Tag Archives: মে

প্রবন্ধ রচনা : মে দিবসের পটভূমি ও আজকের শ্রমিক

মে দিবসের পটভূমি ও আজকের শ্রমিক

 

শ্রমজীবী মানুষের প্রেরণা ও উৎসবের দিন ১ মে। দিনটি প্রেরণার হলেও এর পিছনে
লুকিয়ে আছে এক রক্তাক্ত করুণ ইতিহাস। ন্যায্য অধিকার আদায়ে শ্রমিকদের আত্মহুতি
দানের এই গৌরব দীপ্ত ইতিহাস, যা যুগ যুগ ধরে শ্রমিকদের উজ্জীবিত করে তাদের দাবি
আদায়ের সংগ্রামে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিশ্বের শ্রমিক সমাজ তাদের
দাবি-দাওয়ার যে প্রতিফলন ঘটিয়েছিল তা আজো পরিপূর্ণতা লাভ করেনি। এখনে তাদের
দাবি-দাওয়ার ৫০ ভাগও বাস্তবায়িত হয়নি। আজকের এই আধুনিক যুগেও শ্রমিকরা হচ্ছে
তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। ধনিক শ্রেণী আজো শ্রমিকের শোষণের নীতিতে অটল
রয়েছে। তাই প্রতি বছর শ্রমিক দিবস পালিত হলেও শ্রমিকের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন
নেই।


পটভূমি :
ঢালাই শ্রমিকদের তরুণ নেতা এইচ সিলভিসের নেতৃত্বে নেতা এইচ সিলভিসের
নেতৃত্বে ‘ন্যাশনাল লেবার ইউনিয়ন’ ৮ ঘণ্টা কর্ম দিবসের দাবিতে ১৮৮৬ সালের ১ মে
আমেরিকায় ধর্মঘটের ডাক দেয়। এ ধর্মঘটের প্রধান কেন্দ্র ছিল শিকাগোতে। ১ মে
শিকাগোকে কেন্দ্র করে প্রায় সাড়ে তিন লাখ শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে
মিশিগান অ্যাভিনিউ’র মিছিলে যোগদানের প্রস্তুতি নেয় এবং শান্তিপূর্ণ ও সাফল্যের
সাথে ১ মে’র ধর্মঘট পালিত হয়। ২ মে ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন। ৩ মে ধর্মঘট আরো
ব্যাপক আকার ধারণ করে। ৩ মে ম্যাককমিক ফসল কাটার শ্রমিকরা শ্রমিকসভা শুরু করে।
সভা চলাকালে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। ঘটনাস্থলে ৬ জন নিহত ও বহু আহত হয়। এ
হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ৪ মে হে মার্কেট চত্বরে বিশাল শ্রমিক সমাবেশ হলে সেখানেও
পুলিশের বেপরোয়া লাঠিচার্জ ও গুলিতে নিহত হয় ৪ জন শ্রমিক ও গ্রেফতার হয় ১৬ জন।
পরবর্তী সময়ে প্রহসনের বিচারে আরো ৪ জনকে ফাঁসি দেয়া হয়। নারকীয় এই হত্যাযজ্ঞের
মাধ্যমে গোটা বিশ্বের শ্রমিকের অধিকারকে নতুন মাহাত্ম্য এনে দেয়। ১৮৮৯ সালের ১৪
জুলাই এঙ্গেলস- এর নেতৃত্বাধীন দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠা কংগ্রেসে ৮ ঘণ্টা
শ্রম দিবস আদায় এবং শিকাগোর শহীদ শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও আন্তর্জাতিক
সংহতি প্রকাশের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই থেকে ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রম
দিবস হিসেবে সারা দুনিয়ায় পালিত হয়ে আসছে।

শ্রমিক আন্দোলনের শুরু যেভাবে :
শ্রমিক শ্রেণির প্রথম দিককার সংগ্রাম ছিল আজকের
সংগ্রাম থেকে আলাদা ধরনের। ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের সময় কাল ধরা হয় ১৭৬০ থেকে
১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমেই যান্ত্রিক যুগের সূচনা হয়।
শ্রমিকেরা মনে করত কল-কারখানা তাদের দুঃখ-কষ্টের মূল কারণ। তাই ১৭৬০-এর দশকে তারা
কলভাঙ্গার আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন ‘লেডউড’ নামক একজন সুতাকল
শ্রমিক। পর্যায়ক্রমে ১৮৩০ সাল পর্যন্ত এই আন্দোলন চলে। এর আন্দোলন পরিচালনার জন্য
শ্রমিকশ্রেণি ট্রেড ইউনিয়নের মাধ্যমে সংগঠিত হতে থাকে। ১৭৯৯-১৮০০ সালে
ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টে ট্রেড ইউনিয়ন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৮৩০-১৮৪৭ সাল
পর্যন্ত নানা ধরনের আইন তৈরি করে ট্রেড ইউনিয়নকে অকেজো করে রাখার চেষ্টা করা হয়।
তথ্যে মে দিবস
  • দৈনিক ৮ ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতে প্রথম আন্দোলন হয়- যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে।
  • দৈনিক ৮ ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতে ধর্মঘট আহ্বান করে- যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল
    লেবার ইউনিয়ন।
  • শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন-এইচ সিলিভিস।
  • ন্যাশনাল লেবার ইউনিয়ন আমেরিকায় ধর্মঘটের ডাক দেয়- ১ মে ১৮৮৬।
  • দৈনিক ৮ ঘণ্টা কর্ম দিবসের দাবি আদায় হয়- ১৪ জুলাই ১৮৮৯।
  • ১৮৮৬ সালের শ্রমিক আন্দোলনের ব্যাপ্তি ছিল-৩ দিন (১ মে থেকে ৩ মে)।
  • ১৮৮৬ সালের ১ মে থেকে ৩ মে পর্যন্ত শ্রমিক আন্দোলন দমনে পুলিশের গুলিতে নিহত
    হয়- ১০ জন।
  • মে দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়- ১৪ জুলাই ১৮৮৯।
  • বিশ্বব্যাপী মে দিবস পালিত হয়ে আসছে- ১৮৯০ সাল থেকে।
  • প্রথম শ্রম আইন প্রণীত হয়- ১৮৮৯ সালে।
  • ১৮৯০ সালে প্রথম মে দিবস পালিত হয়- যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে।
আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায় : সাইলেসিয়ায় তাঁত শ্রমিকরা অমানুষিক অত্যাচার নিপীড়ন, নির্যাতনের শিকার হয়ে
শ্রেণিশত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। ১৮৪৪ সালের ৫ জুন সরকারি সৈন্যবাহিনীর
সঙ্গে তাদের লড়াই শুরু হয়। এই লড়াইয়ে ১৭ জন শ্রমিক নিহত ও ১৪ জন আহত হয়। ৯ জুন এই
অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়। ১৮৩০ সাল থেকে চ্যাটিস্ট আন্দোলন চলে। ১৮৪৮ সালে
ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট শ্রমিক ভোটের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়। এটাই শ্রমিকদের
প্রথম রাজনৈতিক অর্জন।
আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায় : আমেরিকায় শিল্পের অতীত বিকাশ ১৮৮০ সাল থেকে ১৮৯০ সাল পর্যন্ত চলতে থাকলেও ১৮৮৪-৮৫
পর্যন্ত মন্দা দেখা দেয়। এই সময় অনেক কলকারখানা লে-অফ, লক আউট ঘোষণা করা হয়। ফলে
বহু শ্রমিক ছাঁটাই হয়ে বেকার হয়ে পড়ে। ১৮৮৮ সালের ৭ অক্টোবর ওই সংগঠনের ৪র্থ
সম্মেলনে ৮ ঘণ্টা শ্রম দিবসের দাবিকে প্রস্তাব হিসেবে গ্রহণ করা হয় এই মর্মে,
১৮৮৬ সালের ১ মে থেকে ৮ ঘণ্টা কাজের দিন আইনত গণ্য করতে হবে। ১৮৮৫ সালে পরবর্তী
সম্মেলনে বিগত বছরের সিদ্ধান্তের পুনরাবৃত্তি ঘোষিত হয়। সম্মেলনের সিদ্ধান্ত
অনুযায়ী ১৮৮৬ সালের ১ মে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে ধর্মঘট শুরু হয়। ৩ মে শ্রমিকদের
শান্তিপূর্ণ মিছিলে ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ। ৪ মে শিকাগোর হে মার্কেটে প্রতিবাদ সভা
বসে। সভায় পুলিশ আক্রমণ করলে শ্রমিকরা আক্রমণের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে। নিহত হয়, ৭
পুলিশ, শহীদ হয় ৪ শ্রমিক। সারা সে মার্কেট চত্বর রক্তে রাঙা হয়ে যায়। সভায়
উপস্থিত এক কিশোর শ্রমিক সেদিন তার গায়ের জামা খুলে রক্তে রক্তে ভিজিয়ে রক্তভেজা
লাল জামাটি উড়িয়ে দেয় পতাকা হিসেবে। আর সেই পতাকাই আজ শ্রমিকশ্রেণীর লাল ঝাণ্ডা,
সংগ্রামের অনুপ্রেরণার উৎস। এর পরে শ্রমিক নেতাদের নামে মামলা দায়ের করে প্রহসনের
বিচারের মাধ্যমে ৭ জন শ্রমিকের ৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে
দণ্ডিত করা হয়।
মে দিবস পালনের ঘোষণা : শোষক শ্রেণির নানান অত্যাচার নিপীড়ন সত্ত্বেও সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে ‘দুনিয়ার
মজদুর এক হও’
শ্লোগনটি। এই স্লোগানে বিশ্বের সকল শ্রমজীবী মানুষ অনুপ্রাণিত হয়।
১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠনের সম্মেলনে প্রথম শ্রম আইন
প্রণীত হয়। এই আইনে শ্রমিকদের দৈনিক কর্মসময় ৮ ঘণ্টা এবং সপ্তাহে ১ দিন ছুটি
প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয়
আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ১ মে আন্তর্জাতিক সংহতি অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন
হিসেবে সারা বিশ্বে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহিত হয়।

 

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা
ILO এর পূর্ণরূপ : International Labour Organization.
প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় :
১৯১৯ সালে। (তখন এটি লীগ অব নেশনসের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল)।
UN ভুক্ত হয় :
জাতিসংঘের বিশেষ সংস্থার মর্যাদা লাভ করে ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৪৬।
উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য :
  • শ্রমের অবস্থার উন্নয়ন সাধন,
  • শ্রমিকের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন,
  • সরকার
    মালিক শ্রমিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টা,
  • সামাজিক ও অর্থনৈতিক বুনিয়াদ সুদৃঢ় করা।
সদস্য সংখ্যা : ১৮৩।
সদর দপ্তর : জেনেভা, সুইজারল্যান্ড।
প্রধানের পদবি :
ডাইরেক্টর জেনারেল।
গভর্নিং বড়ি গঠিত : ২৮ জন সরকারি প্রতিনিধি, ১৪ জন শ্রমিক ও
১৪ জন বিনিয়োগ প্রতিনিধি অর্থাৎ ৫৬ জন প্রতিনিধি নিয়ে।
যোগাযোগ : 4. route des morillons, CH-1211 Geneva 22. Switzerland. Fax : (41-22)
798-8685; E-mail : ilo@ilo.org ওয়েবসাইট : www.ilo.org
আজকের শ্রমিক : ১৮৮৬ সালের মে মাসে শিকাগোর হে-মার্কেটে সংগটিত রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে
বিশ্বের শ্রমিক সমাজ তাদের দাবি-দাওয়ার ৫০ ভাগও বাস্তবায়িত হয়নি। সেই রক্তক্ষয়ী
সংঘর্ষ ঘটে যাওয়ার পর সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা শ্রমদানের দাবি বাস্তবায়িত হলেও কালে কালে
তাও আবার স্বার্থান্বেষী মহল তথা ধনিক শ্রেণির নগ্ন থাবায় আজকের প্রেক্ষাপট
ভিন্নতা লাভ করেছে। ধনিক শ্রেণি তাদের প্রভাব খাঁটিয়ে আজকের শ্রমিক সমাজকে
নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা ন্যুনতম মজুরি কিংবা ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে সাধারণ
শ্রমিকদেরকে। আজো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্রীতদাস প্রথা বিদ্যমান। বলপূর্বক শ্রমে
নিয়োগ, অতিরিক্ত শ্রমদানে বাধ্য করা, ধনিক শ্রেণির ইচ্ছামাফিক তাদের পরিচালন, কম
মজুরি প্রদান, কর্মক্ষেত্রে শিশু শ্রমিক নিয়োগ, শিশু ও নারী পাচার ও তাদের
পতিতাবৃত্তিসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আন্তর্জাতিক
শ্রম আইন, স্থানীয় প্রশাসন ও সেবা সংস্থাগুলোকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েই এসব ঘটে
চলেছে। অথচ প্রতিবছর জাঁকজমকের সাথে মে দিবস পালন করা হচ্ছে। তাই মনে রাখতে হবে
সেদিন শ্রমিক শ্রেণি তার অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে যে সংগ্রাম গড়ে তুলেছিল
আজো শ্রমিক শ্রেণির সামনে সে কর্তব্য শেষ হয়ে যায়নি। ১ মে’র লড়াই শুধুমাত্র ৮
ঘণ্টা শ্রম সময় নির্ধারণের জন্যই নয় বরং মজুরি দাসত্ব প্রথার অবসানের লক্ষ্যেই
তাদের এ লড়াই। মে দিবস তাই এক গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামের স্মৃতিবাহী অবিস্মরণীয় দিনই
কেবল নয়, কর্মজীবী শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামের অনুপ্রেরণার অবিনাশী উৎসও
বটে। আর সেই অনুপ্রেরণায় আবারও শ্রমিক সমাজকে উজ্জীবিত হতে হবে। প্রতিষ্ঠা করতে
হবে শ্রমিক সমাজের ন্যায্য অধিকার। যাদের শ্রমের বিনিময়ে ধনিক শ্রেণি সৃষ্টি
হয়েছে, তাদের ন্যায্য পাওনা আদায়ের মধ্যেই নিহিত রয়েছে শ্রমিক আন্দোলনের মূল
তাৎপর্য। সোনার হরিণের পূজারী আমরা নই, বুর্জোয়া-অত্যাচারীদের রাজত্ব আমরা চাই
না। অবসান হোক ধনতন্ত্রের সৃষ্ট দারিদ্র্যের বিভীষিকা, দীর্ঘজীবী হোক শ্রমের
রাজত্ব। এ প্রত্যাশা আমাদের।

 

প্রতিবেদন : মহান মে দিবস উপলক্ষে সংবাদ প্রতিবেদন

সংবাদপত্রের প্রকাশের জন্যে ‘ঐতিহাসিক মহান মে দিবস’ বিষয়ক একটি প্রতিবেদন
রচনা করো।

আজ ঐতিহাসিক মে দিবস

দীপান্বিতা দোলা : আজ পঞ্জিকার তারিখ অনুযায়ী পহেলা মে। এ তারিখটি
ঐতিহাসিক। বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের সংহতি প্রকাশের দিন আজ। দিনটি আন্তর্জাতিক
শ্রমিক দিবস হিসেবে পালিত হয় সারা বিশ্বে। শ্রমজীবী মানুষেরা অধিকার প্রতিষ্ঠার
জন্যে সেদিন যে সংগ্রাম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, তার ভিত্তিতে এ দিনটি ইতিহাসের
পাতায় স্থান করে নিয়েছে।
১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের ‘হে মার্কেটে’ ৮ ঘন্টা
কাজের সময় নির্ধারণের দাবিতে সমবেত হয় হাজার হাজার শ্রমিক। এই শ্রমিকদের সমাবেশ
সেদিন পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালালে অনেক শ্রমিকের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়।
পুলিশের নির্যাতনের মুখেও শ্রমিক আন্দোলন থেমে না গিয়ে বরং তা আরো বেগবান হয়ে
ওঠে। প্রতিবাদমুখর শ্রমিকরা ৪ মে হে মার্কেটের সামনে আবারো সমাবেশের আয়োজন করে।
এদিনও পুলিশ বাহিনী নির্মমভাবে শ্রমিকদের ওপর গুলি চালায়। হতাহত হয় আরো অনেক
শ্রমিক। এভাবে শ্রমিকের রক্তের বিনিময়ে শেষ পর্যন্ত কাজের সময় ৮ ঘন্টা নির্ধারণের
মাধ্যমে শ্রমিকদের দাবি পূরণ হয়। উল্লেখ্য, এর পূর্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ
পৃথিবীর কোথাও শ্রমিকদের কাজের নির্ধারিত কোনো সময় ছিল না। যেখানে যে যেমন করে
পারে শ্রমিকদের খাটিয়ে ১০-১৬ ঘন্টা পর্যন্ত কাজের বিনিময়ে দিনের মজুরি দিত।
১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে পহেলা মে’র ঘটনাকে কেন্দ্র করে, ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসের
আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ও
আত্মাহুতিকে স্বীকৃতি দিয়ে পহেলা মে শ্রমিক শ্রেণির আন্তর্জাতিক সংহতি দিবস
হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দ থেকে বিশ্বের সর্বত্র
১লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার দিবস হিসেবে পালন করা
হচ্ছে। বিশ্ববাসীর সাথে বাংলাদেশও শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের ও সংহতি প্রকাশের
ঐতিহাসিক দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে।
তবে এখানে উল্লেখ করার বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ যখন এই মহান মে দিবস পরিপূর্ণ
মর্যাদায় পালিত হচ্ছে তখনও এ দেশের হাজার হাজার শ্রমিক কাজ না পেয়ে দিনাতিপাত
করছে কিংবা যারা কাজ পেয়েছে তাদেরকে নির্ধারিত ৮ ঘন্টার পরিবর্তে অনেক বেশি সময়
কাজ করতে হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম আদমজী পাটকলসহ কয়েক শত
গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ করে দেওয়ায় অসংখ্যা শ্রমিক কাজ হারিয়েছে। দেশের বিভিন্ন
কলকারখানা, ব্যাংক, বীমা, শিল্প প্রতিষ্ঠানে যেসব সংগঠন বা সিবিএ আছে, তারা
শ্রমিকের অধিকার আদায় ও প্রতিষ্ঠা চেয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করে
ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করায় ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় না। অনেক ভাগে
বিভক্ত এসব শ্রমিক সংঘঠন প্রতি বছর ঘটা করে ১লা মে পালন করে। তারা পতাকা উত্তোলন,
র‍্যালি, মিছিল, পদযাত্রা কিংবা শোভাযাত্রা ও আলোচনা অনুষ্ঠানও করে। এসব
অনুষ্ঠানে শ্রমিক নেতারা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বড়বড় বুলি আওড়ায়,
কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। এজন্যে অবশ্যই শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের আন্তরিকতা
এবং পাশাপাশি সরকারের সদিচ্ছা থাকা আবশ্যক। যদি সত্যিকার অর্থে শ্রমিকদের দাবি ও
ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়, তবেই মহান মে দিবস পালন সার্থক হবে।

 

Paragraph : May Day

May Day

May Day is an international holiday of working people. In the year 1886 in the month of May, the workers in the American city of Chicago who were groaning under the pangs of exploitation raised slogans for their recognition as men. This movement demanded a time limit for work and other basic facilities of the workers so that they could live as human beings. This was no doubt a moral blow to the wealthy class. In consequence, the streets of Chicago city were red with the warm blood of the workers. The capitalist government and its agent adopted every possible means to choke the voice of the workers. The leaders of the workers were hanged. But the undaunted workers came out successful in sacrificing their lives. The demand for eight hours working time instead of twelve or thirteen hours was accepted and they were provided with some amenities of life. May Day has been a symbol for workers all over the world. May Day is a spirit of international brotherhood and unity of the workers. On May Day, all workers should be united to march on the path of progress and happiness.

 

রচনা : মে দিবসের তাৎপর্য

↬ আন্তর্জাতিক মে দিবস

↬ মে দিবসের ইতিহাস

 

ভূমিকা :
‘এমন সময় আসবে যখন কবরের অভ্যন্তরে শায়িত আমাদের নিশ্চুপতা জ্বালাময়ী বক্তৃতার চেয়ে
বাঙ্ময় হবে এবং তার শ্রমিকশ্রেণীর বিজয়লাভের শেষ সংগ্রাম পর্যন্ত লড়াইয়ে প্রেরণা
যোগাবে এবং শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’  -আগস্ট স্পাইজ
১৮৮৭ সালের ১১ নভেম্বর। ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে শ্রমিক আন্দোলনের অন্যতম নেতা কথাগুলো বলেছিলেন। তাঁর সেদিনের সেই ভবিষ্যদ্ববাণী আজ অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবে প্রমাণিত হয়েছে। ব্যর্থ হয় নি তাঁদের এই আত্মদান। শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে তা এক স্মরণীয় অধ্যায়। ‘মে দিবস’ পরিণত হয়েছে আন্তর্জাতিক দিবসে। মে দিবস আজ তাই হাজার হাজার শ্রমিকের পায়ে চলা মিছিলের কথা। ‘একটি মাত্র সৈন্যবাহিনী’ হিসেবে একই পতাকা তলে দাঁড়িয়ে আপসহীন সংগ্রামের কথা। মে দিবস দুনিয়ার শ্রমিকের এক হওয়ার ব্রত। আন্তর্জাতিক সংগ্রাম আর সৌভ্রাতৃত্বের দিন। মে দিবসের অর্থ শ্রমজীবী মানুষের উৎসবের দিন, জাগরণের গান, সংগ্রামে ঐক্য ও গভীর প্রেরণা। মে দিবস শোষণমুক্তির অঙ্গীকার, ধনকুবেরের ত্রাস, সমাজতন্ত্র গড়ার শপথ।
মে-রানীর রূপকথা : অথচ এই মে দিবস ছিল একদিন মে-রানীর রুপকথার অন্দরমহলে ঘুমিয়ে। আজকের সংগ্রামী তাৎপর্য ছিল তার অজানা। ইউরোপে দুর্জয় শীতের প্রথম তুষারপাত গলতে শুরু করেছে। গাছে গাছে নতুন পাতা। দিকে দিকে ফুলের বাহার। পাখির গান। মাঠেঘাটে কর্মের জোয়ার। শীতবৃদ্ধ বিদায় নিয়েছে। এসেছে তরুণ বসন্ত। তখনই মে-রানীর ঘুম ভাঙত। ১ মে হত তার উৎসব। রোপণ করা হত ‘মে বৃক্ষ’। তাকে সাজানো হত বিচিত্র পুষ্পহারে। তারপর সেই মে-রানীকে ঘিরে শুরু হত নাচ-গানের উৎসব। কবিরা মে-রানীকে নিয়ে লিখেছেন কবিতা। দেশের রাজারানী-প্রজারাও মেতে উঠতেন উৎসবে। দিন বদলায়। বদলায় সমাজ-ব্যবস্থা। পাল্টে যায় শব্দের অর্থ। মে-রানী একদিন কোথায় হারিয়ে গেল। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এসে মে দিবসের অর্থ গেল বদলে। মে দিবস হল কাজের সময় হ্রাস ও মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন। হল দুনিয়ার শ্রমিকদের সংহতি দিবস, পুঁজিবাদী শোষণমুক্তির সংগ্রামী শপথ। শ্রমিকশ্রেণীর আন্দোলন থেকেই উঠে এসেছে এই দিনটি।
মে দিবসের নেপথ্য ইতিহাস : আন্দোলনের পথ কখনই মসৃণ ছিল না। মসৃণ থাকে না। ছিল নানা ঘটনার ঘাতপ্রতিঘাতে, জুলুম, অত্যাচারে, প্রতিরোধে ধর্মঘটে, মিছিলে, সংগ্রামী ঐক্যে রক্তলাঞ্ছিত। মে দিবস একদিনে এই আন্তর্জাতিক চেহারা পায় নি। এর পেছনে রয়েছে দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস। রয়েছে অনেক রক্তঝরার কাহিনী। জন্মলগ্ন থেকেই শ্রমিকশ্রেণীর ইতিহাস সংগ্রামের ইতিহাস। শ্রমিকশ্রেণীকে উদয়াস্ত কাজ করতে হবে। আঠার ঘণ্টা, কুড়ি ঘণ্টা পর্যন্ত ছিল কাজের সময়-সীমা। আলেকজান্ডার ট্রাকটেনবুর্গ মে দিবসের ইতিহাস আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছেন, ‘মে দিবসের জন্মকাহিনী অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে কাজের ঘণ্টা কমাবার আন্দোলনের সঙ্গে।’ ১৮০৬ সালে কারখানায় কুড়ি ঘণ্টা পর্যন্ত ছিল বাধ্যতামূলক কর্মপ্রহর। ১৮২০-১৮৪০ সাল পর্যন্ত দশ ঘণ্টা কাজের দাবিতে অনেক আন্দোলন ও ধর্মঘট হয়। ১৮৬২-৬৩ সালে গড়ে উঠে ট্রেড ইউনিয়নের রাজনৈতিক ভিত্তি। দাসপ্রথা ওঠে গেল। নিগ্রোরা হল শ্বেতাঙ্গদের বন্ধু। এই সময়ে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। মালিকরা কম মজুরিতে নারী শ্রমিক নিয়োগ করত। আমেরিকায় গৃহযুদ্ধের পর থেকেই সেখানকার শিল্পের বিকাশ ঘটে দ্রুত তালে। সেই সঙ্গে শ্রমিক আন্দোলনের প্রসারও ঘটে দ্রুত। ১৮৮১ সালের নভেম্বরে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার’। সেখানে ১৮৮৪ সালের ৭ অক্টোবরে চতুর্থ সম্মেলনে গ্রহীত হল ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। বলা হয়, ১৮৮৬ সালের ১ মে থেকে আট ঘণ্টাকেই কাজের দিন বলে আইনত গণ্য করতে হবে।
 
ঐতিহাসিক মে দিবসের জন্ম : চলল প্রচার, প্রস্তুতি। অবশ্য ১৮৬৪ সাল থেকেই আট ঘণ্টার কাজের দাবিতে শ্রমিকশ্রেণী ছিল মুখর। দিকে দিকে ‘আট ঘণ্টার শ্রম-সমিতি’ গড়ে উঠতে লাগল। ১৮৬৮ সালে আমেরিকার আইন সভা ‘আট ঘণ্টার কাজ’ বলে একটি আইনও পাস করল। কিন্তু কার্যকরী হল না সেই আইন। কার্ল মার্ক্স স্বাগত জানালেন এই আন্দোলনকে। ১৮৮৫ সালে ব্যাপকতর হল এই আন্দোলন। শুরু হল চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি। ধর্মঘটের পর ধর্মঘট। মিছিলের পর মিছিল। দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ল সংগ্রামের ডাক। শ্রমিক শ্রেণী সঙ্কল্পবদ্ধ। ১৮৮৬-র ১ মে থেকে কেউ আট ঘণ্টার বেশি কাজ করবে না। এল সেই ঐতিহাসিক দিন। ১৮৮৬ সালের ১ মে। পাঁচ লক্ষ শ্রমিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে প্রত্যক্ষভাবে ধর্মঘটে যোগ দিলেন। শাসকদল এই ঐক্যবদ্ধ সুবিশাল শ্রমিক সমাবেশ ও ধর্মঘট দেখে পিছিয়ে গেল। ৩ মে। ম্যাককর্মিক হার্ভেস্টার কারখানায় হল নির্মম পুলিশী আক্রমণ। প্রাণ হারালেন ছ’জন নিরস্ত্র শ্রমিক। এর পরের দিন। ৪ মে। হে মার্কেট স্কোয়ার। সুবিশাল প্রতিবাদ সভা। পুলিশ গুলি চালাল। শহীরে রক্তে রঞ্জিত হল হাতের নিশান। গ্রেপ্তার করা হল চারজন শ্রমিক নেতাকে। বিচারের নামে হল বিচারের প্রহসন। জারি হল ফাঁসির আদেশ। এঁরা হলেন আগস্ট স্পাইজ, পার্সনস, ফিসার ও এঞ্চেল। প্রতিবাদের ঝড় উঠল। সভা শোভাযাত্রায় ধিক্কারবাণী উচ্চারিত হল। ধ্বনিত হল শ্রমিকশ্রেণীর সংগ্রামের কণ্ঠ। প্রতিবাদ জানালেন জর্জ বার্নাড শ, মার্ক্সের কন্যা এলনর মার্ক্স। দেশকালের গণ্ডি পেরিয়ে এই নৃশংস বর্বরতার খবর পৌঁছল দুনিয়ার মেহনতী শ্রমজীবীর কানে। ১৮৮৯ সালে ১৪ জুলাই। ফরাসী বিপ্লবের কেন্দ্রস্থল প্যারিস। বাস্তিল পতনের শতবার্ষিকী। এই দিনেই প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের সম্মেলন। প্রথম দিনের অধিবেশনেই সর্বসম্মত প্রস্তাব ১৮৯০ সাল থেকে ১ মে প্রতিবছর শ্রমিকশ্রেণীর আন্তর্জাতিক সংহতি, সৌভ্রাত্র ও সংগ্রামের দিন বলে ঘোষিত হল। এভাবেই ১৮৮৬ সালের ঐতিহাসিক মে দিবস রূপান্তরিত হয় ১৮৯০ সালের আন্তর্জাতিক মে দিবসে।
দেশে দেশে মে দিবস : প্যারিস সম্মেলনে ঘোষণার পর থেকেই দেশে মে দিবস পালিত হয়। ১৮৯০ সালে গ্রেট ব্রিটেনে ১ মে’র পরিবর্তে ৪ মে হাইড পার্কে লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে প্রথম আন্তর্জাতিক মে-দিবস উদযাপিত হয়। আমেরিকায় ১৮৯০ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক মে দিবস পালিত হয় আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে ধর্মঘটের মাধ্যমে। ফ্রান্সে মিছিল ও সমাবেশের মধ্যে অনুষ্ঠানিকভাবে মে-ডে পালিত হয় ১৮৯০ সালে। জার শাসিত রাশিয়ায় ১৮৯৬ সালে মে দিবস উদযাপিত হয় ধর্মঘটের ভেতর দিয়ে। চীনে প্রথম মে দিবস পালিত হয় ১৯২৪ সালে। ডা. সান্ ইয়াৎ সেন ওই সমাবেশে ভাষণ দেন। হিটলারের উত্থানের শুরুতে ১৯৩৩ সালে জার্মানিতে কমিউনিস্টরা বেআইনী মে দিবস উদযাপন করেছিলেন। আজ এশিয়া-আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ল্যাটিন আমেরিকা, ছোট বড় সমস্ত দেশ জুড়ে মে দিবস পালিত হচ্ছে।
মে দিবসের তাৎপর্য : মে দিবস হল দুনিয়ার মেহনতী মানুষের সঙ্কল্প গ্রহণের দিন। এই সঙ্কল্প হল সামাজিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শ্রেণীবৈষম্যের বিলোপসাধন। পুঁজিবাদী দাসত্বশৃঙ্খল থেকে মুক্তির দৃঢ় অঙ্গীকার। মে দিবস শ্রমিকশ্রেণীর চিন্তা-চেতনায় এনেছে এক বৈপ্লবিক তাৎপর্য। লেনিন মে দিবসকে ব্যবহার করেছিলেন শ্রমিকশ্রেণীর বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের বলিষ্ঠ হাতিয়ার হিসেবে। তারই সার্থক পরিণতি ১৯১৭ সালের নভেম্বর বিপ্লবে। মে দিবস দুনিয়া জুড়ে শ্রমিক আন্দোলন ও মুক্তি সংগ্রামের ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ চক্রান্তের তীব্র প্রতিবাদ, ‍দুনিয়ার শ্রমিক এক হওয়ার উজ্জীবন মন্ত্র।
উপসংহার : ১৯৮৬ সালে ঐতিহাসিক মে দিবসের শতবর্ষ শেষ হয়েছে। মে দিবসের এই দীর্ঘ শতবর্ষের আলোয় অনেক অন্ধকার দূর হয়েছে। সংগ্রামী শ্রেণীর সামনে উন্মোচিত হয়েছে নতুন দিগন্ত। দৃঢ় হয়েছে শ্রমিক সংহতি। বিশ্বের এক- তৃতীয়াংশ মানুষ আজ রয়েছে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায়। কিন্তু এখনও জনসংখ্যার বৃহৎ অংশ পুঁজিবাদী দাসত্ব থেকে মুক্ত নয়। মুক্ত নয় সামন্ততান্ত্রিক শোষণ থেকে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আজও প্রবল, পরাক্রান্ত। এখনও তার নির্লজ্জ রণ-হুংকার থামে নি। তাই দুনিয়া জুড়ে মে দিবসের যে বিজয় অভিযান সেখানে মূর্ত হয়ে উঠেছে সমাজতান্ত্রের সপক্ষে ও পুঁজিবাদ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে শ্রমিকশ্রেণীর বৈপ্লবিক সংগ্রাম। এই সংগ্রামী চেতনা ও চরিত্রই শ্রমজীবীর ভূষণ। মে দিবস আজ আর শ্রমিকের কাজের ঘণ্টা কামানো দাবির আন্দোলন নয়। মে দিবস আজ দুনিয়ার মেহনতী মানুষের সংগ্রামের দিন, সৌভ্রাতৃত্বের দিন। সমাজতন্ত্র কায়েম করার শপথ গ্রহণের দিন। মে দিবস এখন শ্রমিকশ্রেণীর সামনে নতুন ঊষার স্বর্ণ দুয়ার। অনেক রক্তের বিনিময়ে পাওয়া দুর্লভ এক সম্পদ।