Category Archives: Uncategorized

শিক্ষক ও অভিভাবকের গল্প

ছাত্রের ফেলের খবর দেয়া শিক্ষকের সাথে ছাত্রের বাবার দারুণ কথোপকথন:

– আপনি কি খালেদ আলম ?

– জ্বি, বলছি।

– ফাহাদ আলম কি আপনার ছেলে?

– জ্বি, আপনি কে বলছেন?

– আমি আপনার ছেলের ইউনিভার্সিটি থেকে বলছি। মাহবুবুল হক। হেড অফ ডিপার্টমেন্ট।

– ও, আচ্ছা। কেমন আছেন, স্যার?

– জ্বি, ভালো। আপনার ছেলে সম্পর্কে কিছু কথা বলার ছিল। ও তো কিছুদিন আগে থার্ড সেমিস্টার শেষ করেছে। সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট প্রকাশ হয়েছে দুই দিন আগে। আপনার ছেলে দুই কোর্সে ফেল করেছে। আপনাকে কি বলেছে?

– জ্বি, বলেছে।

– আমাদের ইউনিভার্সিটিতে কিছু নিয়ম-কানুন আছে। ফেল করলে আমরা ছাত্রদের আবারও পরীক্ষায় বসে পাস করার সুযোগ দেই। এরপরও ফেল করলে ইউনিভার্সিটিতে রাখার নিয়ম নেই।

– তা এসব আমাকে কেন বলছেন?

থতমত খেয়ে গেলেন ও প্রান্তের ব্যক্তি।

– না, মানে, আমি বলছিলাম আপনার ছেলে ফেল করেছে। আপনার কি উচিত না তার পড়াশোনার প্রতি খেয়াল রাখা?

– আমাকেই যদি তার পড়াশোনার দায়ভার নিতে হয়, তাহলে আপনি কী জন্যে আছেন?

– না, মানে আমি বলছিলাম আপনি কাউন্সেলিং করতে পারেন, বোঝাতে পারেন।

– অবশ্যই আমি তার সাথে কথা বলতে পারি। কিন্তু শিক্ষক হিসেবে আপনি কি তার সাথে কথা বলেছেন?

– মানে? বুঝলাম না!

– আমি বলতে চাইছি, আমার ছেলে যে ফেল করল, গলদটা কোথায় বোঝার চেষ্টা করেছেন কি? দোষ পুরোটা কি ওর একার? আপনার কোনও দায়ভার নেই?

– কী বলতে চাইছেন আপনি?

– দেখুন, স্যার, খুব স্পষ্ট আর সহজ ভাষায় বলছি। এভাবে ছাত্রের ব্যর্থতায় সরাসরি মা-বাবাকে তলব করার আগে আপনাদের পাঁচবার ভাবা উচিত। পড়াশোনার জন্য ছেলেকে পাঠিয়েছি আপনাদের কাছে। তাকে পড়াতে না পারার, পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ তৈরি করতে না পারার, সফলতার পথ দেখাতে না পারার ব্যর্থতাটুকু পুরোপুরি আপনাদের। বাবা-মা কোনও শিক্ষক নন যে এসব পালন করবেন। এ দায়িত্বটুকু পালনের ভার আপনাদের উপরে দেয়া হয়েছে। কই, বেতন তো ঠিকই নেন। ছাত্রের সফলতারও ভাগ চান। তাহলে ব্যর্থতার ভার কেন শুধু ছাত্র আর মা-বাবার ওপরে চাপবে?

– আমি আসলে ওভাবে বুঝাতে চাইনি।

– কোনওভাবেই বোঝানোর দরকার পড়ত না, যদি যথাযথ শিক্ষকের দায়িত্ব আপনারা পালন করতে পারতেন।

– আমি রাখছি।

– দাড়ান । আপনার বাবার ফোন নম্বরটা পাঠিয়ে দেন।

– মানে? কেন?

– ব্যর্থ ছাত্রের পিতাকে ফোন করে যে দায়িত্ব আপনি পালন করেছেন, ব্যর্থ শিক্ষকের বাবাকে ফোন করে আমিও একই দায়িত্ব পালন করতে চাই!

পুলিশ বিষয়ক পরিভাষা

পুলিশ বিষয়ক পরিভাষা

Police State

পুলিশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র হচ্ছে ‘Police State’। যেখানে সরকারবিরোধী পক্ষকে পুলিশের সাহায্যে দমন করা হয়। এটা অনেকটা Totalitarian রাষ্ট্রের মতো।

Totalitarian State

Totalitarian State বলতে এমন একটা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে বোঝায়, যেখানে একটিমাত্র রাজনৈতিক দল থাকে। এখানে জনসাধারণকে রাষ্ট্রের প্রয়োজনের নিকট উৎসর্গীকৃ বলে বিবেচনা করা হয়।

Ambush

অতর্কিত আক্রমণার্থে গোপন স্থানে অবস্থান করাকে Ambush বলা হয় (to lay concealed in wait to attack by surprise)।

Curfew

আভিধানিক অর্থে Curfew হচ্ছে একটা ইঙ্গিত বা সময়, যার পর জনসাধারণ অবশ্যই ঘরে অবস্থান করবে। অপরদিকে Code of Criminal Procedure (CrPC)-এর ২৪ নং সেকশন অনুযায়ী Curfew হচ্ছে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক জারিকৃত একটি আদেশ, যার ফলে একটি নির্দিষ্ট এলাকার জনসাধারণ যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে ঘর থেকে বের হতে পারে না।

FIR বা এজাহার

FIR হচ্ছে First Information Report CrPC-এর ১৫৪ ও ১৫৫ ধারা অনুযায়ী কোনো অপরাধের বিষয়ে থানায় রিপোর্ট করাকে FIR বলা হয়। ফৌজদারী মামলার ক্ষেত্রে FIR একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে কাজ করে। প্রাথমিক তথ্যসমূহ অবশ্যই লিখে রাখতে হবে এবং সংবাদদাতা কর্তৃক স্বাক্ষরিত হতে হবে। FIR-এর গুরুত্বপূর্ণ উপাদানসমূহ হলো :
  1. সময়ের প্রেক্ষিতে এটা প্রথমে হতে হবে।
  2. এটা নিশ্চিত হতে হবে এবং কেবল জনশ্রুতি হলে চলবে না।
  3. এটা OC-এর নিকট প্রদান করতে হবে।
  4. এটা আমলযোগ্য অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট হতে হবে।
  5. এটা এমন পর্যায়ে হতে হবে যেন Police তদন্ত শুরু করতে পারে।
  6. এটা অবশ্যই লিখিত ও উত্থাপনকারী কর্তৃক স্বাক্ষরিত হতে হবে।

চার্জশিট (Charge Sheet)

চার্জশিট হচ্ছে এক ধরনের অভিযোগ পত্র। থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কোনো অপরাধীর অপরাধ তদন্ত শেষে যদি এমন অবস্থা দেখেন যে অপরাধ সংঘটিনের পক্ষে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ রয়েছে তখন তিনি অভিযোগপত্র তৈরি করেন এবং ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট পেশ করেন।

Inquiry এবং Investigation-এর পার্থক্য

বাংলায় উভয় শব্দের অর্থ তদন্ত। কিন্তু দুটির মধ্যে ব্যবহারগত কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন- ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক CrPC-এর অধীন পরিচালিত মামলার ক্ষেত্র ব্যতীত অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে তদন্তকে Inquiry বলা হয়। যেমন- বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো ঘটনা তদন্তের জন্য Inquiry Committee গঠন করা হয়। Inquiry তে সাধারণত অপরাধী শনাক্ত করা হয়।
অপরদিকে Investigation হচ্ছে CrPC-এর অধীন বিচারাধীন কোনো মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণ ও তথ্যাদি উদ্ভাবনের জন্য পুলিশ অফিসার বা অন্য কেউ কর্তৃক পরিচালিত তদন্ত। Inquiry-এর ক্ষেত্রে অপরাধী শনাক্তকরণ এবং তার অপরাধের তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা হয়।

Warrant

ওয়ারেন্ট শব্দের অর্থ গ্রেপ্তারি পরওয়ানা। বিচারক কর্তৃক কাউকে গ্রেপ্তার করার উদ্দেশ্যে পুলিশের প্রতি লিখিত আদেশনামাই হলো Warrant।
 

Camouflage (ক্যামোফ্লেজ)

শাব্দিক অর্থে Camouflage বলতে বোঝায় ছদ্মবেশ, আবরণ প্রভৃতি দ্বারা শত্রুকে প্রতারিত করা (any device to deceive an enemy)। প্রাসঙ্গিকভাবে ক্যামোফ্লেজ বলতে বোঝায় সৈন্যদল বা অস্ত্র শস্ত্র লুকিয়ে রাখা।

রিমান্ড

তদন্তের স্বার্থে কোর্ট আসামিকে পুলিশের নিকট নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হস্তান্তর করাকে ‘রিমান্ড’ (Remand) বলে।

জানিম

পুলিশী হেফাজত থেকে আসামিকে নির্ধারিত শর্তসাপেক্ষে নির্ধারিত তারিখে হাজির করানোর অঙ্গীকার জামিনদারের নিকট সম্পন্ন করাকে জামিন বলা হয়। জামিন নিজ মুচলেকায়ও দেয়া যায়।

Arrest (গ্রেফতার)

ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৬(১) ধারা মতে, কথা বা কার্যদ্বারা আত্মসমর্পণ করা না হলে পুলিশ অফিসার বা গ্রেপ্তারকারী অপর কোনো ব্যক্তি গ্রেপ্তার করার সময় যাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে তার দেহ স্পর্শ বা আটক করবেন।

৪২০ ধারা

৪২০ ধারা বলতে CrPC-এর Section 420-কে বোঝানো হয়। প্রতারণা (Cheating) এবং অসদুপায়ে (dishonestly) কারো সম্পত্তি দখল করলে এ ধারা কার্যকর হয়।

অপরাধ স্বীকারোক্তি (Confession)

শারীরিক নির্যাতন, ভয়ভীতি প্রদর্শন বা প্ররোচনা ব্যতীত কোনো অপরাধীকর্তৃক স্বেচ্ছায় নিজের অপরাধের কথা স্বীকার। সাক্ষ্য আইনের ২৪-৩০ ধারায় কোন কোন অবস্থায় আসামির অপরাধস্বীকারোক্তি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য তা বলা হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটকে আসামির অপরাধ-স্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধ করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে এবং উক্ত কার্যবিধির ৩৬৪ ধারায় তা লিপিবদ্ধ করার পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছে। আদালত যদি মনে করেন যে, আসামির অপরাধস্বীকারোক্তি আইনের উপরিউক্ত যে কোনো বিধান লঙ্ঘন করে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, তবে আদালত মামলা বিচারে তা বিবেচনায় গ্রহণ নাও করতে পারেন।

আটক (Detention)

গ্রেপ্তার করার পর কোনো ব্যক্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁর ব্যক্তি স্বাধীনতাহরণ। ফৌজদারি কার্যবিধির ৬১ ধারার বিধান-অনুসারে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা বিনা পরওয়ানায় কাউকে গ্রেপ্তার করলে তাঁকে সামগ্রিক পরিস্থিতির বিবেচনায় যুক্তিসংগত সময় অপেক্ষা অধিককাল আটক রাখবেন না এবং ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে যাবার সময় বাদ দিয়ে চব্বিশ ঘণ্টার বেশি হবে না। পুলিশ কর্মকর্তা আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্তের পর অভিযোগ দায়ের করতে ব্যর্থ হলে অথবা ম্যাজিস্ট্রেট তাঁকে পুনরায় আটক রাখার আদেশ না দিলে তাঁকে ছেড়ে দিতে হয়।

জামিন (Bail)

বিচারের অপেক্ষায় থাকাকালে কিংবা অপরাধহেতু দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিরুদ্ধে আপিল করার সময়ে আইনানুগ হেফাজত হতে কোনো ব্যক্তিকে পুলিশ বা আদালতকর্তৃক মুক্তি দেওয়া। জামিন মঞ্জুর করা উচিত না অনুচিত এবং কী পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে তা করা যাবে, সে বিষয়ে বিচারকদের স্ববিবেচনা প্রয়োগের ব্যাপক ক্ষমতা রয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৬-৫০২ ধারায় জামিন ও জামিনদার সম্পর্কে বিধান রয়েছে।

বাদী, ফরিয়াদি (Complainant)

অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে যিনি অভিযোগ উত্থাপন করেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ২০০ ধারায় যিনি মামলা করে থাকেন।

বিবাদী (Defendant)

যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। বাদী আদালতে দাখিলি আরজিতে যে ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতিকার প্রার্থনা করেন তাঁকে অথবা উহাকে বিবাদী বলা হয়।

পাবলিক প্রসিকিউটর

ফৌজদারি কার্যবিধির ৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, পাবলিক প্রসিকিউটর বা সরকারি অভিযোক্তা অর্থ ফৌজদারি আইনের ৪৯২ ধারা অনুসারে নিযুক্ত যে কোনো ব্যক্তি এবং সরকারি অভিযোক্তার নির্দেশক্রমে কার্যরত ব্যক্তি উহার অন্তর্ভুক্ত হবেন। পুলিশ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যে সমস্ত মামলা গৃহীত হয় সে সকল মামলার জন্য সরকারি উকিল নিয়োগ করা হয়। ফৌজদারি মামলায় সরকারের পক্ষ হতে যে উকিল নিয়োগ করা হয়, তাকে সরকারি অভিযোক্তা বলা হয়।

স্ব-উদ্যোগ (Sou moto)

আদালত ন্যায়বিচারের স্বার্থে কোনো কোনো বিষয়ে স্ব-উদ্যোগে কোনো মামলার কার্যক্রম শুরু এবং নিষ্পত্তি করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, দেওয়ানি কার্যবিধির ১১৫ ধারা অনুসারে, যদি নিম্ন আদালতের কোনো কার্যক্রমের ক্রটি উচ্চ আদালতের দৃষ্টিগোচর হয়, সেক্ষেত্রে আদালত স্ব-উদ্যোগে তদ্রুপ ক্রটি সংশোধন করতে পারেন।

বাংলাদেশ পুলিশ বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান – ৬ষ্ঠ পর্ব

বাংলাদেশ পুলিশের উল্লেখযোগ্য শাখা

বাহিনী প্রধান
স্পেশাল ব্রাঞ্চ (SB) এডিশনাল আইজি (Additional IG)
সিআইডি (CID) সিআইডি (CID)
মেট্রোপলিটন পুলিশ (Metropolitan Police) কমিশনার (Commissioner)
র‌্যাব (RAB) মহাপরিচালক (General Director)
রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) (GRP) ডিআইজি (DIG)
আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ডিআইজি (DIG)
পুলিশ ইন্টারনাল ওভারসাইট ডিআইজি (DIG)
ইমিগ্রেশন পুলিশ ডিআইজি (DIG)
সোয়াট ডিআইজি (DIG)
বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক ডিআইজি (DIG)
হাইওয়ে পুলিশ ডিআইজি (DIG)
এসএএফ (আর্মড ফোর্স) এসপি (SP)
ট্যুরিস্ট পুলিশ
শিল্পাঞ্চল পুলিশ ডিআইজি (DIG)
ক্রিমিনাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (CIU) ডিআইজি (DIG)
নৌ পুলিশ ডিআইজি (DIG)
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (PBI) ডিআইজি (DIG)
স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন (SPB) ডিআইজি (DIG)

বিবিধ

বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক প্রকাশিত সাপ্তাহিক পত্রিকাটির নাম কি?
— ডিটেকটিভ

‘ডিটেকটিভ’ প্রথম কবে প্রকাশিত হয়?
— ১৯৬০ সালে।

আনআর্মড পুলিশ বা নিরস্ত্র পুলিশ বলতে কি বোঝায়?
— বিশেষ সশস্ত্র
বাহিনীতে নিযুক্ত নয় এরকম পুলিশ।

আর্মড পুলিশ কারা?
— পুলিশ লাইনে
নিযুক্ত বা এসএএফ-এর সদস্যবৃন্দ।

কয়েকজন পুলিশের নাম উল্লেখ করুন যারা
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিবেবে পরিচিত

আবুল খায়ের মুসলেহ উদ্দিন নাটক, গল্প, উপন্যাস
ধীরাজ ভট্টাচার্য চলচ্চিত্র নায়ক, লেকক
নওশাদ খন্দকার নাটক, গান
আবদুল খালেক নাটক, গান
আবু ইসহাক গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ

‘আমি যখন পুলিশ ছিলাম’ এর লেখক কে?
— ধীরাজ ভট্টাচার্য

পুলিশ
স্টেট কি?

— যখন কোনো রাষ্ট্রে নাগরিকগণ মৌলিক স্বাধীনতা (স্বাধীন মতামত প্রকাশ,
চিন্তা ও বিশ্বাস) হতে বঞ্চিত হয় তখন তাকে স্টেট বলা হয়।

পুলিশ
কর্মকর্তা আবুল খায়ের মোসলেহ উদ্দিনের কয়েকটি গ্রন্থের নাম লিখুন

— চিরকুট,
শালবনের রাজা, নেপথ্য নাটক, নল খাগড়ার সাপ, নারিন্দা লেন।

আলোচিত রুবেল
হত্যা মামলায় কোন পুলিশ অফিসারের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়?

— পুলিশ অফিসার এস
আকরাম।

যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশ বাহিনী কবে গঠিত হয়?
— ১৮৩০ সালে।

বিচারকার্যের ক্ষেত্রে পুলিশের হাতে কি কি থাকে?
— ক. চার্জশীট –
এটি পাঠালে মামলা শুরু হয়।
— খ. ফাইনাল রিপোর্ট – এটি পাঠালে মামলা খারিজ হয়।

জাপানি পুলিশ চোরকে কি বলে সম্বোধন করে?
— দোব্রোবো সান (অর্থাৎ চার
সাহেব)

সরকার পুলিশ বাহিনীর সদস্যের ওপর নজরদারী করার লক্ষ্যে নতুন কোন
গোয়েন্দ ইউনিট গঠনের কাজ শুরু করেছে?

— কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স ইউনিট।

ক্রাইম কনফারেন্স কি?
— পুলিশ বাহিনী নিজেদের উন্নয়নে ও অপরাধ
কমানোর জন্য মাসিক যে সম্মেলন করে তাকে মাসিক ক্রাইম কনফারেন্স বলে।

ব্রিটেনে প্রথম কবে পুলিশ বাহিনী গঠন করা হয়?
— ব্রিটিশ প্রথম
প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ওয়ালপোলের আগ্রহে ১৮২৯ সালে পুলিশ বাহিনী গঠনের প্রস্তাব
পার্লামেন্টে পাস হয়।

বাংলাদেশে পুলিশ বাহিনীতে নির্বাচনের মাপকাঠি
কি?

— দৈহিক উচ্চত, শারীরিক বিকাশ।

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে
‘কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (CTTC)’ ইউনিট গঠিত হয় কবে?

— ১৬
ফেব্রুয়ারি ২০১৬।

বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা

নাম পূর্ণরূপ যে সংস্থার গোয়েন্দা
অপরাধ তদন্ত বিভাগ (CID) Criminal Investigation Department (CID) বাংলাদেশ পুলিশ
বিশেষ শাখা (SB) Special Branch (SB) বাংলাদেশ পুলিশ
ক্রিমিনাল ইন্টেলিজেন্স অ্যানালাইসিস ইউনিট Criminal Intelligence Analysis Unit বাংলাদেশ পুলিশ
ডিটেকটিভ অ্যান্ড ক্রিমিনাল ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ Detective and Criminal Intelligence Branch ঢাকা মহনগর পুলিশ
র‌্যাব ইন্টেলিজেন্স উইং RAB Intelligence Wing র‌্যাব
ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (FIU) Financial Intelligence Unit বাংলাদেশ ব্যাংক
সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (CIU) Central intelligence Unit জাতীয় রাজস্ব বোর্ড
প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (DGFI) Directorate General of Forces Intelligence সামরিক বাহিনী
জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (NSI) National Security Intelligence বাংলাদেশ সরকার
সামরিক গোয়েন্দা শাখা (বিভাগ) (DMI) Directorate of Military Intelligence সামরিক বাহিনী
ডিরেক্টরেট অব নেভাল ইন্টেলিজেন্স Directorate of Neval Intelligence বাংলাদেশ নৌবাহিনী
অফিস অব এয়ার ইন্টেলিজেন্স Office of Air Intelligence বাংলাদেশ বিমানবাহিনী
বর্ডার সিকিউরিটি ব্যুরো Border Security Bureau বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)

See More…..

বাংলাদেশ পুলিশ বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান – ৫ম পর্ব

বাংলাদেশ কোস্টগার্ড

বাংলাদেশে কবে কোস্টগার্ড গঠন করা হয়?
— ১৯৯৪ সালের ১২ ডিসেম্বর। আইন পাস হয়- সেপ্টেম্বর ১৯৯৪।

কোস্টগার্ড বাহিনী গঠনের উদ্দেশ্য কি?
— উপকূলের নিরাপত্তা ও নৌযানগুলোকে জলদস্যুদের হামলা থেকে রক্ষা করা।

বাংলাদেশের উপকূলীয় সীমান্তের দৈর্ঘ্য কত?
— ৭১০ কিলোমিটার।

কোস্টগার্ডের কার্যক্রম শুরু হয় কবে?
— ২০ ডিসেম্বর ১৯৯৫।

বাংলাদেশ কোস্টগার্ড-এর সদর দপ্তর কোথায় অবস্থিত?
— ঢাকায়।

কোস্টগার্ডের আঞ্চলিক অফিস কয়টি ও কোথায় অবস্থিত?
— ২টি; চট্টগ্রাম ও খুলনায়।

অপারেশন জাটকা কি?
— জাটকা নিধন বন্ধে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড কর্তৃক পরিচালিত অভিযান।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)

বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর)- এর বর্তমান নাম কি?
— বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (BGB)

BGB-এর পূর্ণরূপ কি?
— Border Guard Bangladesh

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন জাতীয় সংসদে পাস হয় কবে?
— ৮ ডিসেম্বর ২০১০।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করেন কবে?
— ২০ ডিসেম্বর ২০১০।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইনে বিদ্রোহের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি কি?
— মৃত্যুদণ্ড।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ কবে যাত্রা শুরু করে?
— ২৩ জানুয়ারি ২০১১।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের প্রথম নাম কি ছিল?
— রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন (প্রতিষ্ঠা ২৯ জুন ১৭৯৫)

বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) গঠিত হয় কবে?
— ৩ মার্চ ১৯৭২।

বাংলাদেশ রাইফেলস-এর প্রতীক কি?
— বিশেষ বেজমেন্টে আবদ্ধ ক্রস রাইফেলের ওপর শাপলা।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-এর সদর দপ্তর কোথায়?
— পিলখানা, ঢাকা।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে জাতীয় পতাকা প্রদান করা হয় কত সালে?
— ৩ মার্চ ১৯৮০।

মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-এর কতজন সদস্যকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়?
— ২ জন (বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্সনায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ ও বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্সনায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ)।

মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য এ বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত সদস্য সংখ্যা কতজন?
— ১৪৯ জন (২ জন বীরশ্রেষ্ঠ, ৭ জন বীরউত্তম, ৩৬ জন বীরবিক্রম ও ১০৪ জন বীরপ্রতীক)

মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর কতজন সদস্য শহীদ হন?
— ৮১৭ জন।

ঢাকার পিলখানায় মর্মান্তিক বিডিআর বিদ্রোহ সংঘটিত হয় কবে?
— ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (BGB) -এর সদস্যকে বীরত্ব ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য কতটি ক্যাটাগরিতে পদক দেয়া হয়?
— ৪টি। ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদক’, ‘প্রেসিডেন্ট বর্ডার গার্ড পদক’, ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (সেবা) পদক’, ও ‘প্রেসিডেন্ট বর্ডার গার্ড (সেবা) পদক’।

নাম সময়কাল
রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন ১৭৯৫ – ১৮৬১
ফ্রন্টিয়ার গার্ডস ১৮৬১ – ১৮৭৯
স্পেশাল রিজার্ভ কোম্পানি ১৮৭৯ – ১৮৯১
বেঙ্গল মিলিটারি-পুলিশ ১৮৯১ – ১৯২০
ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেলস ১৯২০ – ১৯৪৭
ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর) ১৯৪৭ – ১৯৭২
বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিয়ার) ১৯৭২ – ২০১১
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ২০১১ – বর্তমান

আনসার ও ভিডিপি

আনসার বাহিনী কবে গঠিত হয়?
— ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮

আনসার ও ভিডিপি দিবস কবে পালিত হয়?
— ১৬ ফেব্রুয়ারি।

VDP-এর পূর্ণরূপ কি?
— Village Defense Party.

আনসার আইন পাস হয় কবে?
— ১৯৪৮ সালে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদে)

বাংলাদেশ আনসার রুলস প্রথম প্রণীত হয় কবে?
— ২০ আগস্ট ১৯৪৮

১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে আনসার বাহিনীর কতজন সদস্য শহীদ হন?
— ৬৪৭ জন।

মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ আনসার বাহিনীর কতজন সদস্য বিশেষ খেতাবে ভূষিত হন?
— ১৪ জন (৬ জন বীরবিক্রম, ৮ জন বীরপ্রতীক)।

বাংলাদেশ আনসার বাহিনীতে মহিলা নিয়োগ করা হয় কবে থেকে?
— ১৯৭৬ সাল থেকে।

১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আনসার একাডেমির বর্তমান নাম কি?
— আনসার ভিডিপি একাডেমি।

‘বাংলাদেশ আনসার বাহিনী আইন’ এবং ‘ব্যাটালিয়ন আনসার আইন’ পাস হয় কবে?
— ১৯৯৮ সালে।

বাংলাদেশের আনসার বাহিনীর সুবর্ণ জয়ন্তী পালিত হয় কবে?
— ১৯৯৮ সালে।

বাংলাদেশ পুলিশ বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান – ৪র্থ পর্ব

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পুলিশ

(তথ্য আগস্ট ২০২০ পর্যন্ত)

বাংলাদেশ পুলিশ বিদেশে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে নিয়োজিত হয়ে কার তত্ত্বাবধানে কাজ করে?
— জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী।

বর্তমানে শান্তিরক্ষা মিশনে অবদানের দিক থেকে বাংলাদেশ পুলিশের অবস্থান কত?
— চতুর্থ।

বাংলাদেশ পুলিশ এ যাবৎ জাতিসংঘের কতটি মিশনে অংশ নিয়েছে?
— ২২টি।

বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের কত জন সদস্য কাজ করছে?
— ৬৫৪ জন।

বসনিয়া-হার্জেগোভিনায় নিয়োজিত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে যোগ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের দলটিকে পাঠানো হয় কবে?
— ১৮ আগস্ট ১৯৯২।

কতজন পুলিশ সদস্য ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত জাতিসংঘ মিশন সম্পন্ন হয়েছে?
— ১৯,৬৬৮ জন।

হাইতি মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের দলটিকে পাঠানো হয় কবে?
— ২ অক্টোবর ১৯৯৪।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মশনে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ পুলিশের কত সদস্য শহিদ হন?
— ২১ জন।

বসনিয়ায় এক বছরের জন্য পুলিশ মনিটর হিসেবে দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ পুলিশের ১০ জন অফিসারকে পাঠানো হয় কবে?
— ১৮ অক্টোবর ১৯৯৬।

অ্যাঙ্গোলা শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের কতজন সদস্য প্রেরিত হয়?
— ৫ জন।

অ্যাঙ্গোলা শান্তিরক্ষা মশনে পুলিশ দলকে কবে পাঠানো হয়?
— ২১ অক্টোবর, ১৯৯৬।

সর্বশেষ কোথায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে নিয়োগ করা হয়?
— মালি।

বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশ জাতিসংঘের কতটি শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত আছে?
— ৪টি দেশে।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ মহিলা পুলিশ দল কোন দেশে অংশগ্রহণ করে?
— পূর্ব তিমুর।

বাংলাদেশ মহিলা পুলিশ দল কবে পূর্ব তিমুরে যাত্রা করে?
— ৭ ডিসেম্বর ২০০০।

বাংলাদেশ পুলিশ কবে ইন্টারপোলের সদস্য হয়?
— ১৯৭৬ সালে।

আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা

ইন্টারপোল (Interpol) কি?
— আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা।

ইন্টারপোল নামকরণ হয়েছে কিভাবে?
— Interpol নামকরণ করা হয়েছে International এর Inter এবং Police এর Pol নিয়ে।

আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থাটির পুরো নাম কি?
— International Criminal Police Organization সংক্ষেপে ICPO

ইন্টারপোল কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?
— ১৯২৩ সালে।

ইন্টারপোলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দেশ কতটি?
— ৫০টি।

প্রতিষ্ঠালগ্নে ইন্টারপোলের সদর দপ্তর কোথায় ছিল?
— অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায়।

ইন্টারপোলের সদর দপ্তর কখন ভিয়েনা থেকে প্যারিসে স্থানান্তর করা হয়?
— দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়।

বর্তমানে ইন্টারপোলের সদর দপ্তর কোথায়?
— ফ্রান্সের লিওঁতে।

ইন্টারপোল পরিচালিত হয় কোন কমিটির মাধ্যমে?
— ‘জেনারেল অ্যাসেম্বলি’ নামক একটি কমিটির মাধ্যমে।

ইন্টারপোলের প্রধান কাজগুলো কি কি?
— সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অপরাধ বিষয়ক বিবিধ তথ্য, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, মাদকদ্রব্যের চোরাচালান এবং অন্যান্য আন্তঃমহাদেশীয় অপরাধ সম্পর্কিত খবরাখবর বিনিময়।

বাংলাদেশ পুলিশ কবে ইন্টারপোলের সদস্য হয়?
— ১৯৭৬ সালে।

ICPC কি?
— একটি আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা।

ইন্টারপোলের অফিসিয়াল ভাষা কয়টি ও কি কি?
— চারটি। যথা- ইংরেজি, ফরাসি, স্প্যানিশ ও আরবি।

ইন্টারপোলের সদস্য দেশের সংখ্যা কত?
— ১৯৪টি।

ইন্টারপোল কর্তৃক প্রকাশিত পত্রিকার নাম কি?
— International Criminal Police Review

স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশ

ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইনের স্মৃতিসৌধটি কি উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়?
— ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকবাহিনীর আক্রমণে নিহত পুলিশের স্মৃতির উদ্দেশ্যে।

রাজারবাগ পুলিশ লাইনের স্মৃতিসৌধের নির্মাণ কাজ কখন শেষ হয়?
— ১৯৮৯ সালে।

রাজারবাগ পুলিশ লাইনের স্মৃতিসৌধটির স্থপতি কে?
— মোস্তফা হারুন কদ্দুস হিলি।

স্বাধীনতা যুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত পুলিশ কতজন?
— ২ জন (বীরপ্রতীক)।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)

সন্ত্রাস দমনে এলিট বাহিনী র‌্যাব কবে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে?
— ২৬ মার্চ ২০০৪।

কোন অধ্যাদেশ সংশোধন করে র‌্যাব গঠন করা হয়?
— ১৯৭৯ সালের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন অধ্যাদেশ।

র‌্যাব কার অধীনে গঠন করা হয়?
— স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ পুলিশের অধীনে।

কোন কোন বাহিনীর সমন্বয়ে র‌্যাব গঠিত?
— সেনা, নৌ, বিমান, পুলিশ, আনসার, বিজিবি ও কোস্টগার্ড।

র‌্যাব কবে থেকে পূর্ণাঙ্গভাবে অপারেশন শুরু করে?
— ২১ জুন ২০০৪।

র‌্যাবের স্নোগান কি?
— বাংলাদেশ আমার অহংকার।

RAB-এর পূর্ণরূপ কি?
— Rapid Action Battalion

র‌্যাব বিধি অনুসারে কোন বাহিনীর কত শতাংশ জনবল নিয়ে র‌্যাব গঠিত হবে?
— পুলিশ ৪৪%, সশস্ত্রবাহিনী ৪৪%, বিজিবি ৬%, আনসার ও বিজিপি ৪%, কোস্টগার্ড ১% এবং বেসামরিক প্রশাসন থেকে ১%।

র‌্যাবের প্রথম মহাপরিচালক কে?
— আনোয়ারুল ইকবাল।

মে দিবসের পটভূমি ও আজকের শ্রমিক

মে দিবসের পটভূমি ও আজকের শ্রমিক

শ্রমজীবী মানুষের প্রেরণা ও উৎসবের দিন ১ মে। দিনটি প্রেরণার হলেও এর পিছনে
লুকিয়ে আছে এক রক্তাক্ত করুণ ইতিহাস। ন্যায্য অধিকার আদায়ে শ্রমিকদের আত্মহুতি
দানের এই গৌরব দীপ্ত ইতিহাস, যা যুগ যুগ ধরে শ্রমিকদের উজ্জীবিত করে তাদের দাবি
আদায়ের সংগ্রামে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিশ্বের শ্রমিক সমাজ তাদের
দাবি-দাওয়ার যে প্রতিফলন ঘটিয়েছিল তা আজো পরিপূর্ণতা লাভ করেনি। এখনে তাদের
দাবি-দাওয়ার ৫০ ভাগও বাস্তবায়িত হয়নি। আজকের এই আধুনিক যুগেও শ্রমিকরা হচ্ছে
তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। ধনিক শ্রেণী আজো শ্রমিকের শোষণের নীতিতে অটল
রয়েছে। তাই প্রতি বছর শ্রমিক দিবস পালিত হলেও শ্রমিকের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন
নেই।


পটভূমি :
ঢালাই শ্রমিকদের তরুণ নেতা এইচ সিলভিসের নেতৃত্বে নেতা এইচ সিলভিসের
নেতৃত্বে ‘ন্যাশনাল লেবার ইউনিয়ন’ ৮ ঘণ্টা কর্ম দিবসের দাবিতে ১৮৮৬ সালের ১ মে
আমেরিকায় ধর্মঘটের ডাক দেয়। এ ধর্মঘটের প্রধান কেন্দ্র ছিল শিকাগোতে। ১ মে
শিকাগোকে কেন্দ্র করে প্রায় সাড়ে তিন লাখ শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে
মিশিগান অ্যাভিনিউ’র মিছিলে যোগদানের প্রস্তুতি নেয় এবং শান্তিপূর্ণ ও সাফল্যের
সাথে ১ মে’র ধর্মঘট পালিত হয়। ২ মে ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন। ৩ মে ধর্মঘট আরো
ব্যাপক আকার ধারণ করে। ৩ মে ম্যাককমিক ফসল কাটার শ্রমিকরা শ্রমিকসভা শুরু করে।
সভা চলাকালে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। ঘটনাস্থলে ৬ জন নিহত ও বহু আহত হয়। এ
হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ৪ মে হে মার্কেট চত্বরে বিশাল শ্রমিক সমাবেশ হলে সেখানেও
পুলিশের বেপরোয়া লাঠিচার্জ ও গুলিতে নিহত হয় ৪ জন শ্রমিক ও গ্রেফতার হয় ১৬ জন।
পরবর্তী সময়ে প্রহসনের বিচারে আরো ৪ জনকে ফাঁসি দেয়া হয়। নারকীয় এই হত্যাযজ্ঞের
মাধ্যমে গোটা বিশ্বের শ্রমিকের অধিকারকে নতুন মাহাত্ম্য এনে দেয়। ১৮৮৯ সালের ১৪
জুলাই এঙ্গেলস- এর নেতৃত্বাধীন দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠা কংগ্রেসে ৮ ঘণ্টা
শ্রম দিবস আদায় এবং শিকাগোর শহীদ শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও আন্তর্জাতিক
সংহতি প্রকাশের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই থেকে ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রম
দিবস হিসেবে সারা দুনিয়ায় পালিত হয়ে আসছে।

শ্রমিক আন্দোলনের শুরু যেভাবে :
শ্রমিক শ্রেণির প্রথম দিককার সংগ্রাম ছিল আজকের
সংগ্রাম থেকে আলাদা ধরনের। ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের সময় কাল ধরা হয় ১৭৬০ থেকে
১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমেই যান্ত্রিক যুগের সূচনা হয়।
শ্রমিকেরা মনে করত কল-কারখানা তাদের দুঃখ-কষ্টের মূল কারণ। তাই ১৭৬০-এর দশকে তারা
কলভাঙ্গার আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন ‘লেডউড’ নামক একজন সুতাকল
শ্রমিক। পর্যায়ক্রমে ১৮৩০ সাল পর্যন্ত এই আন্দোলন চলে। এর আন্দোলন পরিচালনার জন্য
শ্রমিকশ্রেণি ট্রেড ইউনিয়নের মাধ্যমে সংগঠিত হতে থাকে। ১৭৯৯-১৮০০ সালে
ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টে ট্রেড ইউনিয়ন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৮৩০-১৮৪৭ সাল
পর্যন্ত নানা ধরনের আইন তৈরি করে ট্রেড ইউনিয়নকে অকেজো করে রাখার চেষ্টা করা হয়।
তথ্যে মে দিবস
  • দৈনিক ৮ ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতে প্রথম আন্দোলন হয়- যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে।
  • দৈনিক ৮ ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতে ধর্মঘট আহ্বান করে- যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল
    লেবার ইউনিয়ন।
  • শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন-এইচ সিলিভিস।
  • ন্যাশনাল লেবার ইউনিয়ন আমেরিকায় ধর্মঘটের ডাক দেয়- ১ মে ১৮৮৬।
  • দৈনিক ৮ ঘণ্টা কর্ম দিবসের দাবি আদায় হয়- ১৪ জুলাই ১৮৮৯।
  • ১৮৮৬ সালের শ্রমিক আন্দোলনের ব্যাপ্তি ছিল-৩ দিন (১ মে থেকে ৩ মে)।
  • ১৮৮৬ সালের ১ মে থেকে ৩ মে পর্যন্ত শ্রমিক আন্দোলন দমনে পুলিশের গুলিতে নিহত
    হয়- ১০ জন।
  • মে দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়- ১৪ জুলাই ১৮৮৯।
  • বিশ্বব্যাপী মে দিবস পালিত হয়ে আসছে- ১৮৯০ সাল থেকে।
  • প্রথম শ্রম আইন প্রণীত হয়- ১৮৮৯ সালে।
  • ১৮৯০ সালে প্রথম মে দিবস পালিত হয়- যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে।
আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায় : সাইলেসিয়ায় তাঁত শ্রমিকরা অমানুষিক অত্যাচার নিপীড়ন, নির্যাতনের শিকার হয়ে
শ্রেণিশত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। ১৮৪৪ সালের ৫ জুন সরকারি সৈন্যবাহিনীর
সঙ্গে তাদের লড়াই শুরু হয়। এই লড়াইয়ে ১৭ জন শ্রমিক নিহত ও ১৪ জন আহত হয়। ৯ জুন এই
অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়। ১৮৩০ সাল থেকে চ্যাটিস্ট আন্দোলন চলে। ১৮৪৮ সালে
ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট শ্রমিক ভোটের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়। এটাই শ্রমিকদের
প্রথম রাজনৈতিক অর্জন।
আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায় : আমেরিকায় শিল্পের অতীত বিকাশ ১৮৮০ সাল থেকে ১৮৯০ সাল পর্যন্ত চলতে থাকলেও ১৮৮৪-৮৫
পর্যন্ত মন্দা দেখা দেয়। এই সময় অনেক কলকারখানা লে-অফ, লক আউট ঘোষণা করা হয়। ফলে
বহু শ্রমিক ছাঁটাই হয়ে বেকার হয়ে পড়ে। ১৮৮৮ সালের ৭ অক্টোবর ওই সংগঠনের ৪র্থ
সম্মেলনে ৮ ঘণ্টা শ্রম দিবসের দাবিকে প্রস্তাব হিসেবে গ্রহণ করা হয় এই মর্মে,
১৮৮৬ সালের ১ মে থেকে ৮ ঘণ্টা কাজের দিন আইনত গণ্য করতে হবে। ১৮৮৫ সালে পরবর্তী
সম্মেলনে বিগত বছরের সিদ্ধান্তের পুনরাবৃত্তি ঘোষিত হয়। সম্মেলনের সিদ্ধান্ত
অনুযায়ী ১৮৮৬ সালের ১ মে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে ধর্মঘট শুরু হয়। ৩ মে শ্রমিকদের
শান্তিপূর্ণ মিছিলে ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ। ৪ মে শিকাগোর হে মার্কেটে প্রতিবাদ সভা
বসে। সভায় পুলিশ আক্রমণ করলে শ্রমিকরা আক্রমণের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে। নিহত হয়, ৭
পুলিশ, শহীদ হয় ৪ শ্রমিক। সারা সে মার্কেট চত্বর রক্তে রাঙা হয়ে যায়। সভায়
উপস্থিত এক কিশোর শ্রমিক সেদিন তার গায়ের জামা খুলে রক্তে রক্তে ভিজিয়ে রক্তভেজা
লাল জামাটি উড়িয়ে দেয় পতাকা হিসেবে। আর সেই পতাকাই আজ শ্রমিকশ্রেণীর লাল ঝাণ্ডা,
সংগ্রামের অনুপ্রেরণার উৎস। এর পরে শ্রমিক নেতাদের নামে মামলা দায়ের করে প্রহসনের
বিচারের মাধ্যমে ৭ জন শ্রমিকের ৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে
দণ্ডিত করা হয়।
মে দিবস পালনের ঘোষণা : শোষক শ্রেণির নানান অত্যাচার নিপীড়ন সত্ত্বেও সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে ‘দুনিয়ার
মজদুর এক হও’
শ্লোগনটি। এই স্লোগানে বিশ্বের সকল শ্রমজীবী মানুষ অনুপ্রাণিত হয়।
১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠনের সম্মেলনে প্রথম শ্রম আইন
প্রণীত হয়। এই আইনে শ্রমিকদের দৈনিক কর্মসময় ৮ ঘণ্টা এবং সপ্তাহে ১ দিন ছুটি
প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয়
আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে ১ মে আন্তর্জাতিক সংহতি অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন
হিসেবে সারা বিশ্বে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহিত হয়।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা
ILO এর পূর্ণরূপ : International Labour Organization.
প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় :
১৯১৯ সালে। (তখন এটি লীগ অব নেশনসের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল)।
UN ভুক্ত হয় :
জাতিসংঘের বিশেষ সংস্থার মর্যাদা লাভ করে ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৪৬।
উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য :
  • শ্রমের অবস্থার উন্নয়ন সাধন,
  • শ্রমিকের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন,
  • সরকার
    মালিক শ্রমিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টা,
  • সামাজিক ও অর্থনৈতিক বুনিয়াদ সুদৃঢ় করা।
সদস্য সংখ্যা : ১৮৩।
সদর দপ্তর : জেনেভা, সুইজারল্যান্ড।
প্রধানের পদবি :
ডাইরেক্টর জেনারেল।
গভর্নিং বড়ি গঠিত : ২৮ জন সরকারি প্রতিনিধি, ১৪ জন শ্রমিক ও
১৪ জন বিনিয়োগ প্রতিনিধি অর্থাৎ ৫৬ জন প্রতিনিধি নিয়ে।
যোগাযোগ : 4. route des morillons, CH-1211 Geneva 22. Switzerland. Fax : (41-22)
798-8685; E-mail : ilo@ilo.org ওয়েবসাইট : www.ilo.org
আজকের শ্রমিক : ১৮৮৬ সালের মে মাসে শিকাগোর হে-মার্কেটে সংগটিত রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে
বিশ্বের শ্রমিক সমাজ তাদের দাবি-দাওয়ার ৫০ ভাগও বাস্তবায়িত হয়নি। সেই রক্তক্ষয়ী
সংঘর্ষ ঘটে যাওয়ার পর সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা শ্রমদানের দাবি বাস্তবায়িত হলেও কালে কালে
তাও আবার স্বার্থান্বেষী মহল তথা ধনিক শ্রেণির নগ্ন থাবায় আজকের প্রেক্ষাপট
ভিন্নতা লাভ করেছে। ধনিক শ্রেণি তাদের প্রভাব খাঁটিয়ে আজকের শ্রমিক সমাজকে
নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা ন্যুনতম মজুরি কিংবা ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে সাধারণ
শ্রমিকদেরকে। আজো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্রীতদাস প্রথা বিদ্যমান। বলপূর্বক শ্রমে
নিয়োগ, অতিরিক্ত শ্রমদানে বাধ্য করা, ধনিক শ্রেণির ইচ্ছামাফিক তাদের পরিচালন, কম
মজুরি প্রদান, কর্মক্ষেত্রে শিশু শ্রমিক নিয়োগ, শিশু ও নারী পাচার ও তাদের
পতিতাবৃত্তিসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আন্তর্জাতিক
শ্রম আইন, স্থানীয় প্রশাসন ও সেবা সংস্থাগুলোকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েই এসব ঘটে
চলেছে। অথচ প্রতিবছর জাঁকজমকের সাথে মে দিবস পালন করা হচ্ছে। তাই মনে রাখতে হবে
সেদিন শ্রমিক শ্রেণি তার অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে যে সংগ্রাম গড়ে তুলেছিল
আজো শ্রমিক শ্রেণির সামনে সে কর্তব্য শেষ হয়ে যায়নি। ১ মে’র লড়াই শুধুমাত্র ৮
ঘণ্টা শ্রম সময় নির্ধারণের জন্যই নয় বরং মজুরি দাসত্ব প্রথার অবসানের লক্ষ্যেই
তাদের এ লড়াই। মে দিবস তাই এক গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামের স্মৃতিবাহী অবিস্মরণীয় দিনই
কেবল নয়, কর্মজীবী শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামের অনুপ্রেরণার অবিনাশী উৎসও
বটে। আর সেই অনুপ্রেরণায় আবারও শ্রমিক সমাজকে উজ্জীবিত হতে হবে। প্রতিষ্ঠা করতে
হবে শ্রমিক সমাজের ন্যায্য অধিকার। যাদের শ্রমের বিনিময়ে ধনিক শ্রেণি সৃষ্টি
হয়েছে, তাদের ন্যায্য পাওনা আদায়ের মধ্যেই নিহিত রয়েছে শ্রমিক আন্দোলনের মূল
তাৎপর্য। সোনার হরিণের পূজারী আমরা নই, বুর্জোয়া-অত্যাচারীদের রাজত্ব আমরা চাই
না। অবসান হোক ধনতন্ত্রের সৃষ্ট দারিদ্র্যের বিভীষিকা, দীর্ঘজীবী হোক শ্রমের
রাজত্ব। এ প্রত্যাশা আমাদের।

প্রতিবেদন : মহান মে দিবস উপলক্ষে সংবাদ প্রতিবেদন

সংবাদপত্রের প্রকাশের জন্যে ‘ঐতিহাসিক মহান মে দিবস’ বিষয়ক একটি প্রতিবেদন
রচনা করো।

আজ ঐতিহাসিক মে দিবস

দীপান্বিতা দোলা : আজ পঞ্জিকার তারিখ অনুযায়ী পহেলা মে। এ তারিখটি
ঐতিহাসিক। বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের সংহতি প্রকাশের দিন আজ। দিনটি আন্তর্জাতিক
শ্রমিক দিবস হিসেবে পালিত হয় সারা বিশ্বে। শ্রমজীবী মানুষেরা অধিকার প্রতিষ্ঠার
জন্যে সেদিন যে সংগ্রাম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, তার ভিত্তিতে এ দিনটি ইতিহাসের
পাতায় স্থান করে নিয়েছে। 
১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের ‘হে মার্কেটে’ ৮ ঘন্টা
কাজের সময় নির্ধারণের দাবিতে সমবেত হয় হাজার হাজার শ্রমিক। এই শ্রমিকদের সমাবেশ
সেদিন পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালালে অনেক শ্রমিকের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়।
পুলিশের নির্যাতনের মুখেও শ্রমিক আন্দোলন থেমে না গিয়ে বরং তা আরো বেগবান হয়ে
ওঠে। প্রতিবাদমুখর শ্রমিকরা ৪ মে হে মার্কেটের সামনে আবারো সমাবেশের আয়োজন করে।
এদিনও পুলিশ বাহিনী নির্মমভাবে শ্রমিকদের ওপর গুলি চালায়। হতাহত হয় আরো অনেক
শ্রমিক। এভাবে শ্রমিকের রক্তের বিনিময়ে শেষ পর্যন্ত কাজের সময় ৮ ঘন্টা নির্ধারণের
মাধ্যমে শ্রমিকদের দাবি পূরণ হয়। উল্লেখ্য, এর পূর্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ
পৃথিবীর কোথাও শ্রমিকদের কাজের নির্ধারিত কোনো সময় ছিল না। যেখানে যে যেমন করে
পারে শ্রমিকদের খাটিয়ে ১০-১৬ ঘন্টা পর্যন্ত কাজের বিনিময়ে দিনের মজুরি দিত। 
১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে পহেলা মে’র ঘটনাকে কেন্দ্র করে, ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসের
আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ও
আত্মাহুতিকে স্বীকৃতি দিয়ে পহেলা মে শ্রমিক শ্রেণির আন্তর্জাতিক সংহতি দিবস
হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দ থেকে বিশ্বের সর্বত্র
১লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার দিবস হিসেবে পালন করা
হচ্ছে। বিশ্ববাসীর সাথে বাংলাদেশও শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের ও সংহতি প্রকাশের
ঐতিহাসিক দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে।
তবে এখানে উল্লেখ করার বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ যখন এই মহান মে দিবস পরিপূর্ণ
মর্যাদায় পালিত হচ্ছে তখনও এ দেশের হাজার হাজার শ্রমিক কাজ না পেয়ে দিনাতিপাত
করছে কিংবা যারা কাজ পেয়েছে তাদেরকে নির্ধারিত ৮ ঘন্টার পরিবর্তে অনেক বেশি সময়
কাজ করতে হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম আদমজী পাটকলসহ কয়েক শত
গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ করে দেওয়ায় অসংখ্যা শ্রমিক কাজ হারিয়েছে। দেশের বিভিন্ন
কলকারখানা, ব্যাংক, বীমা, শিল্প প্রতিষ্ঠানে যেসব সংগঠন বা সিবিএ আছে, তারা
শ্রমিকের অধিকার আদায় ও প্রতিষ্ঠা চেয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করে
ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করায় ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় না। অনেক ভাগে
বিভক্ত এসব শ্রমিক সংঘঠন প্রতি বছর ঘটা করে ১লা মে পালন করে। তারা পতাকা উত্তোলন,
র‍্যালি, মিছিল, পদযাত্রা কিংবা শোভাযাত্রা ও আলোচনা অনুষ্ঠানও করে। এসব
অনুষ্ঠানে শ্রমিক নেতারা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বড়বড় বুলি আওড়ায়,
কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। এজন্যে অবশ্যই শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের আন্তরিকতা
এবং পাশাপাশি সরকারের সদিচ্ছা থাকা আবশ্যক। যদি সত্যিকার অর্থে শ্রমিকদের দাবি ও
ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়, তবেই মহান মে দিবস পালন সার্থক হবে।

Paragraph : May Day

May Day

May Day is an international holiday of working people. In the year 1886 in the month of May, the workers in the American city of Chicago who were groaning under the pangs of exploitation raised slogans for their recognition as men. This movement demanded a time limit for work and other basic facilities of the workers so that they could live as human beings. This was no doubt a moral blow to the wealthy class. In consequence, the streets of Chicago city were red with the warm blood of the workers. The capitalist government and its agent adopted every possible means to choke the voice of the workers. The leaders of the workers were hanged. But the undaunted workers came out successful in sacrificing their lives. The demand for eight hours working time instead of twelve or thirteen hours was accepted and they were provided with some amenities of life. May Day has been a symbol for workers all over the world. May Day is a spirit of international brotherhood and unity of the workers. On May Day, all workers should be united to march on the path of progress and happiness.

রচনা : মে দিবসের তাৎপর্য

↬ আন্তর্জাতিক মে দিবস

↬ মে দিবসের ইতিহাস

ভূমিকা :
‘এমন সময় আসবে যখন কবরের অভ্যন্তরে শায়িত আমাদের নিশ্চুপতা জ্বালাময়ী বক্তৃতার চেয়ে
বাঙ্ময় হবে এবং তার শ্রমিকশ্রেণীর বিজয়লাভের শেষ সংগ্রাম পর্যন্ত লড়াইয়ে প্রেরণা
যোগাবে এবং শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’  -আগস্ট স্পাইজ
১৮৮৭ সালের ১১ নভেম্বর। ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে শ্রমিক আন্দোলনের অন্যতম নেতা কথাগুলো বলেছিলেন। তাঁর সেদিনের সেই ভবিষ্যদ্ববাণী আজ অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবে প্রমাণিত হয়েছে। ব্যর্থ হয় নি তাঁদের এই আত্মদান। শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে তা এক স্মরণীয় অধ্যায়। ‘মে দিবস’ পরিণত হয়েছে আন্তর্জাতিক দিবসে। মে দিবস আজ তাই হাজার হাজার শ্রমিকের পায়ে চলা মিছিলের কথা। ‘একটি মাত্র সৈন্যবাহিনী’ হিসেবে একই পতাকা তলে দাঁড়িয়ে আপসহীন সংগ্রামের কথা। মে দিবস দুনিয়ার শ্রমিকের এক হওয়ার ব্রত। আন্তর্জাতিক সংগ্রাম আর সৌভ্রাতৃত্বের দিন। মে দিবসের অর্থ শ্রমজীবী মানুষের উৎসবের দিন, জাগরণের গান, সংগ্রামে ঐক্য ও গভীর প্রেরণা। মে দিবস শোষণমুক্তির অঙ্গীকার, ধনকুবেরের ত্রাস, সমাজতন্ত্র গড়ার শপথ।
মে-রানীর রূপকথা : অথচ এই মে দিবস ছিল একদিন মে-রানীর রুপকথার অন্দরমহলে ঘুমিয়ে। আজকের সংগ্রামী তাৎপর্য ছিল তার অজানা। ইউরোপে দুর্জয় শীতের প্রথম তুষারপাত গলতে শুরু করেছে। গাছে গাছে নতুন পাতা। দিকে দিকে ফুলের বাহার। পাখির গান। মাঠেঘাটে কর্মের জোয়ার। শীতবৃদ্ধ বিদায় নিয়েছে। এসেছে তরুণ বসন্ত। তখনই মে-রানীর ঘুম ভাঙত। ১ মে হত তার উৎসব। রোপণ করা হত ‘মে বৃক্ষ’। তাকে সাজানো হত বিচিত্র পুষ্পহারে। তারপর সেই মে-রানীকে ঘিরে শুরু হত নাচ-গানের উৎসব। কবিরা মে-রানীকে নিয়ে লিখেছেন কবিতা। দেশের রাজারানী-প্রজারাও মেতে উঠতেন উৎসবে। দিন বদলায়। বদলায় সমাজ-ব্যবস্থা। পাল্টে যায় শব্দের অর্থ। মে-রানী একদিন কোথায় হারিয়ে গেল। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এসে মে দিবসের অর্থ গেল বদলে। মে দিবস হল কাজের সময় হ্রাস ও মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন। হল দুনিয়ার শ্রমিকদের সংহতি দিবস, পুঁজিবাদী শোষণমুক্তির সংগ্রামী শপথ। শ্রমিকশ্রেণীর আন্দোলন থেকেই উঠে এসেছে এই দিনটি।
মে দিবসের নেপথ্য ইতিহাস : আন্দোলনের পথ কখনই মসৃণ ছিল না। মসৃণ থাকে না। ছিল নানা ঘটনার ঘাতপ্রতিঘাতে, জুলুম, অত্যাচারে, প্রতিরোধে ধর্মঘটে, মিছিলে, সংগ্রামী ঐক্যে রক্তলাঞ্ছিত। মে দিবস একদিনে এই আন্তর্জাতিক চেহারা পায় নি। এর পেছনে রয়েছে দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস। রয়েছে অনেক রক্তঝরার কাহিনী। জন্মলগ্ন থেকেই শ্রমিকশ্রেণীর ইতিহাস সংগ্রামের ইতিহাস। শ্রমিকশ্রেণীকে উদয়াস্ত কাজ করতে হবে। আঠার ঘণ্টা, কুড়ি ঘণ্টা পর্যন্ত ছিল কাজের সময়-সীমা। আলেকজান্ডার ট্রাকটেনবুর্গ মে দিবসের ইতিহাস আলোচনা করতে গিয়ে লিখেছেন, ‘মে দিবসের জন্মকাহিনী অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে কাজের ঘণ্টা কমাবার আন্দোলনের সঙ্গে।’ ১৮০৬ সালে কারখানায় কুড়ি ঘণ্টা পর্যন্ত ছিল বাধ্যতামূলক কর্মপ্রহর। ১৮২০-১৮৪০ সাল পর্যন্ত দশ ঘণ্টা কাজের দাবিতে অনেক আন্দোলন ও ধর্মঘট হয়। ১৮৬২-৬৩ সালে গড়ে উঠে ট্রেড ইউনিয়নের রাজনৈতিক ভিত্তি। দাসপ্রথা ওঠে গেল। নিগ্রোরা হল শ্বেতাঙ্গদের বন্ধু। এই সময়ে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। মালিকরা কম মজুরিতে নারী শ্রমিক নিয়োগ করত। আমেরিকায় গৃহযুদ্ধের পর থেকেই সেখানকার শিল্পের বিকাশ ঘটে দ্রুত তালে। সেই সঙ্গে শ্রমিক আন্দোলনের প্রসারও ঘটে দ্রুত। ১৮৮১ সালের নভেম্বরে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার’। সেখানে ১৮৮৪ সালের ৭ অক্টোবরে চতুর্থ সম্মেলনে গ্রহীত হল ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। বলা হয়, ১৮৮৬ সালের ১ মে থেকে আট ঘণ্টাকেই কাজের দিন বলে আইনত গণ্য করতে হবে।

ঐতিহাসিক মে দিবসের জন্ম : চলল প্রচার, প্রস্তুতি। অবশ্য ১৮৬৪ সাল থেকেই আট ঘণ্টার কাজের দাবিতে শ্রমিকশ্রেণী ছিল মুখর। দিকে দিকে ‘আট ঘণ্টার শ্রম-সমিতি’ গড়ে উঠতে লাগল। ১৮৬৮ সালে আমেরিকার আইন সভা ‘আট ঘণ্টার কাজ’ বলে একটি আইনও পাস করল। কিন্তু কার্যকরী হল না সেই আইন। কার্ল মার্ক্স স্বাগত জানালেন এই আন্দোলনকে। ১৮৮৫ সালে ব্যাপকতর হল এই আন্দোলন। শুরু হল চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি। ধর্মঘটের পর ধর্মঘট। মিছিলের পর মিছিল। দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ল সংগ্রামের ডাক। শ্রমিক শ্রেণী সঙ্কল্পবদ্ধ। ১৮৮৬-র ১ মে থেকে কেউ আট ঘণ্টার বেশি কাজ করবে না। এল সেই ঐতিহাসিক দিন। ১৮৮৬ সালের ১ মে। পাঁচ লক্ষ শ্রমিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে প্রত্যক্ষভাবে ধর্মঘটে যোগ দিলেন। শাসকদল এই ঐক্যবদ্ধ সুবিশাল শ্রমিক সমাবেশ ও ধর্মঘট দেখে পিছিয়ে গেল। ৩ মে। ম্যাককর্মিক হার্ভেস্টার কারখানায় হল নির্মম পুলিশী আক্রমণ। প্রাণ হারালেন ছ’জন নিরস্ত্র শ্রমিক। এর পরের দিন। ৪ মে। হে মার্কেট স্কোয়ার। সুবিশাল প্রতিবাদ সভা। পুলিশ গুলি চালাল। শহীরে রক্তে রঞ্জিত হল হাতের নিশান। গ্রেপ্তার করা হল চারজন শ্রমিক নেতাকে। বিচারের নামে হল বিচারের প্রহসন। জারি হল ফাঁসির আদেশ। এঁরা হলেন আগস্ট স্পাইজ, পার্সনস, ফিসার ও এঞ্চেল। প্রতিবাদের ঝড় উঠল। সভা শোভাযাত্রায় ধিক্কারবাণী উচ্চারিত হল। ধ্বনিত হল শ্রমিকশ্রেণীর সংগ্রামের কণ্ঠ। প্রতিবাদ জানালেন জর্জ বার্নাড শ, মার্ক্সের কন্যা এলনর মার্ক্স। দেশকালের গণ্ডি পেরিয়ে এই নৃশংস বর্বরতার খবর পৌঁছল দুনিয়ার মেহনতী শ্রমজীবীর কানে। ১৮৮৯ সালে ১৪ জুলাই। ফরাসী বিপ্লবের কেন্দ্রস্থল প্যারিস। বাস্তিল পতনের শতবার্ষিকী। এই দিনেই প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের সম্মেলন। প্রথম দিনের অধিবেশনেই সর্বসম্মত প্রস্তাব ১৮৯০ সাল থেকে ১ মে প্রতিবছর শ্রমিকশ্রেণীর আন্তর্জাতিক সংহতি, সৌভ্রাত্র ও সংগ্রামের দিন বলে ঘোষিত হল। এভাবেই ১৮৮৬ সালের ঐতিহাসিক মে দিবস রূপান্তরিত হয় ১৮৯০ সালের আন্তর্জাতিক মে দিবসে।
দেশে দেশে মে দিবস : প্যারিস সম্মেলনে ঘোষণার পর থেকেই দেশে মে দিবস পালিত হয়। ১৮৯০ সালে গ্রেট ব্রিটেনে ১ মে’র পরিবর্তে ৪ মে হাইড পার্কে লক্ষ লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে প্রথম আন্তর্জাতিক মে-দিবস উদযাপিত হয়। আমেরিকায় ১৮৯০ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক মে দিবস পালিত হয় আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে ধর্মঘটের মাধ্যমে। ফ্রান্সে মিছিল ও সমাবেশের মধ্যে অনুষ্ঠানিকভাবে মে-ডে পালিত হয় ১৮৯০ সালে। জার শাসিত রাশিয়ায় ১৮৯৬ সালে মে দিবস উদযাপিত হয় ধর্মঘটের ভেতর দিয়ে। চীনে প্রথম মে দিবস পালিত হয় ১৯২৪ সালে। ডা. সান্ ইয়াৎ সেন ওই সমাবেশে ভাষণ দেন। হিটলারের উত্থানের শুরুতে ১৯৩৩ সালে জার্মানিতে কমিউনিস্টরা বেআইনী মে দিবস উদযাপন করেছিলেন। আজ এশিয়া-আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ল্যাটিন আমেরিকা, ছোট বড় সমস্ত দেশ জুড়ে মে দিবস পালিত হচ্ছে।
মে দিবসের তাৎপর্য : মে দিবস হল দুনিয়ার মেহনতী মানুষের সঙ্কল্প গ্রহণের দিন। এই সঙ্কল্প হল সামাজিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শ্রেণীবৈষম্যের বিলোপসাধন। পুঁজিবাদী দাসত্বশৃঙ্খল থেকে মুক্তির দৃঢ় অঙ্গীকার। মে দিবস শ্রমিকশ্রেণীর চিন্তা-চেতনায় এনেছে এক বৈপ্লবিক তাৎপর্য। লেনিন মে দিবসকে ব্যবহার করেছিলেন শ্রমিকশ্রেণীর বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের বলিষ্ঠ হাতিয়ার হিসেবে। তারই সার্থক পরিণতি ১৯১৭ সালের নভেম্বর বিপ্লবে। মে দিবস দুনিয়া জুড়ে শ্রমিক আন্দোলন ও মুক্তি সংগ্রামের ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ চক্রান্তের তীব্র প্রতিবাদ, ‍দুনিয়ার শ্রমিক এক হওয়ার উজ্জীবন মন্ত্র।
উপসংহার : ১৯৮৬ সালে ঐতিহাসিক মে দিবসের শতবর্ষ শেষ হয়েছে। মে দিবসের এই দীর্ঘ শতবর্ষের আলোয় অনেক অন্ধকার দূর হয়েছে। সংগ্রামী শ্রেণীর সামনে উন্মোচিত হয়েছে নতুন দিগন্ত। দৃঢ় হয়েছে শ্রমিক সংহতি। বিশ্বের এক- তৃতীয়াংশ মানুষ আজ রয়েছে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায়। কিন্তু এখনও জনসংখ্যার বৃহৎ অংশ পুঁজিবাদী দাসত্ব থেকে মুক্ত নয়। মুক্ত নয় সামন্ততান্ত্রিক শোষণ থেকে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আজও প্রবল, পরাক্রান্ত। এখনও তার নির্লজ্জ রণ-হুংকার থামে নি। তাই দুনিয়া জুড়ে মে দিবসের যে বিজয় অভিযান সেখানে মূর্ত হয়ে উঠেছে সমাজতান্ত্রের সপক্ষে ও পুঁজিবাদ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে শ্রমিকশ্রেণীর বৈপ্লবিক সংগ্রাম। এই সংগ্রামী চেতনা ও চরিত্রই শ্রমজীবীর ভূষণ। মে দিবস আজ আর শ্রমিকের কাজের ঘণ্টা কামানো দাবির আন্দোলন নয়। মে দিবস আজ দুনিয়ার মেহনতী মানুষের সংগ্রামের দিন, সৌভ্রাতৃত্বের দিন। সমাজতন্ত্র কায়েম করার শপথ গ্রহণের দিন। মে দিবস এখন শ্রমিকশ্রেণীর সামনে নতুন ঊষার স্বর্ণ দুয়ার। অনেক রক্তের বিনিময়ে পাওয়া দুর্লভ এক সম্পদ।

জীবনে সফল হওয়ার ২১টি মন্ত্র

১. কথা হজম করতে শিখুন, এটা অনেক বড় গুণ- এটি আপনাকে সফলতা অর্জনে সহায়তা করবে! কথা না বাড়িয়ে নীরবে কাজ করে যান; আপনার কাজই আপনার হয়ে কথা বলবে। মন খারাপের কারণ অতীত, আর টেনশন-এর কারণ ভবিষ্যৎ। তারচেয়ে বরং বর্তমানকে উপভোগ করুন; আনন্দে বাঁচুন!
২. ঠেকতে ঠেকতে সোজা সরল ভালো মানুষটিও বুঝে যায়- কে তাকে সত্যিকারের ভালোবাসে আর কে তাকে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করে। আপনার সামনে যিনি আপনার প্রশংসা আর অন্যের সমালোচনা করেন, একটু পরেই তিনি অন্যের কাছে আপনাকে নিয়ে একই কাজ করবেন!
৩. পরম সমালোচনাকারী প্রতিনিয়ত আপনার উপকার করে যাচ্ছেন। আপনাকে ‘একজন’ হয়ে উঠার জন্য সাহায্য করেন। সমালোকেরা নিঃসন্দেহে আপনার ভালো বন্ধু- বিনা পয়সায় ভুল ধরিয়ে দিতে সর্বদা তৎপর থাকেন… তাঁদের কখনোই অবহেলা করবেন না! আপনি বরং বিনয়ী হোন, মানুষকে সম্মান করুন ও গুরুত্ব দিন; সবকিছু বহুগুণ হয়ে আপনার কাছেই ফেরত আসবে!
৪. কেউ যদি আমায় ঈর্ষা করে, আমি খুবই খুশি হই। কারণ আমি বুঝতে পারি যে, আমি সঠিক কাজটাই করছি! আপনার কাজ বা কথা নিয়ে কেউ কোনো মন্তব্য করল না, তার মানে আপনি সঠিক জায়গায় পৌঁছতে পারেননি!! মানুষের জনপ্রিয়তার মাত্রা নির্গত হওয়া উচিত তার শত্রু ও সমালোচকের সংখ্যার ভিত্তিতে!!!
৫. জিততে হলে কখনো কখনো হারতে হয়। আজকের হারই হয়ত ভবিষ্যতে বড় বিজয় এনে দেবে। কখনো বোকার সঙ্গে তর্কে জড়াবেন না- এটা সময়ের অপচয়! সম্ভব হলে আপনি অন্যদেরকে জিতিয়ে দিন, জিতে গেছে ভেবে কেউ যদি খুশি হয়, আপনিও নীরবে একটুখানি হেসে নিন। অন্যের সুখে সুখী হতে পারলে আপনিই মহাসুখী হন!
৬. চিতা বাঘ কখনো কুকুরের সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করে না। আপনি যে চিতা বাঘ তা বোঝানোর জন্য শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষায় থাকুন। হয়ত অনেক কিছু পারেন; তবে দরকার নেই তা বলে বেড়ানোর। নীরবে কাজ করে যান… যার প্রয়োজন তিনি আপনাকে ঠিকই খুঁজে নেবেন। তবে অযোগ্য কাউকে টেনে উপরে তুললে সে-ই এক সময় উল্টো আপনার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রতিশোধ নেবে!
৭. আপনি দুনিয়ার কাউকে বদলাতে পারবেন না, শুধু নিজেকে ছাড়া। আপাতত সেটাই করুন- নিজেকে বদলে ফেলুন; আর অন্তত দুজন অসহায় মানুষকে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করুন। সবাই এই নীতিতে বিশ্বাসী হয়ে কাজ করলে চারপাশের দুনিয়া এমনিতেই বদলে যাবে!
৮. আপনার চিন্তা-ভাবনার ওপরে যারা আস্থা রাখতে পারে না, তাদেরকে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়ার দরকার নেই। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন- এটাই আপনাকে সবার মাঝে বিশ্বাসী ও আস্থাভাজন করে তুলবে; স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।
৯. জীবনের পরীক্ষায় অনেকেই হেরে যান কারণ তারা অন্যকে copy করার চেষ্টা করেন, কিন্তু তাদের আসলে জানা নেই- প্রত্যেকের প্রশ্নপত্রটাই আলাদা! কোথায় জন্মেছেন- সেটা আপনার নিয়তি; কোথায় পৌঁছাবেন- সেটা আপনার কর্মফল!
১০. আজকে থেকে ঠিক ৯৯৯ দিন পরে আপনার অবস্থান কোথায় হবে- সবকিছুই নির্ভর করছে এখন কাদের সঙ্গে মিশছেন আর কী কী বই পড়ছেন আর কতটুকু নিজেকে দক্ষ করে তুলছেন, তার ওপর!
১১. কোনো কথা শোনামাত্রই যাচাই না করে বিশ্বাস করবেন না। কেননা মিথ্যা কথা সব সময়ই সত্যের চাইতেও তীব্রতর। প্রমাণের ঝামেলা নেই বলে মিথ্যে কথা ও গুজব দ্বিগুণ গতিতে ছোটে। কিন্তু সত্যটা প্রমাণ করতে যথেষ্ট সময়ক্ষেপণ ও বেগ পেতে হয়!
১২. জীবনটা বড্ড ক্ষণস্থায়ী, ভালো করারই সময় কম। মন্দ কাজ করার সুযোগ কই? ভালো মানুষ সাজার ভান না করে ভালো মানুষ হয়ে গেলেই তো হয়!
১৩. আপনার স্বপ্ন নিয়ে কেউ যদি হাসা-হাসিই না করে, তবে বুঝে নেবেন- লক্ষ্যটা খুব ছোট হয়ে গেছে! আবার স্বপ্ন পূরণে বেশি কালক্ষেপণ করলে অন্য কেউ সেটা বাস্তবায়ন করে নিজের বলে চালিয়ে দিতে পারে..! তবে যে স্বপ্ন বাস্তবায়নের শুরুতেই অন্যের সহযোগিতা নিতে হয় অর্থাৎ নিজে এগিয়ে নিতে পারেন না- সেই স্বপ্ন দেখবেন না।
১৪. কেউ কেউ ইতিহাস গড়েন, বাকিরা সেই ইতিহাস পড়ে পরীক্ষায় পাস করেন! বিখ্যাত মানুষের সঙ্গে সেলফি তুলে পোস্ট না দিয়ে এমন কাজ করুন, যাতে অন্যেরা আপনার সঙ্গে ছবি তুলে সামাজিক গণমাধ্যমে পোস্ট করে।
১৫. মানুষ মাটি দিয়ে তৈরি, মাটিজাত খাবার খেয়ে বাঁচে, মৃত্যুর পরে আবার মাটিতেই মিশে যাবে; তার কি অহংকার ও রাগ করা সাজে? মানুষের গ্রহণযোগ্যতা কখনো ফেসবুক-এ লাইক-এর সংখ্যা দিয়ে যাচাই করা যায় না; মৃত্যুর পর উনার জানাজায় ক’জন হাজির হলেন- সেটাও দেখার বিষয়!
১৬. সুস্থ দেহ+প্রশান্ত মন = উপভোগ্য জীবন। শরীরের সুস্থতার জন্য চাই পরিমিত খাদ্যাভ্যাস আর মনের প্রশান্তির জন্য চাই রুচিশীল পাঠ্যাভ্যাস।
১৭. জ্ঞানীরা বলেন কেননা তাঁদের কাছে বলার মতো কিছু কথা আছে; আর মূর্খরা বলেন কেননা তাদেরও কিছু বলতে ইচ্ছে করে! কাউকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার আগে অন্তত তাঁর সমান যোগ্যতা অর্জন করে নিতে হয়…!
১৮. যে কাজের জন্য বিবেক প্রশ্নবিদ্ধ করে, সে কাজ থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়। যা কিছু পেয়েছেন, তার জন্য শুকরিয়া আদায় করুন, ধৈর্যধারণ করুন… ভবিষ্যতে আরো ভালো দিন আসবে!
১৯. প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মাঝে যে সমন্বয় ঘটাতে পারে, সে-ই প্রকৃত সুখী। হবে না, পারবো না, আমার কপালে নেই কথাগুলো প্রায়ই বলে থাকি। কিন্তু মজার ব্যাপার- নিজেকে জিজ্ঞেস করলে যে উত্তর পাওয়া যাবে, তা কিন্তু একেবারেই উল্টো। আমি পারবো, আমাকে দিয়েই হবে- এই শক্তি অন্তরে লুকিয়ে থাকে, জীবন যুদ্ধে শক্ত হাতে হাল ধরতে পারাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। নেতিবাচক ভাবনার টানুন ইতি, বেড়ে যাবে জীবনের গতি!
২০. মস্তিষ্ক কখনো অলস সময় কাটাতে পারে না, সর্বক্ষণ কিছু না কিছু চিন্তা করবেই। মজার ব্যাপার হলো- আপনি যখনি আগের চিন্তা ডাউনলোড করে ফেলবেন (অর্থাৎ কাগজ-কলম নিয়ে লিখে ফেলবেন এবং কাজে প্রয়োগ করবেন), মস্তিষ্ক কেবলমাত্র তখনি নতুন কিছু ভাববার সুযোগ পায়, নচেৎ আগের চিন্তাটাই মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে। কোনো একটা চিন্তা কাজে পরিণত না করে মাথায় নিয়ে বসে থাকলে নতুন চিন্তা মাথায় আসে না (ঢোকার জায়গা পায় না)। কোনো পরিকল্পনাই গ্রহণযোগ্য নয়, যতক্ষণ না সেটি বাস্তবায়িত হচ্ছে…! তাই মাথায় যত বুদ্ধি আসে, যত দ্রুত সম্ভব কাজে লাগান; হয় লাভ হবে নইলে অভিজ্ঞতা হবে! অর্জন হিসেবে কোনোটাই মন্দ নয়।
২১. পৃথিবীতে এমন কোনো কাজ নেই- যা করলে জীবন ব্যর্থ হয়। জীবন এতই বড় ব্যাপার যে একে ব্যর্থ করা খুবই কঠিন! যারা কোনোকালেই কিছু করবে না- তারাই কেবল বলে অসম্ভব। এ জগতে মানুষের কাছে অসম্ভব বলে কিছুই নেই- থাকতে পারে না। এ পৃথিবীতে অসম্ভব বলে যদি কিছু থাকে, সেটা আছে কেবল মূর্খ ও অলসদের অভিধানে।