Close Menu
  • সি-ক্যাটাগরি ফার্মেসী কোর্স পরীক্ষার প্রস্তুতি
  • ব্যাকরণ
  • বাংলা প্রবন্ধ রচনা
  • তথ্যকোষ
  • সাধারণ জ্ঞান
  • Grammar
  • Essay / Composition
  • List of Paragraphs
eNoteShare
Facebook X (Twitter) Instagram
Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest YouTube LinkedIn WhatsApp
eNote Share
MAG
eNote Share

রচনা: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস [20 পয়েন্ট]

eNoteShareBy eNoteShareUpdated:19-07-20221 Comment12 Mins Read Uncategorized
একুশে ফেব্রুয়ারি / মাতৃভাষা দিবস

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি
দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায়।
নিজ দেশ তেয়াগী কেন বিদেশ ন যায়– আবদুল হাকিম

ভূমিকা

মানুষ ভাবের বিনিময় করে ভাষার মাধ্যমে। এ ভাষার গুণেই পৃথিবীর সকল প্রাণী থেকে মানুষ স্বতন্ত্র মর্যাদার অধিকারী। মানুষ তার হাসি আনন্দ দুঃখ বেদনা সবকিছুই প্রকাশ করে ভাষার মাধ্যমে। মাতৃভাষা ছাড়া তৃপ্তি মিটিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করা যায় না। মাতৃভাষার এ গুরুত্বের কথা ভেবেই পৃথিবীর প্রায় সবদেশেই প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় মাতৃভাষার মাধ্যমে। মাতৃভাষার ভেতর দিয়েই শিশুর মনে স্বদেশপ্রেমের সূত্রপাত ঘটে। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। বিদেশি শাসকরা এ ভাষাকে যুগে যুগে পদানত করতে চেয়েছে। তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে এদেশের মানুষ। করেছে ভাষা আন্দোলন। অনেক রক্ত ঝরেছে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে অকাতরে জীবন দিয়ে তার বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলা ভাষার মর্যাদা। একুশে ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত।

 

ভাষা আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

১৯৪৭ সালের দেশবিভাগের মাধ্যমে পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বাংলাদেশের শিক্ষা শিল্প সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার চেষ্টা চালায় যার পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্টি হয় ভাষা আন্দোলন। বাঙালির মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত যে আন্দোলন হয়েছে তাকে ভাষা আন্দোলন বলা হয়। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি করাচিতে পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়েছিল। সেখানে গণপরিষদের ভাষা হিসেবে গৃহীত হয় উর্দু এবং ইংরেজি। বাংলাকেও গণপরিষদের ভাষা হিসেবে গ্রহণের দাবি জানানো হয়। কিন্তু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানসহ মুসলিম লীগের নেতারা এর বিরোধিতা করেন। ফলে ২ মার্চ ঢাকায় ফজলুল হক মুসলিম হলে এক সভায় বাংলা ভাষার পক্ষে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। এ পরিষদ ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ সাধারণ ধর্মঘট আহ্বান করে এবং ছাত্ররা শোভাযাত্রা নিয়ে রাজপথে নামে। শোভাযাত্রায় পুলিশ নির্বিচারে গুলি ও লাঠিচার্জ করলে অনেক ছাত্র মারাত্মকভাবে আহত হয়। এর প্রতিবাদে ১৩ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালন এবং ১৫ মার্চ পর্যন্ত এ ধর্মঘট অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ প্রথম ঢাকায় আসেন। তিনি ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক জনসভায় ঘোষণা করলেন Urdu and only Urdu will be the State Language of Pakistan. এর প্রতিবাদে ২৬ মার্চ ঢাকায় ধর্মঘট পালিত হয়। ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জিন্নাহর মৃত্যুর পর ১৮ নভেম্বর ঢাকায় আসেন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান। এর আগের দিন ঢাকায় গঠিত হয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ। ১৯৫০ সালে গণপরিষদে ভাষণ দিতে গিয়ে জিন্নাহকে অনুসরণ করে লিয়াকত আলী খান বললেন দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। এর প্রতিবাসে ঢাকার রাজপথ গরম হয়ে ওঠে এবং ৩০ জানুয়ারি পালিত হয় ধর্মঘট। ১৯৫২ জনরোষের ভয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে এক মাসের জন্য ঢাকা জেলার সর্বত্র ধর্মঘট জনসভা শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারির ঘোষণা দেয়। কিন্তু ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে নামলে পুলিশ নির্মমভাবে গুলিবর্ষণ করে। পুলিশের গুলিতে শহিদ হন রফিক জব্বার সালাম বরকত এবং নাম না জানা আরও অনেকে। শহিদদের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয় এবং ২১ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় মর্যাদায় পালন করা হয় শহিদ দিবস হিসেবে।

 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি

১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ফ্রান্সের প্যারিসে ইউনেস্কোর সাধারণ পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাঙালি জাতির জন্য এ এক বিরাট গৌরব। একদিকে সারা বিশ্বের মানুষ জানতে পারবে বাংলাদেশ নামে একটি দেশের কথা বাঙালি জাতি ও বাংলা ভাষার কথা অন্যদিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেশের ভাষাগুলো মর্যাদা লাভের পথ খুঁজে পাবে। বলা যায় ভাষার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এক বিরাট ভূমিকা পালন করবে।

 

মাতৃভাষা ও বর্তমান বাংলাদেশ

বাংলাদেশ বরাবরই নিজের মাতৃভাষার রক্ষার প্রতি অপরের তুলনায় অধিক সচেতন এবং প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যে ভাষাকে রক্ষার জন্য জীবন দিয়েছিল শত শত তরুণ হাজারো প্রাণ ঝরে গিয়েছিল অকালে সেই ভাষার রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা অনস্বীকার্য। দক্ষিণ এশিয়ার বুকে ক্ষুদ্র এই দেশটির মাতৃভাষা বাংলা বাংলা ভাষাকে এই দেশ নিজের মায়ের মত করে ভালোবাসে। বলা হয়ে থাকে বাংলা ভাষার সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে পরম যত্নে বাংলাদেশ বাঁচিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশের জাতীয় ভাষা হিসেবে বাংলা পৃথিবীর বুকে নিজের এক অন্যতম স্থান করে নিয়েছে। বাংলাদেশ প্রমাণ করে দিয়েছে এই ভাষার অবলম্বনকারী মানুষ নিজের সংস্কৃতি এবং কৃষ্টিকে রক্ষায় রক্ত ঝরাতেও পিছুপা হয়না।

 

মাতৃভাষার বিকৃতি ও অবজ্ঞা

বর্তমান যুগে বিশ্বব্যাপী অপসংস্কৃতির ব্যাপক চর্চায় ছাড় পায়নি মাতৃভাষাও। এ কথা সত্য যে ভাষা হল মানুষের ভাব প্রকাশের একটি প্রাণবন্ত ও প্রগতিশীল মাধ্যম। পৃথিবীর প্রত্যেকটি ভাষার মধ্যে অন্য অনেক ভাষার প্রভাব সর্বদাই লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু তা বলে নিজের মাতৃভাষাকে বিকৃত করে অন্য ভাষা থেকে ধার করা শব্দবন্ধের সংযোজন কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। একবিংশ শতাব্দীর এই বিশ্বায়নের কালে মানুষ যতই বিশ্ব নাগরিক হতে চাইছে নিজের মাতৃভাষার প্রতি অবজ্ঞা ততই বেড়ে চলেছে। আমাদের মনে রাখা দরকার নিজের মাতৃভাষাকে ভালো না বাসলে কোন মানুষ পৃথিবীর অন্য কোন ভাষাকে আদর্শরূপে আয়ত্ত করতে পারে না। মাতৃভাষা কোন একটি জনগোষ্ঠীর ঐতিহাসিক ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে ধারণ করে।তদপুরি সার্বিক সামাজিক চরিত্রকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও মাতৃভাষার অবদান সবচেয়ে বেশি। তাই কোন সমাজে মাতৃভাষায় অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ভাষার বিকৃতি এবং অবজ্ঞা সমাজের নৈতিক অবক্ষয় ডেকে আনে, যা পরবর্তীতে একটি জনগোষ্ঠীর পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

 

মাতৃভাষা দিবসের আনন্দ উৎসব

মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পাওয়ায় সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাতৃভাষা দিবস উৎসবের আয়োজন করে ১৯৯৯ সালের ৭ ডিসেম্বর। উৎসবটি পালিত হয় ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে।একুশ আমাদের অহংকার একুশ পৃথিবীর অলঙ্কার অমর একুশ অজয় হয়েছে–এরকম অজস্র কথা কবিতা গদ্য নৃত্যছন্দে জমজমাট আনন্দ উৎসবের মধ্যে পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি উপলক্ষে দিনভর রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে আনন্দ শোভাযাত্রা আলোচনা নৃত্য সংগীত আবৃত্তি ইত্যাদি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পালিত হয় এ উৎসব।

 

ভাষা আন্দোলনের আদি কথা

পাকিস্তান সৃষ্টির পূর্বমূহুর্তে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ড জিয়াউদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব উপস্থাপ করেন। পূর্ববঙ্গ থেকে ড মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এ প্রস্তাবের ঘোর বিরোধিতা করেন এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপন করেন (১১ শ্রাবণ ১৩৫৪ বঙ্গাব্দ)। এভাবেই ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে।

 

রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের খবর সারা দেশে বিদ্যুৎবেগে পৌঁছে যায় এবং দেশবাসী প্রচণ্ড বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। অতঃপর পাকিস্তান সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৫৬ সালের সংবিধানে সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে অনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়।

 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন

২০০০ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি স্মরণীয় দিন।বাংলা ভাষাকে জাতীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে যারা জীবন দিয়েছেন তাঁদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সারা দেশের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ ছুটে যায় শহিদ মিনারে। জাতিসংঘের মহাসচিব এ দিবসটি পালন উপলক্ষে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে বার্তা প্রেরণ করেন। বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবারই প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটি উদযাপন করে। তাই বাংলাদেশের ইতিহাসে এ দিনটি অব্যয় ও অক্ষয় হয়ে থাকবে।

 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রেক্ষাপট

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রেক্ষাপটকে গোড়া থেকে বোঝার জন্য আমাদের ফিরে যেতে হবে সেই ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দেরও আগে। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়নি তখনো। সেই সময়ে ভারতবর্ষ থেকে সদ্য বিভক্ত হয়ে যাওয়া পাকিস্তানের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান রূপে পরিচিত ছিল আজকের গৌরবময় বাংলাদেশ। পাকিস্তানের প্রধান তথা বৃহত্তর অংশের জনগোষ্ঠী মূলত উর্দু ভাষাভাষী হলেও পূর্ব পাকিস্তানের মাতৃভাষা ছিল বাংলা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী এই অঞ্চলের মানুষদের ওপর জোর করে উর্দু ভাষা চাপিয়ে দিতে চায়। মাতৃভাষার সাথে জড়িয়ে থাকে বহু প্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্য এবং আবেগ। কোন ভাষার বিস্তৃতির সাথে সেই ভাষাগোষ্ঠীর ঐতিহ্য ও আবেগেরও বিস্তৃতি ঘটে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই জোর করে উর্দু চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে আন্দোলনে ফেটে পড়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান। ১৯৪৭ এ দেশবিভাগের পর থেকেই বাংলা ভাষার ওপর জোর জুলুম তীব্রতর হতে থাকে। এর প্রতিবাদে তীব্র হয় ভাষা আন্দোলনও।

১৯৫২ তে তা চরম আকার নেয়। ওই বছরের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত তরুণ ছাত্র ছাত্রীদের ওপর পুলিশের নির্মম গুলিবর্ষণে কয়েকটি তাজা প্রাণ অকালে ঝরে যায়। এদের মধ্যে অন্যতম হলো রফিক জব্বার সালাম শফিউল বরকত সহ অনেকেই। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এই মহান দিনটিকে স্মরণ করেই ২০১০ খ্রিস্টাব্দ থেকে জাতিসংঘ এই দিনে বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ

ইতিহাসে যতদূর জানা যায় তা হল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বপ্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করেন কানাডার ভেঙ্কুভারে বসবাসকারী দুই বাঙালি রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম। তাদের সার্বিক উদ্যোগে প্রথমে প্রতিষ্ঠিত হয় মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভারস অব দ্য ওয়ার্ল্ড নামে একটি সংগঠন। এরপর আরও নানা সুধীজনের সহযোগিতায় বিভিন্ন ওঠাপড়ার শেষে ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। সেই অধিবেশনেই মোট ১৮৮টি দেশের সমর্থন সহযোগে প্রস্তাবটি পাশ হলে তার পরের বছর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখে জাতিপুঞ্জের সদস্য দেশগুলিতে যথাযথ মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়ে আসছে। এরপরে ২০১০ সালের একুশে অক্টোবর সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে জাতিপুঞ্জ স্বয়ং একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে পালনের উদ্যোগ নেয়। এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিল বাংলাদেশ। তার পরের বছর মে মাসে জাতিপুঞ্জের ১১৩ সদস্য বিশিষ্ট তথ্য বিষয়ক কমিটিতে উক্ত প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতিষ্ঠা পূর্ণতা লাভ করে।

 

মাতৃভাষা ও সাহিত্য

মাতৃভাষা এবং সাহিত্যচর্চা পরস্পর ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই বক্তব্যটির প্রকৃত অর্থকে বুঝতে গেলে সর্বপ্রথম আমাদের সাহিত্যের স্বরূপ অনুধাবন করতে হবে। সাহিত্য হল আমাদের মনের ভেতরকার সেই সব কল্পনা যাকে আমরা ভাষার মাধ্যমে জীবন্ত রূপ দিতে চাই। এ বিশ্বে যা কিছু প্রাকৃতিক এবং স্বাভাবিক তা কিছুই সুন্দর। মানুষ স্বাভাবিকভাবে নিজের মনের অন্দরমহলে সাহিত্যিক কল্পনার রূপ দান করে আপন মাতৃভাষায় চিন্তার মাধ্যমে। তাই কোন মানুষ যদি নিজের মাতৃভাষায় দুর্বল হয় তার পক্ষে সমৃদ্ধ সাহিত্যকে রূপ দান করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এমন সাহিত্য গড়ে উঠলেও তা নিজের স্বাভাবিকত্ব হারিয়ে সুন্দরকে পাশ কাটিয়ে হয়ে পড়ে দুর্বল। খেয়াল করলে দেখা যাবে এই পৃথিবীতে বিশ্বমানের যত সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছে প্রত্যেকটির পিছনে লেখক বা লেখিকার মাতৃভাষার অবদান সবথেকে বেশি। কারণ নিজের মাতৃভাষায় যত স্নিগ্ধ বা নির্মল ভাবে চিন্তা করা যায় পৃথিবীর অন্য কোন ভাষায় অসীম জ্ঞান থাকলেও আবেগের অভাব হেতু চিন্তার সেই স্নিগ্ধতা বা গভীরতা কোনটাই আসেনা।

 

২১-এর দীক্ষা

শুধু মাত্র উৎসবের মধ্যে একুশকে সীমাবদ্ধ রাখা মোটেই আমাদের কাম্য হতে পারে না। একুশ আমাদের যে শিক্ষা দিয়েছে তা আমাদের দীক্ষা হিসেবে নিতে হবে। একুশ হবে আমাদের কর্মচাঞ্চল্যের উদ্দীপনা। ২১ এর সত্যিকার ইতিহাস আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। বাংলাভাষার বিকাশ ঘটানোর জন্য আমাদের সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে। যে লক্ষ্যে আমাদের দেশের মেধাবী ছাত্ররা জীবন দিয়ে গেছে সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদেরই পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও বাংলাদেশের গুরুত্ব

আজ আমরা বুক ফুলিয়ে বলতে পারি আমরাই প্রথম জাতি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য রক্ত দিয়েছি অকাতরে জীবন দিয়েছি। মাতৃভাষার জন্য রক্ত এবং জীবন দেওয়ার ইতিহাস পৃথিবীতে আর নেই। সেই রক্ত বৃথা যায় নি। বিশ্ববাসী স্বীকৃতি দিয়েছে আমাদের মাতৃভাষাকে। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভের সাথে সাথে বাংলাদেশের গুরুত্বও বৃদ্ধি পেল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। সেই সাথে বাংলা ভাষা হলো গৌরবের ভাষা।একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে বাঙালির সংগ্রামের ও আত্মত্যাগের ঘটনা বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানা অতিক্রম করে আন্তর্জাতিক রূপ লাভ করল। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের মাধ্যমে বিশ্ববাসী অনুভব করতে সক্ষম হবে মাতৃভাষা একটি দেশের জাতিসত্তার প্রধান বিবেচ্য বিষয়। তাই যখনই তাদের মাতৃভাষার ওপর কোনো আঘাত আসবে তখনই তারা আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠবে তাদের মাতৃভাষাকে রক্ষা করার জন্য। এর সাথে গুরুত্বের সাথে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের নাম।

 

মাতৃভাষা দিবস প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ

মাতৃভাষা দিবসের সঠিক ইতিহাস বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য বাংলাদেশ সরকার কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। গৃহীত পদক্ষেপগুলো নিম্নরূপ-

১. মাতৃভাষা গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত

আমাদের মাতৃভাষাকে নিয়ে গবেষণা এবং পৃথিবীর সকল মাতৃভাষাকে রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশ সরকার একটি l8মাতৃভাষা চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গোটা বিশ্বের পাঁচ ছয় হাজার মাতৃভাষার কোনটিই যেন হারিয়ে না যায় এ কেন্দ্রে সেই ব্যবস্থা করা হবে। ব্যবস্থা থাকবে বিভিন্ন ভাষা শিক্ষার। ফলে এ কেন্দ্র একদিন বিশ্বের সকল মাতৃভাষা সংরক্ষণে সহায়ক হবে। এজন্য বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে ভাষাতত্ত্ববিদ তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বের পন্ডিত বর্গ ও নৃতত্ত্ববিদদের এখানে কাজ করার আমন্ত্রণ জানানো হবে।এর ফলে বাংলা ভাষার বিস্তৃতি ঘটবে বিশ্বের অনেক দেশে।

 

২. বিশ্বভাষা মেলা আয়োজন

সেসময়ে ঠিক করা হয়েছিল আগামী মহান একুশে উপলক্ষে ঢাকায় আয়োজন করা হবে বিশ্বভাষা মেলা ও মহান সাহিত্যিকদের আলোকচিত্র প্রদর্শনী। এছাড়া থাকবে ভাষা বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান প্রামাণ্য চিত্র আবৃত্ত সংগীত পরিবেশন ইত্যাদি। মেলায় বাংলাদেশের একটি বড় স্টলসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্টল থাকবে।

 

৩. সিডি ও ভিডিও ক্যাসেট তৈরির পরিকল্পনা

বাংলা ভাষার উৎপত্তি বিবর্তন ও পরিচয় বর্ণনা করে তৈরি একটি সিডি ও ভিডিও ক্যাসেট অচিরেই বিশ্বের ১৮৮টি দেশে পাঠানো হবে। এছাড়াও জাতিসংঘের ৫টি ভাষা যথা— ইংরেজি ফারসি জার্মান স্প্যানিস ও আরবিতে সিডি ও ভিডিও ক্যাসেট তৈরি করা হবে।

 

জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রমে মাতৃভাষার প্রচলন

বাংলাদেশের মানুষের মাতৃভাষা এবং রাষ্ট্রভাষা বাংলা। কিন্তু জীবনের সবক্ষেত্রে আজ বাংলা ভাষার ব্যবহার ও প্রচলন হয়নি। ব্যবসায় বাণিজ্যে অফিস আদালতে উচ্চতর শিক্ষাব্যবস্থায় বাংলা ভাষাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। আমরা যদি জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবা মর্যা আসন লাভ করতে চাই তাহলে উচ্চতর পর্যায়ের বইগুলো বাংলা ভাষায় অনুবাদ করে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আমরা জানি বাংলা পৃথিবীর সপ্তম বৃহৎ ভাষা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভাষা। এ ভাষার গঠনপ্রণালি সম্পূর্ণ বিজ্ঞানভিত্তিক। কাজেই বিদেশি ভাষার প্রতি আনুগত্য ত্যাগ করে মাতৃভাষায় জ্ঞানচর্চা করা এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে এর প্রতি ভালোবাসা প্রদান করা আমাদের কর্তব্য। মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাসহ জীবনের সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনা যে সম্ভব তার বাস্তব প্রমাণ আধুনিক বিশ্বের চীন জাপান ফ্রান্স ইত্যাদি দেশ। কাজেই আমরা যদি জাতি হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত হতে চাই তবে আমাদেরকে বিদেশি ভাষার প্রতি আনুগত্য ত্যাগ করে জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রমসহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে বাংলা ভাষাকে প্রচলন করতে হবে।

 

উপসংহার

আমরা একুশ শতকে পদার্পণ করেছি। আমাদের জাতীয় জীবনে গত শতক ছিল আশা আকাঙ্ক্ষা সংগ্রাম যুদ্ধে ভরা টালমাটাল দিন। ইতিহাস থেকে আমরা অনেক কিছুই শিখেছি লাখ লাখ জীবনের বিনিময়ে। এদেশের মানুষ মাটির গন্ধ বড় বেশি ভালোবাসে। তাই তারা ভালোবাসে মাটির মাকে আর মায়ের মুখের ভাষাকে। বাংলা মায়ের সন্তানেরা বিশ্বের বুকে নতুন শতকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার জন্য আজ দৃঢ়প্রত্যয়ী। আর সেজন্য আমাদের জীবনের সবক্ষেত্রে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মাতৃভাষার প্রচলন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।


  • ভাষা আন্দোলন নিয়ে আরো লিখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন
  • প্রবন্ধ রচনা : ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা
Click to rate this post!
[Total: 41 Average: 4.2]

ফেব্রুয়ারি মুক্তিযুদ্ধ

Related Posts

জীবনে সফল হওয়ার ২১টি মন্ত্র

03-09-2024

মানুষকে অপমান না করেও সংশোধন করার অসাধারণ শিক্ষা

03-09-2024

কচ্ছপ আর খরগোশের গল্পের যা জানি তাতেই শেষ নয়, গল্পটি আরো বড়

03-09-2024

1 Comment

  1. Shohan on 24-05-2023 8:19 PM

    উপকৃত হোলাম

    Log in to Reply
Leave A Reply Cancel Reply

You must be logged in to post a comment.

সূচিপত্র

⭐ বাংলা রচনা - ৪১০ টি

⭐ ভাবসম্প্রসারণ - ৩০১ টি

⭐ অনুচ্ছেদ - ২৩১ টি

⭐ চিঠি-পত্র ও দরখাস্ত - ১৩৬ টি

⭐ প্রতিবেদন প্রণয়ন - ৭১ টি

⭐ অভিজ্ঞতা বর্ণনা - ৫২ টি

⭐ সারাংশ - ১৯১ টি

⭐ সারমর্ম - ১৫৮ টি

⭐ খুদে গল্প - ১৩৮ টি

⭐ ভাষণ লিখন - ৫৮ টি

⭐ দিনলিপি - ৩০ টি

⭐ সংলাপ - ১১০ টি

⭐ বাংলা ব্যাকরণ - ৬৫ টি পোস্ট

⭐ Composition / Essay - ৩০৯ টি

⭐ Paragraph - ৬২৯ টি

⭐ Letter - ১২৪ টি

⭐ Application - ৭৯ টি

⭐ Email - ৫২ টি

⭐ Dialogue - ৮৮ টি

⭐ Completing Story - ১১৭ টি

⭐ Poems or Stories - ৭৯ টি

⭐ Report Writing - ৫৩ টি

⭐ English Grammar - ৫০ টি পোস্ট

⭐ গাণিতিক যুক্তি - 123 Problems

⭐ লাইব্রেরি - ৭২২ টি বই

⭐ CV & Bio-Data - ১৯ টি

⭐ Job Cover Letter - ১৬ টি

⭐ সাধারণ জ্ঞান - ৪০০ টি পোস্ট

⭐ এক জাতীয় বিষয় - ১০ টি

⭐ তথ্যকোষ - ৩৩ টি পোস্ট

⭐ হ য ব র ল - ১৭ টি পোস্ট

⭐ বিজয় বাংলা টাইপিং টিউটোরিয়াল

Bangabandhu on One Click
Recent Comments
  • Galib on রচনা: মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু [11 পয়েন্ট]
  • Munna Mical on রচনা: মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু [11 পয়েন্ট]
  • Hairstyles on Grammar : Newspaper Vocabulary (1000+)
  • Anonymous on রচনা : বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ [ 20 পয়েন্ট ]
  • Tanzin on রচনা : বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলন (20 পয়েন্ট)
Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
  • About
  • Contact
  • Disclaimer
  • Privacy Policy
© 2025 eNoteShare. Publishing by SCSOFT.

Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

Go to mobile version