রচনা : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ / বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম (600 শব্দ)

মুক্তিযুদ্ধ

বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম/বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ

ভূমিকা

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে সগৌরব আসনে অধিষ্ঠিত। ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বিশ্বে মাতৃভূমির জন্য আত্মত্যাগের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আধুনিক মারণাস্ত্রে সজ্জিত একটি দুর্ধর্ষ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রায় নিরস্ত্র জনগণের যা দুর্বার সংগ্রাম সংঘটিত হয়েছিল বিশ্বে তার কোনো তুলনা নেই। এদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের জীবনকে মরণের হাতে সমর্পণ করে যে দুর্জয় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল আর দেশের অগণিত মানুষ জীবনের ভয় তুচ্ছ করে যেভাবে সহযোগিতা প্রদর্শন করেছিলেন তা বিশ্বের সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।

ইতিহাসের পটভূমি

১৯৭১ সালের ছাব্বিশে মার্চে যে যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বরে তার অবসান ঘটেছিল পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে। কিন্তু এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমি আরও অতীতে বিস্তৃত। প্রায় দুশ বছর ইংরেজ শাসন থেকে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান অর্জনের মধ্যে বর্তমান বাংলাদেশ এলাকার মানুষের যে স্বপ্নসাধ ছিল তা অচিরেই পাকিস্তানি শাসকের শোষণ ও অদূরদর্শিতার কারণে নিঃশেষিত হয়ে যায়। বঞ্চনার শুরুতেই প্রতিবাদ উঠেছিল ১৯৪৮ সালে যখন উর্দুকেই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রিভাষা বলে ঘোষণা করা হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসীর প্রাণের দাবি মাতৃভাষা বাংলাকে মর্যাদা দানের জন্য ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ছাত্র জনতার আত্মোৎসর্গের ঘটনাটি জাতীয় চেতনাকে নতুনভাবে উদ্দীপ্ত করে। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসক এবং ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত আইয়ুব খান ক্ষমতা ত্যাগ করে সেনানায়ক ইয়াহিয়া খানের হাতে দেশের শাসনভার তুলে দিলেও সমস্যার সমাধান হলো না। অনুষ্ঠিত হলো ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন। আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেও ক্ষমতায় যেতে দেওয়া হলো না তাকে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকায় ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান “এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম” বলে জাতিকে মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। আপস আলোচনার নামে কালক্ষেপণ করে ইয়াহিয়া খান পশ্চিম পাকিস্তান থেকে গোপনে সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র এনে শক্তি বৃদ্ধি করে এবং ২৫ মার্চের রাতে পাকিস্তান সেনারা নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করে। বাংলাদেশের নিরস্ত্র নিরীহ মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়া হলো এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। গভীররাতে তারা বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পূর্বেই অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। আহ্বান করেন বাঙালি সন্তান্দের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য।

 

যুদ্ধের ঘটনা

পঁচিশে মার্চের রাতের অন্ধকারে হানাদার বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে বিপর্যস্ত জাতির স্বাধীনতা ঘোষিত হলো ছাব্বিশে মার্চে। সামরিক বাহিনীর কিছু লোক, পুলিশ, আনসার, ছাত্র, যুবক, বিভিন্ন পেশার মানুষ সবাই দেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য একত্রিত হলো, গঠিত হলো মুক্তিবাহিনী। তারুণ্যের অমিত শক্তি দিয়ে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে মুক্তিবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ল হানাদার বাহিনীর উপর। অন্যদিকে পাকিস্তানি বাহিনী দেশ জুড়ে নির্বিচারে হত্যাকান্ড চালাল, জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিতে লাগল বাড়িঘর। এদেশে নিষ্ঠুর অত্যাচারে এক কোটি মানুষ দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। মুক্তিবাহিনী গেরিলা যুদ্ধের কৌশল অবলম্বন করে শত্রুদের বিপর্যস্ত করে।

 

শত্রুর আত্মসমর্পণ

‘৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে সংগ্রাম চরম রূপ ধারণ করে। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ ব্যাপকতর হতে থাকে। আর শত্রু বাহিনীও সর্বাত্মক ধ্বংসলীলা চালাতে থাকে। যুদ্ধের এই চরম পর্যায়ে মুক্তিবাহিনীর সাহায্যার্থে ভারতীয় বাহিনী এগিয়ে আসে এবং যৌথ বাহিনীরূপে পাকিস্তানি বাহিনীকে বিপর্যস্ত করতে থাকে। ৩ ডিসেম্বর থেকে যৌথ বাহিনীর আক্রমণে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয় হানাদার বাহিনী। ৭৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে ঢাকায় রেসকোর্সে বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মিত্রবাহিনীর কাছে বিনাশর্তে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হলো। জয় হলো বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষের-আকাশে উড়ল সবুক জমিনে লাল সূর্যিখচিত জাতীয় পতাকা। এভাবে বিশ্বের মানিচিত্রে জন্ম হলো স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।

 

উপসংহার

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল জাতির অস্তিত্বের সংগ্রাম। পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকে যে শোষণ আর অত্যাচারের শুরু হয়েছিল তার অবসান ঘটে এই যুদ্ধের মাধ্যমে। সমগ্র জাতি, জাতির সর্ব পর্যায়ের মানুষদেশের মুক্তির জন্য আত্মোৎসর্গের চেতনায় নিজেদের উৎসর্গ করেছিল বলেই প্রবল শক্তিধর হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটাতে সক্ষম হয়েছিলো। এই সংগ্রাম বাংলাদেশের মানুষকে সীমাহীন মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষার জন্য দৃঢ় মনোভাব নিয়ে সকলের দায়িত্ব পালন করতে হবে।


Click to rate this post!
[Total: 6 Average: 3.3]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like