একজন ব্যক্তির একই সঙ্গে দুটি দেশের নাগরিকত্ব নেওয়াকে দ্বৈত নাগরিকত্ব বলা হয়। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই দ্বৈত নাগরিকত্বের বিধান রয়েছে। দ্বৈত নাগরিকত্বের জন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের নিরাপত্তা ও বহিরাগমন অনুবিভাগে আবেদন করতে হয়। এরপর মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নাগরিকত্ব আইন, বিধি ও পরিপত্র অনুসরণে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই শেষে দ্বৈত নাগরিকত্বের সনদপত্র ইস্যু কিংবা তার আবেদন বাতিল করা হয়। তবে বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিকত্বের বিধান অনুযায়ী সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তি এবং মিয়ানমারসহ কয়েকটি দেশের নাগরিকরা দ্বৈত নাগরিকত্ব পাবেন না। তাছাড়া সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদেরও দ্বৈত নাগরিকত্ব না দেওয়ার বিষয়ে প্রস্তাবনা রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন কারণেই দ্বৈত নাগরিকত্বের বিধান রাখা হয়েছে। যেমন বাংলাদেশের নাগরিক কোনও বাবা-মায়ের সন্তান যদি যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নিয়ে থাকে, তাহলে তাদের সন্তানটি ওই দেশের নিয়ম অনুযায়ী সেখানকার নাগরিকত্ব লাভ করবে। আবার জন্মনীতির কারণে ওই শিশুটি বাংলাদেশেরও নাগরিকত্ব লাভ করবে। প্রবাসীরা সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার কারণে নিজ দেশের নাগরিকত্বও হারাবেন না। এছাড়া মিয়ানমারসহ কয়েকটি দেশের নাগরিকরা বাদে কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে এমন দেশের যেকোনও নাগরিক দ্বৈত নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন। একইসঙ্গে দ্বৈত নাগরিকত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য দিলে কিংবা কোনও তথ্য গোপন করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাগরিকত্ব বাতিল ছাড়াও জরিমানা এবং কারাদন্ডের বিধান রয়েছে।
বাংলাদেশে দ্বৈত নাগরিকত্বের সনদ পাওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের নিরাপত্তা ও বহিরাগমন অনুবিভাগে ইংরেজিতে লেখা নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হয়। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আবেদন করা যাবে। ওই আবেদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশের পাসপোর্টের ফটোকপি, বিদেশে জন্ম নেওয়া ব্যক্তির নাগরিকত্ব সনদের ফটোকপি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহিরাগমন শাখা-৩ এর অনুকূলে পাঁচ হাজার টাকা জমা দেওয়ার চালানোর কপি, ২০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অ্যাফিডেভিট, পাসপোর্ট সাইজের ছয় কপি ছবি দিতে হবে। আবেদনপত্রের বাম পাশে (অ্যাটেস্টেশন) প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা কিংবা নোটারি পাবলিক কর্তৃক স্বাক্ষরিত হতে হবে। এসব কাগজপত্র দুই সেট করে জমা দিতে হবে। এরপর নাগরিকত্ব আইন, বিধি ও পরিপত্র অনুসরণে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দ্বৈত নাগরিকত্বের সনদপত্র ইস্যু কিংবা তার আবেদন বাতিল করা হয়ে থাকে। এজন্য কমপক্ষে ৬০ কার্যদিবস সময় নিয়ে থাকে মন্ত্রণালয়।
বৈবাহিক সূত্রেও বিদেশিদের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব সনদপত্র দেওয়া হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিদের আবেদন ডাকযোগে কিংবা সরাসরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদন করতে হবে। আবেদন দাখিলের পর একই নিয়ম অনুসরণ করে নাগরিকত্বের সনদ ইস্যু করা হয়। এক্ষেত্রে ট্রেজারি চালানের মূল্য দিতে হয় চার হাজার টাকা। এজন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ৯০ কার্যদিবস।
বাংলাদেশ স্থায়ী আবাসিক অধিকার সনদও দিয়ে থাকে বিদেশিদের। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিদের ডাকযোগে কিংবা সরাসরি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হয়। আবেদন দাখিলের পর নাগরিকত্ব আইন, বিধি ও পরিপত্র অনুসরণে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন এবং বিনিয়োগ বোর্ডের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই অধিকার সনদ ইস্যু করা হয়। এক্ষেত্রে ট্রেজারি চালানের মূল্য দিতে হয় সাত হাজার টাকা। এক্ষেত্রেও সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ৯০ কার্যদিবস।
বিনিয়োগকারী হিসেবেও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব সনদ নেওয়ার বিধান রয়েছে। আবেদনের নিয়ম এবং নাগরিকত্বের সনদপত্রও ইস্যু করা হয় একই নিয়মে। এক্ষেত্রেও সাত হাজার টাকার ট্রেজারি চালান দিতে হবে। এজন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ৯০ কার্যদিবস। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করারও বিধান রয়েছে। নির্দিষ্ট ফরমে নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করলে নাগরিকত্ব আইন, বিধি, পরিপত্র অনুসরণে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সনদপত্র ইস্যু করা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের বহিরাগমন অনুবিভাগের উপ-সচিব শিরীন রুবী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘’দ্বৈত নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে দেশের নাগরিকত্ব আইন, বিধি ও পরিপত্র অনুসরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। তবে মিয়ানমারসহ কয়েকটি দেশের নাগরিক হলে তারা দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ পাবে না। আর সার্কভুক্ত দেশগুলোর বিষয়েও একটি প্রস্তাবনা রয়েছে। যা মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন রয়েছে।’’