মডিউল-৬/সেশন-২
স্বাস্থ্য ও পুষ্টি
খাদ্য কী? — খাদ্য বলতে সেসব জৈব ও অজৈব উপাদানকে বুঝায় যাগুলো জীবদেহ গঠন, ক্ষয়-পূরণ এবং শক্তি উৎপাদনে ব্যবহিত হয়।
খাদ্যের জৈব উপাদান কোনগুলো? — কার্বন মিশ্রিত জৈবসমূহ যেমন- আমিষ, শর্করা, চর্বি, নিউক্লিওপ্রোটিন, নিওক্লিক এসিড ইত্যাদি।
খাদ্যের অজৈব উপাদান। কোনগুলো? — সব অজৈব লবনসমূহ এবং ফসফরাস, আয়োডিন, কপার, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, সোডিয়াম ইত্যাদি
খাদ্যের কাজ কি?
— খাদ্য দেহের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধি সাধন করে;
— খাদ্য দেহের তাপ ও শক্তি উৎপাদন করে;
— খাদ্য শরীরের অভ্যন্তরের ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীরকে সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম রাখে।
খাদ্যের উপাদান কয়টি? — ৬টি।
খাদ্যের উপাদান গুলো কি কি? — আমিষ, শর্করা, স্নেহজাতীয় পদার্থ, খনিজ পদার্থ, খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন এবং পানি।
কোন খাবার গুলো আমিষের উৎস বা আমিষের উৎসগুলো কি কি? — দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, চিনাবাদাম, সয়াবিন, মসুর ডাল, মুগ ডাল, ছোলার ডাল ও অন্যান্য ডাল, কাঁঠালের বিচি, শিমের বিচি, নারিকেল ইত্যাদি।
আমিষের প্রধান কাজ কি? — দেহের কোষ গঠনে সহায়তা করা।
দেহের অস্থি, পেশি বিভিন্ন অঙ্গ-তন্ত্র, রক্ত কণিকা, ইত্যাদি কি দ্বারা তৈরি? — আমিষ।
পেপ্সিন, ট্রিপসিন ইত্যাদি জারক রস এবং হরমোনসমূহ কি দ্বারা তৈরি? — আমিষ।
আমিষ রক্তে কি তৈরিতে সাহায্য করে? — হিমোগ্লোবিন।
আমিষের অভাবজনিত রোগগুলো কি কি?
— দেহের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়;
— ওজন হ্রাস পায়;
— ত্বক ও চুলের রং ফ্যাকাশে হয়ে যায়;
— মেজাজ খিটখিটে হয়;
— রক্ত স্বল্পতা, ম্যারাসমাস ও কোয়ারশিয়কর ইত্যাদি রোগ হয়।
আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে কিসের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি? — শর্করার।
শর্করার উতসগুলো কি কি? — চাল, গম, আলু, ভুট্টা, গুড়, চিনি, মধু, ফলের রস ইত্যাদি।
শর্করার প্রধান কাজ কি? — দেহের তাপ বা শক্তি সরবরাহ করা।
স্নেহজাতীয় পদার্থের দহনে সহায়তে করা কোন খাদ্য উপাদানের কাজ? — শর্করার।
কোন খাদ্য উপাদান কিটোসিস রোগ থেকে রক্ষা করে? — শর্করা।
কোন খাদ্য উপাদান সবচেয়ে বেশি তাপ ও শক্তি সরবরাহ করে? — স্নেহজাতীয় পদার্থ।
স্নেহজাতীয় পদার্থের উৎসগুলো কি কি? — ঘি, মাখন, চর্বি ও বিভিন্ন ধরণের তেল, মাছ, মাংসের চর্বি ইত্যাদি।
স্নেহজাতীয় পদার্থের অভাবজনিত রোগগুলো কি কি?
ক) চামড়া শুষ্ক ও খসখসে ভাব ধারণ করে;
খ) স্নেহ পদার্থের অভাবে ভিটামিন এ, ডি, ই ও কে এর অভাবে হয়;
গ) নানা ধরণের চর্মরোগ দেখা দেয়।
খনিজ পদার্থের উৎসগুলো কি কি? — দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, বাদাম, ডাল, ফল ইত্যাদি।
আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদানগুলো কি কি? — ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, আয়োডিন, ম্যাগনেসিয়াম অন্যান্য।
কিসের অভাবে অস্থি নরম, বাঁকা, ভঙ্গুর ও বিকৃত আকারের হয়? — ক্যালসিয়াম।
দ্রবনীয়তার গুণ অনুসারে ভিটামিনকে কয়ভাগে ভাগ করা যায়? — দুই ভাগে (যথা- চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন এবং পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন)
চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন গুলো কি কি?
ক) ভিটামিন এ (বা রেটিনল);
খ) ভিটামিন ডি (বা ক্যালসিফের);
গ) ভিটামিন ই (বা টকোফেরল);
ঘ) ভিটামিন কে।
পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন গুলো কি কি?
ক) থায়ামিন (বা ভিটামিন বি ১);
খ) রিবোফ্লাভিন (বা ভিটামিন বি ২);
গ) নিয়াসিন বা নিয়াসিনামাইড;
ঘ) পিরিডক্সিন (বা ভিটামিন বি ৬);
ঙ) প্যান্টোথেনিক এসিড;
চ) ফলিক এসিড;
ছ) গায়ানোকোবালামিন বা (ভিটামিন বি ১২);
জ) ভিটামিন সি (বা এসকরবিক এসিড) ইত্যাদি।
ভিটামিন সি ছাড়া পানিতে দ্রবণীয় অন্যান্য ভিটামিন গুলোকে একসাথে কি বলে? — বি-কমপ্লেক্স।
ভিটামিন এ (রেটিনল) এর উৎসগুলো কি কি? — দুধ, মাখন, পনির, ডিমের কুসুম, কলিজা, মাছের যকৃতের তেল ইত্যাদি।
ভিটামিন এ এর অভাবে কোন রোগ হয়? — রাতকানা।
১৯-৭০ বছর বয়সী পুরুষের দৈনিক কত মিলিগ্রাম ভিটামিন এ গ্রহণ করতে হবে? — ৯০০ মি. গ্রাম।
ভিটামিন বি ৩ (নিয়াসিন) এর উৎস গুলো কি কি? — মাংস, কলিজা, গম, ডাল, বাদাম ইত্যাদি।
ভিটামিন বি৩ এর অভাবে কোন রোগ হয়? — পেলেগ্রা, শারীরিক দুর্বলতা, ওজন হ্রাস, উদরাময়, উদ্বেগ ও উত্তেজনা দেখা দেয়।
১৯-৭০ বছর বয়সী পুরুষের দৈনিক কত মিলিগ্রাম ভিটামিন বি৩ (নিয়াসিন) গ্রহণ করতে হবে? — ১৬ মি. গ্রাম।
ভিটামিন-ই (টকোফেরল) এর ঊৎসগুলো কি কি? — ডিমের কুসুম, মটরশুঁটি, গম, যব, সূর্যমুখী তেল ইত্যাদি।
ভিটামিন-ই (টকোফেরল) এর কাজ কি? — প্রাণীর প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
ভিটামিন-ই এর অভাবে কি দেখা দিতে পারে? — সাময়িকভাবে বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে।
১৯-৭০ বছর বয়সী পুরুষের দৈনিক কত মিলিগ্রাম ভিটামিন-ই (টকোফেরল) গ্রহণ করতে হবে? — দৈনিক ১৫ মি. গ্রাম।
ভিটামিন-ডি (ক্যালসিফেরল) এর উৎসগুলো কি কি? — মাছের তেল, ডিমের কুসুম, মাখন, ঘি, ইলিশ মাছ ইত্যাদি।
ভিটামিন ডি (ক্যালসিফেরল) এর অভাবে কোন রোগ হয়? — শিশুদের রিকেটস ও দাঁতের গঠন ব্যাহত হয়, বয়স্কদের অষ্টিও ম্যালেসিয়া রোগ হয়।
১৯-৭০ বছর বয়সী পুরুষের দৈনিক কত মিলিগ্রাম ভিটামিন ডি (ক্যালসিফেরল) গ্রহণ করতে হবে? — দৈনিক ৫-১০ মাইক্রোগ্রাম।
ভিটামিন সি (এসকরবিক এসিড) এর উৎস গুলো কি কি? — সবজি, টক ফল, বিশেষ করে আমলকি, লেবু, কমলা ইত্যাদি।
ভিটামিন সি এর অভাবে কোন রোগ হয়? — স্কার্ভি।
ভিটামিন সি এর কাজ কি? — দাঁত ও মাড়ি সুস্থ রাখে, ক্ষত স্থান শুকাতে সাহায্য করে, ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল করে।
১৯-৭০ বছর বয়সী পুরুষের দৈনিক কত মিলিগ্রাম ভিটামিন সি গ্রহণ করতে হবে? — ৯০ মি. গ্রাম।
ভিটামিন-কে এর উৎস গুলো কি কি? — সবুজ শাক, ফুলকপি, বাধাকপি, লেটুস পাতা, ডিমের কুসুম ইত্যাদি।
ভিটামিন কে এর কাজ কি? — রক্তপাত নিবারণে ও দেহের শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে।
ভিটামিন কে এর অভাবে কোন রোগ হতে পারে? — গর্ভবতী মহিলাদের রক্তপাত হতে পারে, পিত্তের স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হওয়ার প্রবণতা থাকে।
১৯-৭০ বছর বয়সী পুরুষের দৈনিক কত মিলিগ্রাম ভিটামিন কে গ্রহণ করতে হবে? — ৪০ মাইক্রোগ্রাম-১মি. গ্রাম।
রক্তস্বল্পতা জনিত কারণে আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের সাথে ___ সাপ্লিমেন্ট অত্যন্ত ফলপ্রসূ। — ফলিক এসিড।
বিনা ব্যবস্থাপত্রের বা ওটিসি (Over the Counter) ভিটামিন হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় কোনটি? — ভিটামিন সি।
আমাদের দেশে ভিটামিনের সবচেয়ে বেশি অপব্যাবহার হয় কোথায়? — গ্রামাঞ্চলে।
একজন পূর্ণবয়স্ক (প্রায় ৭০ কেজি ওজন) মানুষের শরীরে কত কেজি পানি থাকে? — ৪২ কেজি।
পানির অভাবজনিত লক্ষণগুলো কি কি?
ক) শরীরে ক্লান্তিভাব;
খ) বিশেষভাবে শিশুরা অত্যাধিক দুর্বল হয়ে পড়ে;
গ) কিডনী বিকল হয়ে পড়ে।
কোন নলকূপের পানি সর্বোত্তম?
ক) যে নলকূপ ৮০০ ফুটের বেশি গভীর;
খ) যে নলকূপের পানিতে আর্সেনিক নেই;
গ) যে নলকূপের আশেপাশে ৫০ হাতের মধ্যে কোন কাচা পায়খানা নেই;
ঘ) যে নলকূপের গোড়া পরিষ্কার এবং গোড়ায় পানি জমে থাকে না।
পুকুর-দিঘী-নদীর পানি ছেকে তারপর কমপক্ষে কত মিনিট টগবগ করে ফুটিয়ে নিতে হবে? — ৩০ মিনিট।
পানিবাহিত রোগ কোনগুলো? — ডায়রিয়া, আমাশয়, রক্ত আমাশয়, কৃমি, জন্ডিস৷ টাইফয়েড ইত্যাদি।
স্বাস্থ্য শিক্ষা কত ধরণের হতে পারে? — তিন ধরনের। যথা :
ক) প্রাথমিক স্বাস্থ্য শিক্ষা;
খ) সেকেন্ডারি স্বাস্থ্য শিক্ষা;
গ) টারশিয়ারি স্বাস্থ্য শিক্ষা।
ফার্মাসিস্টের পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সেবামূলক কার্যাবলীকে কত ভাগে ভাগ করা যায়? — চার ভাগে।
সাধারণভাবে বিশ্বব্যাপী কোন ৫টি রোগকে পুষ্টিহীনতার কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে? — কোয়ারশিয়রকর, ম্যারাসমাস, জেরেপথ্যালমিয়া, রক্তস্বল্পতা এবং গলগণ্ড।
প্রয়োজনাতিরিক্ত পুষ্টি গ্রহণের ফলে কি দেখা দিতে পারে? — উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, মেদ, যকৃতের গোলযোগ, কৃমি, হার্টের রোগ ইত্যাদি।
ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন-ডি এর অভাবে শৈশবে ও বাল্যকালে রিকেটস রোগ হয়। এতে হাড় ও দাঁতের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং হাত পা বেঁকে যায়।
ভিটামিন-এ এর অভাব হলে রাতকানা রোগ হয়। এছাড়াও চোখের পাতা ফুলে যায়, চোখে পুঁজ হয়। একে জেরেপথ্যালমিয়া বলে।
থায়ামিন (ভিটামিন বি১) এর অভাব হলে স্নায়ু দুর্বল হয়, কাজের উৎসাহ কমে যায় এবং খাবারের অরুচি আসে।
খাদ্যে অনবরত রিবোফ্লাভিনের অভাব হলে ঠোঁটের কোনা ফেটে যায়, ঠোঁটে, মুখে ও জিহ্বায় ঘা হয়।
কারা পুষ্টিহীনতার সবচেয়ে বড় শিকার হয়? — শিশুরা।
প্রোটিনের চরম অভাব হলে শরীরে পানি আসে ও শরীর ফুলে যায়। এর ফলে রোগী নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এটি হলো কোয়ারশিয়রকর রোগ।
ম্যারাসমাস রোগ হয় সাধারণত প্রোটিন ও ক্যালরির অভাবে। এটি প্রোটিন, শর্করা ও স্নেহ পদার্থ সংবলিত পুষ্টির অভাবে হয়। এ রোগে চেহারা এবং হাত পায়ের চামড়া ঝুলে পড়ে।
লৌহ, প্রোটিন ও খাদ্য উপাদান রক্তের কণিকা তৈরি করে, খাদ্যে সেসব উপাদানের অভাব হলে রক্ত স্বল্পতা দেখা দেয়।
নিয়াসিনের অভাব হলে হাতের চামড়া খসখসে ও লাল হয়ে পড়ে।
ভিটামিন-সি এর অভাব হলে স্কার্ভি রোগ হয়, দাঁতের মাড়ি ফুলে দাঁত থেকে রক্তপড়া, হাত-পায়ের গাটে ব্যথা হয় যা স্কার্ভির লক্ষণ। এছাড়া ভিটামিন সি এর অভাব হলে ক্ষত শুকাতে বিলম্ব হয়।
স্নেহজাতীয় পদার্থ কোন ভিটামিন গুলোকে দ্রবীভূত করে দেহের গ্রহণোপযোগী উপাদানে পরিণত করে? — ভিটামিন এ, ডি, ই ও কে।