বাজারজাতকরণের প্রকৃতি আলোচনা কর।
অথবা, বাজারজাতকরণের বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা কর।
বাজারজাতকরণ হলো একটি সামগ্রিক ধারণা। যেসব অর্থনৈতিক কার্যাবলির মাধ্যমে উৎপাদনকারী কিংবা বিক্রয়কারীর কাছ থেকে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য দ্রব্য ও সেবা হস্তান্তরিত হয় তাই হলো বাজারজাতকরণ। বিনিময় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষের চাহিদা ও অভাব মেটানোর কাজে ব্যাপৃত থাকে বাজারজাতকরণ। বাজার সংক্রান্ত সংঘটিত মানবিক কার্যাবলি সূচিত হয় বাজারজাতকরণের মাধ্যমে। তাই বিভিন্ন লেখক কর্তৃক প্রদত্ত বাজারজাতকরণের সংজ্ঞা এর মাধ্যমে যে সকল বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো-
১. অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া
বাজারজাতকরণ হলো এক অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া। পণ্য ও সেবার বিনিময় এবং সে সাথে স্থানগত, সময়গত ও মালিকানাগত উপযোগিতা ইত্যাদি বিভিন্ন উপযোগিতা সৃষ্টির মাধ্যমে বাজারজাতকরণের উদ্দেশ্য সাধিত হয়। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পণ্য ও সেবা উৎপাদনকারীর কাছ থেকে ভোগকারীর কাছে পৌঁছায়।
২. সামাজিক প্রক্রিয়া
বাজারজাতকরণের মাধ্যমে সমাজের মানুষের কল্যাণ সাধিত হয়। এর মাধ্যমে সমাজের মানুষের প্রয়োজন ও অভাবের সন্তুষ্টি বিধান করা হয়। এজন্য Philip Kotler and Gary Armstorng বাজারজাতকরণকে একটি সামাজিক প্রক্রিয়া হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।
৩. আইনসম্মত চিন্তাধারা
বাজারজাতকরণ হলো এক ব্যাপক কর্মপ্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়া বিভিন্ন স্তরের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে পরিসমাপ্তি লাভ করে। প্রতিটি স্তরে প্রতিটি কাজের পেছনে সংশ্লিষ্ট আইনের স্বীকৃতি ও সমর্থন আছে। যেমন : পণ্য ক্রয়– বিক্রয়ের ক্ষেত্রে পণ্য বিক্রয় আইনের বিভিন্ন ধারা প্রযোজ্য ।
৪. গতিশীল প্রক্রিয়া
বাজারজাতকরণ হলো এক গতিশীল প্রক্রিয়া। গতিশীল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাজারজাতকরণের কার্যকলাপ সম্পাদিত হয়। ভোগকারীদের জীবনযাত্রার মান, রুচি, পছন্দ সবই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তনশীল। সেজন্য বাজারজাতকরণকে একটি গতিশীল প্রক্রিয়া হিসেবে আখ্যা দেয়া যেতে পারে।
৫. ক্রেতার সন্তুষ্টি
বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার অন্যতম উপায় হলো ক্রেতার সন্তুষ্টি। ক্রেতাদের সন্তুষ্টির মধ্যেই প্রতিষ্ঠানের ভবিষৎ নিহিত। কারণ একজন সন্তুষ্ট ক্রেতা শুধু নিজেই পণ্য কিনে না, অপরকেও পণ্য কিনতে উৎসাহিত করে।
৬. সুনির্দিষ্ট চিন্তাধারা
বাজারজাতকরণ হলো এক রকমের চিন্তাধারা। এ চিন্তাধারার মাধ্যমেই কারবারিক বিভিন্ন মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়। বিভিন্ন সময়ে কারবারিদের মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন বাজারজাতকরণ তত্ত্বের উদ্ভব হয়েছে।
৭. বিনিময় প্রক্রিয়া
বিনিময়ের মাধ্যমে মানুষ প্রয়োজন এবং অভাব পূরণের সিদ্ধান্ত নেয়, এজন্য Philip Kotler And Gary Armstrong বাজারজাতকরণকে বিনিময় প্রক্রিয়া হিসাবে অভিহিত করেছেন।
৮. চাহিদার পরিতৃপ্তি
বাজারজাতকরণের অন্যতম মূল লক্ষই হলো উপযুক্ত পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে ভোগকারীর চাহিদা মেটানো। বাজারজাতকরণ সংশ্লিষ্ট পণ্য ও সেবার বিভিন্ন ধরনের উপযোগিতা সৃষ্টির মাধ্যমে সেগুলোকে ভোগকারীর চাহিদা মেটানোর উপযোগী করে তোলে। কাজেই ভোগকারীর চাহিদার যথার্থ পরিতৃপ্তি সাধনই হলো বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ার অন্যতম মৌলিক বৈশিষ্ট্য।
৯. সমন্বিত প্রক্রিয়া
বাজারজাতকরণকে একটি সমন্বয়কারী প্রক্রিয়া হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। ভোগকারীর চাহিদার সাথে কারবারের প্রাপ্তব্য সম্পদ ও পরিবেশের সীমাবদ্ধতার মধ্যে সমন্বয়সাধন করতে হয়। পরিবেশের বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকার দরুন উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। কাজেই বাজারজাতকরণের কাজে সাফল্য পেতে হলে এদের মধ্যে সামঞ্জস্যবিধান করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই।
১০. উদ্দেশ্য অর্জনের প্রক্রিয়া
বাজারজাতকরণের মাধ্যমে উৎপাদন পণ্য বিক্রয় করে প্রতিষ্ঠান যেমন মুনাফার্জন করতে পারে তেমনি ভোক্তারা পণ্য ভোগ বা ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের সন্তুষ্টি বিধান করতে পারে। এভাবে বাজারজাতকরণ উভয়পক্ষের উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়তা করে।
পরিশেষে বলা যায় যে, বাজারজাতকরণের উপরোক্ত বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এসব বৈশিষ্ট্য বাজারজাতকরণকে অন্যান্য বিষয় থেকে স্বতন্ত্রভাবে উপস্থাপণ করেছে।