে আসবে সুখ ও সমৃদ্ধি। মাছে ভাতে বাঙালির লুপ্ত পরিচয় স্বগৌরবে পুন প্রতিষ্ঠিত হবে।
লক্ষ্য নির্বাচনের সঠিক সময়
আমি পড়েছি ছাত্রজীবনেই ভবিষ্যৎ জীবনের বীজ বপনের সময়। এ সময়ে স্বপ্ন ও কল্পনার যে বীজ বপন করা হয় তাই ভবিষ্যতে ফুল ফলে বিকশিত হয়ে ওঠে। কিন্তু কেবল স্বপ্ন ও কল্পনার বীজ বপন করলেই চলে না শ্রম নিষ্ঠা সাধনা অধ্যবসায় ও দৃঢ় একাগ্রতা দিয়ে তাকে লালন বর্ধন ও বিকশিত করতে হয়। তাই ভবিষ্যৎ জীবনের লক্ষ্য উপনীত হওয়ার জন্যে আমাকেও এখনই জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নির্বাচন করতে হয়েছে।
ভবিষ্যতে চিকিৎসাবিদ্যা অর্জনের উদ্দেশ্য
আমাদের দেশের অধিকাংশ লােক দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। আমি আমার জীবনের চারদিকে যে করুণ জীবন চিত্র দেখেছি তাতে একটা বেদনাকাতর অনুভূতি আমার মনে পুঞ্জীভূত হয়ে আছে। এমন বেদনাঘন অবস্থার পরিবর্তনের জন্য একটা তাগিদ আমি সব সময়ই অনুভব করি। আর সেটা হলাে দরিদ্র মানুষের পাশে দাড়ানাে, তাদের জন্য কিছু করা। দারিদ্র্যের কারণে তারা সবসময় সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়। প্রতিবছর দেশের হাজার হাজার সম্ভাবনা অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এসব অসহায় মানুষদের জীবন-মৃত্যু অনেকাংশে ডাক্তারদের ওপর নির্ভরশীল। তাই এসব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেবা প্রদানের অন্যতম উপায় হিসেবে আমি এমন মহতী লক্ষ্য নির্বাচন করেছি। বস্তুত আমাদের দেশে চিকিৎসাসেবা এখন সীমিত ও ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। দেশের বিপুল জনসংখ্যার অনুপাতে চিকিৎসকের সংখ্যা যেমন কম তেমনি ডাক্তারদের শহরমুখী মনােভাবের কারণে গ্রামের সাধারণ মানুষ ভালাে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বড়াে বড়াে চিকিৎসকের মধ্যে এখন সেবার চেয়ে ব্যবসায়িক মানসিকতা ঢুকে পড়েছে। তাই একজন নিবেদিত প্রাণ চিকিৎসক হিসেবে আমি ভবিষ্যতে ভালাে ডাক্তার হতে চাই।
পাঠ্যক্রম নির্বাচন
নতুন পাঠ্যক্রম অনুসারে মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরেই পাঠ্যক্রম নির্বাচনের সুযোগ আমরা পেয়েছি। আমি শিক্ষকতাকে জীবনের লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে মানবিক শাখাকেই বিশেষভাবে পছন্দ করেছি। আমার ধারণা, বিজ্ঞান শিক্ষা মানুষের মানসিকতাকে কিছুটা যান্ত্রিক ও তথ্যপ্রবণ করে তোলে বাণিজ্য শিক্ষায় প্রাধান্য পায় লাভ ক্ষতির বিচার বিবেচনা। সেই তুলনায় ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে ইচ্ছুক একজনের মননশীল মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ার ক্ষেত্রে মানবিক বিদ্যার ভূমিকাই প্রধান। আর তাই আমি মানবিক বিদ্যা চর্চাকেই বর্তমান শিক্ষাক্রম হিসেবে বেছে নিয়েছি।
লক্ষ্য অর্জনের উপায়
বর্তমানে আমি নবম শ্রেণির ছাত্র। আমি কাক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য ভালােভাবে লেখাপড়া করব যাতে এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ নিয়ে পাশ করতে পারি। এইচএসসি পাশ করার পর মেডিকেল কলেজে ভর্তি হব । মেডিকেল কলেজে পাঁচ বছর অধ্যয়নের পর এমবিবিএস পাশ করে একজন দক্ষ ডাক্তার হয়ে এদেশের দরিদ্র অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়াব। আমার কর্মজীবন । আমি মানবসেবায় নিয়ােজিত করব। মানবসেবার মতাে মহৎ কাজের মাধ্যমে আমি মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই।
আমার দৃষ্টিভঙ্গি
আমি জানি বর্তমান যুগে শিক্ষা এত বেশি বিষয়ভিত্তিক ও বিশেষায়িত হয়ে গেছে যে তাতে শিক্ষার্থীকে সঠিকভাবে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচিভিত্তিক বিষয়ে শিক্ষাদান করাই আমার মুখ্য উদ্দেশ্য হবে না, আমি চাইব প্রধানত শিক্ষার্থীদের আত্মশক্তির উদ্বোধন ঘটাতে, নৈতিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত করতে দেশব্রতী হওয়ার প্রণোদনা প্রদান করতে। কারণ আত্মশক্তির উদ্বোধন ছাড়া মুক্তি ও উন্নতি সম্ভব নয়।
শিক্ষকতা পেশায় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য
আমাদের দেশে শিক্ষক পেশাধারী লোকের অভাব নেই। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কতজন প্রকৃত শিক্ষক বলা মুশকিল। বেশির ভাগই শিক্ষকতার চাকরি করছেন। কিন্তু শিক্ষকতা একটা সামাজিক দায়বদ্ধ মহৎ পেশা। নানা কারণে শিক্ষকের পেশায় মহৎ আদর্শ এখন ক্ষয়িষ্ণ। এই ক্ষয়িষ্ণু অবস্থার অবসান ঘটিয়ে আবার শিক্ষকের পেশায় নতুন চেতনার প্রসার ঘটানোর ক্ষেত্রে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে শিক্ষকতা সুদূরপ্রসারী ফলাফল রাখতে পারে তাই আমি শিক্ষার বিষয় হিসেবে শিক্ষাবিজ্ঞান পড়তে চাই এবং পেশা হিসেবে শিক্ষক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে শিক্ষকতাকে বেছে নিতে চাই। এই লক্ষ্য স্থির রেখেই আমি অগ্রসর হবার প্রত্যাশা রাখি।
ছাত্রাবস্থায়ই লক্ষ্য স্থির করার উপযুক্ত সময়
ছাত্রজীবন পরিণত জীবনের প্রস্তুটিপর্ব। ছাত্রাবস্থার স্বপ্ন ও কল্পনা পরিণত জীবনে বাস্তবের মাটিতে ফুলে ফলে সুশোভিত হয়ে সার্থক হয়। কিন্তু স্বপ্ন কেবল স্বপ্ন হলেই কিংবা কল্পনা অবাস্তব ও উদ্ভট হলেই চলে না পরিণত জীবনের লক্ষ্যবাহী হওয়া চাই। সেজন্য ছাত্রাবস্থাতেই জীবনের লক্ষ্য স্থির করতে হয়। সে লক্ষ্যকে সমানে রেখে অগ্রসর হতে হয় শ্রম নিষ্ঠা অধ্যবসায় ও একাগ্রতার সাথে।মানুষের কর্মজীবন বিকশিত হতে পারে বিচিত্র পথে। জ্ঞান বিজ্ঞানের সাধনা চিকিৎসা সেবা দান শিল্প কলকারখানা স্থাপন ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা পালন নানাভাবে মানুষ কর্মজীবনে ভূমিকা রাখতে পারে। পেশা হিসেবে কেউ বেছে নিতে পারে চাকরি কেউ হতে পারে আইনজ্ঞ কেউ হতে পারে প্রকৌশলী কেউ বা ব্রতী হতে পারে শিক্ষকতার মহান পেশায় কেউ বা বেছে নিতে পারে কৃষি উন্নয়ন। যে যাই হতে চাক না কেন বৃত্তি নির্বাচন অনেকাংশে নির্ভর করে শারীরিক সামর্থ্য শিক্ষাগত আর্থিক স্বচ্ছলতা ও উপযুক্ত পরিবেশের উপর। অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ বৃত্তি বা পেশা গ্রহণের জন্য সুনির্ধারিত পাঠক্রম অধ্যয়নের প্রয়োজন হয। সে জন্য জীবনের লক্ষ্য ঠিক করার সাথে সাথে সেই অনুযায়ী পাঠক্রম ঠিক করতে হয়।
জীবনের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলা
আমি আমার লক্ষ্যে পৌছানাের জন্য এখনই তৈরি হচ্ছি। অঙ্ক ও বিজ্ঞানের প্রতি আমার বরাবরই আকর্ষণ বেশি। স্কুলের নির্ধারিত পড়া ছাড়াও অবসর পেলে বিজ্ঞানের বই পডি অঙ্ক কষি। প্রকতির রহস্যে আমি বিস্মিত হই। নানা আবিষ্কারের কাহিনি পড়ে আমি খুব মজা পাই। তাই নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগই বেছে নিয়েছি। মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করে কলেজে গিয়েও আমি বিজ্ঞান পড়ব। তখন জীববিদ্যা আমার অন্যতম বিষয় থাকবে। আশা করি নিয়মিত লেখাপড়া করতে পারলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক উভয় পরীক্ষায় পােল্ডেন জিপিএ পাব। মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারব বলে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আমি চিকিৎসা বিজ্ঞানের যেকোনাে একটি শাখায় বিশেষজ্ঞ হওয়ার আশা পােষণ করি।
জনসেবা ও কর্মজীবন
একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে আমি কর্মজীবন শুরু করতে চাই। সরকারি চাকরি গ্রহণ না করে । স্বাধীনভাবে রােগী দেখব। এজন্য আমি গ্রামের অর্থাৎ উপজেলা পর্যায়ের স্থানকে বেছে নেব। যদিও অধিক অর্থোপার্জনের জন্য শহরই উপযুক্ত স্থান কিন্তু আমার অর্থের প্রতি কোনাে লােভ নেই। শহরের ভালাে ডাক্তার গ্রামে থাকতে চায় না। ফলে জটিল রােগের চিকিৎসার জন্য গ্রামের মানুষদের শহরে আসতে হয়। অথচ গ্রামীণ এসব দরিদ্র মানুষের আর্থিক দুরবস্থা এতটাই প্রকট যে শহরে এসে চিকিৎসা নেবার সামর্থ্য তাদের থাকে না। ফলে প্রতি বছরই বিনা চিকিৎসায় হাজার হাজার লােক মারা যায়। আমি গ্রামের সেসব হতদরিদ্র জনগণের সেবা করতে চাই। তাদের জন্য বিনা ফিতে চিকিৎসা সেবার সুযােগ থাকবে। ধনীদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট ফি আদায় করব। আমার ইচ্ছা গ্রামের মানুষদের জন্য স্বাস্থ্যসেবার একটি পদ্ধতিগত মডেল তৈরি করা। যাতে চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত গ্রামের মানুষেরা উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা পায়।
দেশের অবস্থার সঙ্গে আমার লক্ষ্যের যোগসূত্র
আজ আমাদের শিল্পবিধ্বস্ত কৃষি অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত। দিনের পর দিন শোষক শাসকেরা এ দেশকে কামধেনুর মতো দোহন করে নিয়ে গেছে। ক্ষমতার অতিরিক্তে উৎপাদন করে বাংলাদেশের কৃষি আজ সর্বস্বান্ত। অথচ স্বাধীনতা লাভের পর আমাদের লক্ষ্য ছিল ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা একটি সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার। স্বপ্নের বাঙলাকে বাস্তবিক সোনার বাঙলা হিসেবে দড়ে তুলতে আমার লক্ষ্যের বিকল্প নেই।
সার্থকতা
আমাদের দেশের কৃষক ভোঁতা লাঙ্গল রুগ্ন হাল বলদ ও নিকৃষ্ট বীজ নিয়ে সারহীন জমিতে যথাসম্ভব স্বল্প পরিমাণ ফসল ফলিয়ে চলতে। সেচের জল তারা ঠিকমত পায় না। আমি নতুন উদ্যমে এই হতাশাক্লিষ্ট কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে চাই। উন্নত সারের ব্যবহার সম্পর্কে আজও তারা অজ্ঞ। উন্নত বীজ সংগ্রহে এখনও তাদের উদাসীনতা। আজও অভাব দরিদ্র্যের এক নিষ্করুণ চিত্র। তার ওপর অশিক্ষার অন্ধকার। কুসংস্কারের আনুগত্য। রোগ মহামারীর অভিশাপ। বস্তুত কৃষকদের উন্নতি ব্যতীত কৃষিপ্রধান এই দেশের সামগ্রিক উন্নতি সম্ভব নয়। তাই আমি কৃষি সেবার মাধ্যমে যতটুকু সাধ্য দেশ সেবা করে যাব। আর এর মাঝেই আমার জীবনের স্বপ্ন ও লক্ষ্যের সার্থকতা নিহিত বলে আমি মনে করি।
উপসংহার
এ দেশের সন্তান বড় হবে দুধে ভাতে এই ই আমার স্বপ্ন। আমার জীবনের উদ্দেশ্য এ স্বপ্নকেই বাস্তব করে তোলা।
আরো দেখুন (প্রবন্ধ রচনা) :
- রচনা : আমার জীবনের লক্ষ্য
- রচনা : জীবনের লক্ষ্য ও পাঠক্রম নির্বাচন
- Essay : Aim in Life
- অনুচ্ছেদ : আমার জীবনের লক্ষ্য
- Letter to friend telling future plan
- Paragraph : My Future Plan
- Dialogue about future plan after graduation
- জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে ছোট ভাইকে পত্র
- তোমার জীবনের লক্ষ্য জানিয়ে বন্ধুর কাছে চিঠি