শিক্ষা সফর

রচনা : শিক্ষা সফরের গুরুত্ব (16 Point)

শিক্ষা সফরের গুরুত্ব

ভূমিকা

বিবিধ উপায়ে শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী তার জ্ঞানের ভাণ্ডারকে পরিপূর্ণ করে। ১. বই পড়ে সে অর্জন। করে জীবন ও জগৎ সম্পর্কে তত্ত্বীয় জ্ঞান ২. শিক্ষাসফরের মাধ্যমে সে অর্জন করে তত্ত্বীয় জ্ঞানের বাস্তব উপলব্ধি। শিক্ষার্থীর জানার আগ্রহ অসীম। সে চায় যেকোনাে অর্জিত জ্ঞানের বাস্তব অভিজ্ঞতা তাই শ্রেণিকক্ষে বইয়ের মাধ্যমে সে যে জ্ঞান অর্জন। করে তার প্রত্যক্ষ ও ফলপ্রসূ অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য সে ছুটে যায় প্রকৃতির কাছে জীবনের মুক্ত অঙ্গনে। শিক্ষার বাস্তব উপলদ্ধির জন্য মানব মনে যে আগ্রহ তার জন্য প্রয়ােজন হয় শিক্ষাসফরের। শিক্ষাসফরের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নানা বিষয়ে অর্জন করে প্রত্যক্ষ ও বাস্তব অভিজ্ঞতা। ফলে গ্রন্থপাঠে অর্জিত জ্ঞান ও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান দুয়ে মিলে অর্জিত হয় শিক্ষার্থীর পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা।

 

শিক্ষাসফরের গুরুত্ব

শিক্ষার্থীর জ্ঞানের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ ও সম্প্রসারিত করার ক্ষেত্রে শিক্ষাসফরের গুরুত্ব অপরিসীম। শ্রেণিকক্ষের সীমিত পরিসরে শিক্ষার্থী বইয়ের মাধ্যমে জানতে পারে নানা অজানা তত্ত্ব। আর শিক্ষাসফরে গিয়ে তারা অধীত বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত নানা তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। বইয়ের মাধ্যমে তারা কোনাে বিষয়ে যে ধারণা পায় শিক্ষা সফরের মাধ্যমে তার সাথে প্রত্যক্ষ যােগাযােগ ঘটে ফলে তাদের অর্জিত শিক্ষা অধিকতর সমৃদ্ধ ও ফলপ্রসূ হয়। কেননা শ্রেণিকক্ষের মাধ্যমে মেধার সার্বিক বিকাশ সাধনের ক্ষেত্রে শিক্ষাসফরের বিকল্প নেই। নির্দিষ্ট পরিসরে অর্জিত জ্ঞানের তুলনায় বাস্তব অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের গভীরতা অনেক বেশি।

 

আমাদের শিক্ষা সফর

আমাদের বিদ্যালয় শিক্ষা সফর এই বছরই নতুন নয়। ইতিপূর্বেও অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালীন বিদ্যালয় থেকে আমাদের শিক্ষা সফরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেই সময় মূলত ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের দিকে নজর দেওয়া হলেও এবারের সফরে ছাত্র ছাত্রীর সার্বিক বিকাশ মুলক ভ্রমণের দিকে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।একটি শিক্ষা সফরের দ্বারা একজন শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশ তখনই সম্ভব যখন সেই সফরের বহুমুখী তাৎপর্য থাকে। তাই সব দিক বিচার করে এই বছর আমাদের বিদ্যালয় কতৃর্পক্ষের তরফ থেকে সুন্দরবনকে আমাদের শিক্ষা সফরের জন্য সংশ্লিষ্ট স্থান হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছিল।

 

স্থান নির্বাচনের কারণ

সুন্দরবনকে আমাদের শিক্ষা সফরের জন্য নির্বাচন করার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ বিদ্যমান। এই কারণগুলির সম্বন্ধে আমরা আমাদের শিক্ষকমন্ডলীর থেকে জানতে পেরেছি। এইবারের শিক্ষা সফরের জন্য স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম মাথায় রাখা হয়েছিল শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিকাশের কথা। শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিকাশের জন্য সফরের স্থানটির বহুমুখী গুরুত্ব থাকা প্রয়োজন।সেই দিক থেকে দেখতে গেলে সুন্দরবন একদিকে যেমন ভূ প্রকৃতির দিক থেকেও অনন্য অন্যদিক থেকে আবার উদ্ভিদ ও প্রাণী জগতের বিবিধ বৈচিত্রের ব্যাপারেও সুন্দরবনের জুড়ি মেলা ভার। তাছাড়া জলপথে শিক্ষামূলক ভ্রমণের যে উপাদেয় অভিজ্ঞতা সুন্দরবনে লাভ করা সম্ভব তা সম্ভবত দেশের অন্য কোথাও সম্ভব নয়। সেজন্য আমাদের এবছরের শিক্ষা সফরের পক্ষে সুন্দরবন অপেক্ষা অধিক উপযুক্ত স্থান আর কি বা হতে পারত।

 

যাত্রাপথ এবং ভ্রমণ পরিকল্পনা

আমাদের বিদ্যালয় থেকে একাদশ শ্রেণীর মোট ৪২ জন ছাত্র সুন্দরবনের শিক্ষাসফরে যাওয়ার জন্য নাম নথিভুক্ত করেছিল। আমাদের সঙ্গে আরো ১০ জন শিক্ষকের যাওয়ার জন্য একটি বাস ভাড়া করা হয়েছিল। বিগত অক্টোবর মাসের ১২ তারিখ রাত ন’টা নাগাদ আমরা সকলে বাসটিতে করে সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে রওনা দিই। পরের দিন ভোরবেলা খুলনা জেলার বাগেরহাট হয় আমাদের বাস পৌঁছায় মংলাতে।

সেইখান থেকে লঞ্চে করে যাওয়া হয় সুন্দরবন। যাবার পথেই আমাদের শিক্ষকরা সমগ্র ভ্রমণ পরিকল্পনা বিস্তারিতভাবে সবাইকে বুঝিয়ে দেন। আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল জামতলা সৈকত। সেখান থেকে হিরণ পয়েন্ট হয়ে কটকা বিচ। মধ্যিখানে পড়বে মান্দারবাড়িয়া সৈকত। মোট চারটি রাতের সফর পরিকল্পনা।

 

ভূপ্রকৃতি সম্বন্ধিত জ্ঞানলাভ

মংলা থেকে লঞ্চে করে সুন্দরবন রওনা হওয়ার পর থেকেই একটু একটু করে অনুভূত হতে থাকে সুন্দরবনের শোভা। সেইসঙ্গে আমাদের শিক্ষকেরাও সকলের কাছে সুন্দরবনের ভূপ্রকৃতি এবং তার প্রভাব সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে থাকেন। তাদের কাছে আমরা জানতে পারি সুন্দরবন হলো পৃথিবীর সবথেকে বড় লবণাক্ত বনাঞ্চল।

১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে সুবিস্তৃত এই অরণ্য ভারত এবং বাংলাদেশ এই দুই দেশের মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা, এবং বাংলাদেশ খুলনা সাতক্ষীরা বাগেরহাট পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার অংশ নিয়ে গঠিত এই সুন্দরবন। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছিল।বাংলাদেশের সুন্দরবনের ১৮৭৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে অপূর্ব মনোরম নদী নালা তথা জনাকীর্ণ অঞ্চল। তাছাড়া প্রায় সমগ্র সুন্দরবনই ঘন বনাঞ্চল দ্বারা আবৃত। এখানকার মাটি স্বভাবগতভাবেই লবণাক্ত এবং খানিকটা দক্ষিনে অগ্রসর হলেই মিলবে বঙ্গোপসাগরের সীমানা। ভূ প্রকৃতিগত এমন অবস্থানের কারণেই সুন্দরবন অঞ্চল বিভিন্ন স্থলচর ও জলচর পশুপাখির স্বর্গ বলে বিবেচিত হয়।

 

অরণ্যানী পরিদর্শন

মংলা থেকে সুন্দরবনের দিকে প্রাথমিক পর্বেই যা চোখে পড়ে তাহলে অরন্যের বিপুল বাহার। আমাদের পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষক বললেন সুন্দরবনের প্রায় ৩৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ পাওয়া যায়। তার মধ্যে বেশকিছু আবার দুষ্প্রাপ্য। মাটিতে লবণের ভাগ বেশি থাকার কারণে এখানকার উদ্ভিদের সিংহভাগই ম্যানগ্রোভ প্রজাতির। তবে যে গাছটি এখানে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে তা হল সুন্দরী গাছ।এই গাছটির নামেই সুন্দরবনের নামকরণ হয়েছিল বলে মনে করা হয়। তাছাড়া এখানকার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গাছগুলির মধ্যে চোখে পড়ল গরান গেওয়া এবং বিখ্যাত গোলপাতা গাছ। ঘন অরণ্যানীর ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করা সূর্যের আলোয় দেখা গেল ধুন্দুল ও কেওড়া গাছ শন নলখাগড়া ইত্যাদি। আমাদের শিক্ষকরা বুঝিয়ে দিলেন ঘন অরণ্য একদিকে যেমন সুন্দরবনের প্রাথমিক বনজ চরিত্র অন্যদিকে আবার এই অরণ্যই সুন্দরবনের উল্লেখযোগ্য জীব বৈচিত্রের জন্য পটভূমি রচনা করে।

 

বন্যপ্রাণী পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা

অরণ্য পরিদর্শনের ফাঁকে ফাঁকেই মাঝেমধ্যে চোখে পড়ছিল রংবেরঙের নাম না জানা নানা পাখি দু একটা হরিণ গাছে ঝুলতে থাকা মৌচাক ইত্যাদি। আমাদের শিক্ষকেরা নিজেদের সাধ্যমতন পাখিগুলির ব্যাপারে আমাদের কাছে ব্যাখ্যা করেছিলেন। এরই মধ্যে একটি হরিণ চোখে পড়ায় শিক্ষকদের থেকে আমরা জানতে পারি এটি হলো সুন্দরবনের বিখ্যাত চিত্রা হরিণ।এরপর একটি ছোট সৈকতের টাওয়ার থেকে সুন্দরবনের সৌন্দর্য পরিদর্শনের সময় হঠাৎ দেখা মেলে বহু আকাঙ্খিত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের। যদিও তারপরে আরো একবার বেঙ্গল টাইগারের দেখা মিলেছিল। বাঘ দেখার সেই অনুভূতি জীবনে কখনো ভোলার নয়। এছাড়া ভ্রমণের সময় নানা ধরনের নাম না জানা প্রাণী সাপ গিরগিটি ইত্যাদির সাথে আমাদের পরিচয় ঘটে।

 

জলজ প্রাণীদের সঙ্গে পরিচিতি

তৃতীয় দিন শুরু হয় জলপথে আমাদের সুন্দরবন ভ্রমণ। শিক্ষকরা আমাদের বলেন সুন্দরবনের স্থলভাগের সাথে সাথে জলভাগেও ব্যাপক জীব বৈচিত্র দেখা যায়। নদীর মোহনা অত্যন্ত কাছাকাছি হওয়ায় প্রায় ৩০০ প্রজাতির শিরদাঁড়াযুক্ত মাছ ১২ প্রজাতির কাঁকড়া ও চিংড়ি বিভিন্ন ধরনের শামুক এবং ৮ প্রকারের উভচর প্রাণীর অস্তিত্ব সুন্দরবনে পাওয়া গেছে।এর মধ্যেই লঞ্চ থেকে চোখে পড়ল গাঙ্গেয় ডলফিন বা শুশুকের আনাগোনা। স্থানীয় গাইডের কাছ থেকে আমরা জানতে পারলাম সম্প্রতি ক্রমবর্ধমান দূষণ এবং অন্যান্য কারণে সুন্দরবনের জলভাগে মাছের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কমে এসেছে। লঞ্চ থেকে শিক্ষকরা আমাদের দেখালেন দূরে নদীর পাড়ে কাদার উপর রোদ পোহাচ্ছে সুন্দরবনের বিখ্যাত কুমির। তারপর লঞ্চের মাধ্যমে কটকা বিচে পৌঁছে চোখে পড়ল অসংখ্য লাল কাঁকড়া।

 

স্থানীয় জীবনে একদিন

ভ্রমণের চতুর্থ অর্থাৎ শেষ দিন আমরা সুন্দরবনের স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে সময় কাটালাম। অদ্ভুত সরল মনের স্থানীয় অধিবাসীরা আমাদেরকে নিজেদের দায়িত্বে ঘুরিয়ে দেখান তাদের গ্রাম জঙ্গল ক্ষেত ইত্যাদি। এখানেই তাদের সাথে আমরা প্রথম দেখতে পেলাম মৌচাক ভেঙে মধু সংগ্রহ করার পদ্ধতি।এই সময় শিক্ষকদের কাছ থেকে আমরা জানতে পারলাম এখানকার মানুষ খাদ্য আশ্রয় তথা অর্থনৈতিকভাবে সম্পূর্ণরূপে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। সে কারণে জঙ্গলকে এখানকার স্থানীয় মানুষেরা বনবিবি রপে পূজা করে। এদের দেখে আমরা শিখলাম সমগ্র পৃথিবী আধুনিকতার দিকে এগিয়ে গেলেও এরা এখনও প্রকৃতির ওপর প্রাগৈতিহাসিক নির্ভরশীলতার মধ্যেই জীবনের সার্থকতা খুঁজে নেয়।

 

শিক্ষাসফরের উদ্দেশ্য

আমাদের এ পৃথিবী বিচিত্র রহস্যে পরিপূর্ণ। দেশে দেশে ছড়িয়ে আছে কত বিচিত্র স্থান বিচিত্র জাতি বিচিত্র জীবনধারা বিচিত্র সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল তার ইয়ত্তা নেই। প্রকৃতির যে কত বৈচিত্র্য কত অফুরন্ত বৈভব তা প্রকৃতির সান্নিধ্যে না গেলে বােঝা যাবে না। দেশ বিদেশের ইতিহাস সম্পর্কেও আমরা বইয়ে যে ধারণা লাভ করি তার পূর্ণতা পেতে পারি নানা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন শিলালিপি অনুলিপি বাস্তবে দেখে। বইয়ের মাধ্যমে যে মহৎ উপলব্দি আমরা পাই তাকে পূর্ণ ও সার্থক করতে হলে প্রয়ােজন বাস্তব অভিজ্ঞতা। আর এ অভিজ্ঞতা অর্জন করানেই শিক্ষাসফরের উদ্দেশ্য। এক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের উক্তি প্রণিধানযােগ্য:

প্রত্যক্ষ বস্তুর সহিত সংস্রব ব্যতীত ওনই বলাে
চরিত্রই বলাে নির্জীব ও নিস্ফল হতে থাকে।

উন্নত বিশ্বে শিক্ষাসফর ব্যতীত শিক্ষাকে কল্পনাই করা যায় না। কেননা অধীত বিষয়ের তত্ত্বীয় উপলব্ধিকে শিক্ষাসফরের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ বিশ্লেষণ করে শিক্ষার্থীর কাছে পূর্ণাঙ্গভাবে উপস্থাপন করা সেসব দেশের শিক্ষাপদ্ধতি। অর্থাৎ শিক্ষাসফর ব্যতীত শিক্ষার্জন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। বলা যায় কোনাে বিষয়ে মনের উপলব্ধিকে বাইরের জগতের সাথে যােগাযােগ ঘটানাের মহান ব্রতই পালন করে শিক্ষাসফর।

 

শিক্ষাসফরের সাংগঠনিক গুরুত্ব

শিক্ষাসফর কেবল শিক্ষাকে গভীর ও ফলপ্রসূ করে না এর সাংগঠনিক গুরুত্বও অনেক নির্দিষ্ট কর্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে শিক্ষাসফরের আয়ােজন করতে হয়। যেমন শিক্ষাসফরে অংশগ্রহণকারীদের ঠিক করে নিতে হয় তারা কোথায় যাবে কোথায় থাকবে কী খাবে ককী তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে কখন যাত্রা করতে হবে ইত্যাদি। এসবের মাধ্যমে তাদের ভেতরে দলগত কাজের উদ্যোগ ও কর্ম সম্পাদনের অভিজ্ঞতা জন্মে। আবার এক সাথে কাজ করতে গিয়ে পরস্পরের প্রতি সহযােগিতার মনােভাবও সৃষ্টি হয়। তাছাড়া শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যেও আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়। শিক্ষাসফরের সুশৃঙ্খল পরিচালনার মধ্য দিয়ে জীবনের নানা ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের স্পৃহাও তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে।

 

শিক্ষাসফর ও দেশভ্রমণ

শিক্ষাসফর ও দেশভ্রমণ দুটোরই উদ্দেশ্য জীবন ও জগৎ সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন। তবে দুটোর মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। শিক্ষাসফরের সাথে সম্পর্ক হলাে শিক্ষার্জনের আর দেশভ্রমণের সাথে সম্পর্ক হলাে আনন্দ লাভের। অর্থাৎ দেশভ্রমণে আনন্দই মুখ্য কিন্তু শিক্ষাসফরে আনন্দ মুখ্য নয়। যেমন পাহাড়পুর সােনারগাঁ কিংবা ময়নামতিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা ইতিহাস বই থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানের সাথে বাস্তব নিদর্শনের মেলবন্ধন রচনা করবে। আর যিনি কেবল ভ্রমণের উদ্দেশ্যে সেখানে যাবেন তার কাছে ঐতিহাসিক এসব নিদর্শনের সৌন্দর্য উপভােগই প্রধান হয়ে উঠবে। আবার ভ্রমণবিলাসী মানুষের কাছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের দৃষ্টিনন্দিত সৌন্দর্যই প্রধান। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এখানে এসে সামুদ্রিক পরিবেশ সামুদ্রিক প্রাণী ও সামুদ্রিক মাছের সাথে পরিচিতি লাভ করে। এককথায় শিক্ষাসফর আনন্দপিয়াসী মানুষের ভ্রমণ বিলাসিতা নয় তা শিক্ষারই একটি প্রধান অঙ্গ।

 

শিক্ষাসফর ও জাতীয়তাবােধ

আজকের যারা শিক্ষার্থী তারাই দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার। ফলে দেশের নানা বিষয় সম্পর্কে তাদের জানতে হবে দেশের অবস্থা উপলব্ধি করতে হবে। শিক্ষাসফর এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। শিক্ষাসফরের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতি বিষয়ে জানতে পারে। জানতে পারে দেশের অর্থনৈতিক সম্পদ সম্ভাবনা সীমাবদ্ধতা শিল্পোন্নয়ন ও শিল্পসমস্যা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সম্পর্কে। দেশের সাধারণ মানুষের কাছাকাছি যাবার সুযােগও তারা পায়। ফলে দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি তারা মমত্ব অনুভব করে এবং দেশ গড়ার স্বপ্নে অনুপ্রাণিত হয়।

 

শিক্ষাসফরের প্রক্রিয়া

গ্রন্থপাঠে অর্জিত জ্ঞানের পূর্ণতা প্রদানের জন্যই শিক্ষাসফরের আয়ােজন করা হয়। এটি সাধারণত শ্রেণিভিত্তিক কিংবা দলীয়ভাবে সম্পাদিত হয়। নির্ধারিত বিষয়ের সঙ্গে সংগতি রেখে নির্বাচিত হয় সফরের স্থান। শিক্ষাবর্ষের যেকোনাে নির্দিষ্ট সময়ে কিংবা কোনাে ছুটিতে শিক্ষাসফরের পরিকল্পনা করা হয়। এর জন্য পর্যাপ্ত অর্থ তহবিল গঠন করা হয়। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকগণ সফরের নির্দেশকের দায়িত্ব পালন করেন।

 

উপসংহার

শিক্ষাকে জীবনমুখী ও বাস্তবানুগ করতে হলে শিক্ষাসফরের বিকল্প নেই। অধীত বিষয়ের বাস্তব ভিত্তিক জ্ঞান প্রদান করে শিক্ষাসফর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সীমাবদ্ধ পরিসরে অর্জিত শিক্ষা এবং শিক্ষাসফরের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাল শিক্ষার মেলবন্ধনে অর্জিত হয় শিক্ষার্থীর প্রকৃত ও পূর্ণাজ্ঞা শিক্ষা। তাই শিক্ষাসফর শিক্ষার্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।


আরো দেখুন (প্রবন্ধ রচনা) :

 

Click to rate this post!
[Total: 1 Average: 5]

Leave a Reply Cancel reply