গণমাধ্যম
ভূমিকা
গণমাধ্যম সমাজ জীবনের দর্পন স্বরূপ। এটি এখন আমাদের জীবনের সমাজের একটি অংশ। বর্তমান সময়ে গণমাধ্যম এর প্রভাব প্রতিপত্তি নিঃসন্দেহে সর্বজন স্বীকৃত। যে পৃথিবীতে আমরা এখন বাস করছি তার এক একটা দিনের ইতিহাস হলো সেই দিনে গণমাধ্যমগুলোর বিষয়বস্তু। আমাদের চলমান জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত প্রতিটি কাজ ছোট ছোট ঘটনাগুলোই প্রতিফলিত হয় গণমাধ্যমে। তাই জীবন ও সমাজের সাথে গণমাধ্যম ওতোপ্রোতভাবে মিশে আছে। গণমাধ্যম একদিকে যেমন সমাজের চলমান চিত্র তুলে ধরছে তেমনি অন্যদিকে প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থাকে ভাঙছে গড়ছে প্রভাবিত করছে।
গণমাধ্যমের ইতিহাস
প্রথম নিয়মিত সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়েছিল জার্মানিতে, ১৬০৯ সালে। ১৭০২ সালে ডেইলি কুর্যান্ট নামে বৃটেনে প্রথম দৈনিক সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় ১৭৮০ সালে বেঙ্গল গেজেট নামে। বাংলায় প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্র ১৮১৮ সালে বাঙ্গাল গেজেট। আর তৎকালীণ পূর্ব বঙ্গে ১৮৪৭ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় রঙ্গপুর বার্তাবহ । এর পর ১৮৯৪ সালে রেডিও ১৯১৯ সালে চলচ্চিত্র এবং ১৯২৫ সালে টেলিভিশন আবিষ্কার হলে গণমাধ্যম জগতে বিপ্লব সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে প্রথম রেডিও সম্প্রচার শুরু হয় ১৯৩৯ সালে আর টিভি সম্প্রচার শুরু হয় ১৯৬৪ সালে।
গণমাধ্যমের প্রকার ও ব্যবহার
প্রকাশ ও প্রচারের ধরণভেদে গণমাধ্যম তিন ধরণের হয়ে থাকে। প্রথমত মুদ্রণ মাধ্যম যেমন সংবাদপত্র বই ম্যাগাজিন। দ্বিতীয়ত ইলেক্ট্রনিক মাধ্যম যেমন- রেডিও টিভি চলচ্চিত্র। তৃতীয়ত নিউ মিডিয়া বা নতুন মাধ্যম । এটি গণমাধ্যম সংক্রান্ত নতুন ধারণা। তথ্য প্রযুক্তির অবিশ্বাস্য সাফল্যের ফলে সৃষ্টি হয়েছে সক্রিয় ও কার্যকরী বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যম। যেমন ফেসবুক টুইটার ইউটিউব ইত্যাদি। এগুলোর বৈশিষ্ট্য ও ভূমিকা অনেকটা অন্যান্য গণমাধ্যমের মতোই। তাই এগুলোকে বলা হচ্ছে নিউ মিডিয়া। এর মধ্যে অনলাইন সংবাদপত্রও অন্তর্ভুক্ত। আমাদের জীবনে গণমাধ্যমের ব্যবহার এখন অবধারিত একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা পত্রিকা পড়ছি তাৎক্ষণিক সংবাদ পেতে রেডিও শুনছি টিভি দেখছি। অবসরে বিনোদন পেতে রেডিও টিভি চলচ্চিত্র বই ব্যবহার করছি। মানুষ প্রধানত চারটি কাজে গণমাধ্যম ব্যবহার করে। তথ্য জানার জন্য কোনো বিষয়ে শিক্ষা নেয়ার জন্য বিনোদন পেতে এবং প্রণোদিত হওয়ার জন্য। এখন সারাবিশ্বে অধিকাংশ মানুষই কোনো না কোনো গণমাধ্যম ব্যবহার করে।
গণমাধ্যমের বিরূপ প্রভাব
গণমাধ্যমের মধ্যে দৃশ্য মাধ্যম খুবই শক্তিশালী মাধ্যম। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ যেখানে নিরক্ষর কুসংস্কারাচ্ছন্ন অজ্ঞতা ও জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা ব্যাপকভাবে পরিদৃষ্টমান সেখানে দৃশ্যমাধ্যম শিক্ষামূলক না হয়ে ব্যাপকভাবে বিনোদনমূলক। বিশেষ করে স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলো অত্যন্ত বিনোদন ও প্রচারধর্মী। সমাজে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
গণমাধ্যমের দায়িত্ব
সমাজ সংস্কৃতি ও দেশের মানুষের প্রতি গণমাধ্যমের কিছু দায়িত্ব থাকে। গণমাধ্যমের দায়িত্ব হলো প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থাকে সবার সামনে তুলে আনা। যাতে মানুষ তার সমাজকে সঠিকভাবে জানতে পারে। আবার বিদ্যমান অসংগতিগুলো তুলে ধরাও গণমাধ্যমের দায়িত্ব। সততা বস্তুনিষ্ঠতা ভারসাম্য ও উচ্চমানের পেশাদারিত্বের মাধ্যমে মানুষকে সঠিক ও নির্ভুল তথ্য দেয়া গণমাধ্যমের অন্যতম দায়িত্ব। সমাজের বিদ্যমান প্রতিষ্ঠান ও আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকেই আত্মনিয়ন্ত্রিত হয়ে মানুষকে তার সমাজের আদর্শ মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানানো গণমাধ্যমের দায়িত্ব। অপরাধ সহিংসতা জন অসন্তোষ সৃষ্টিকারী তথ্য প্রচার করা থেকে বিরত থাকা গণমাধ্যমের দায়িত্ব।
গণমাধ্যমের প্রভাব
বর্তমান সময়ে গণমাধ্যমের চরম উৎকর্ষ ও ভূমিকার কারণে আমরা অনেক বেশি গণমাধ্যমমুখী হয়ে পড়েছি। ফলে আমরা প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছি। গণমাধ্যম বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মানুষকে অবগত রাখে। মুহূর্তের মধ্যে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা মানুষকে জানিয়ে দিচ্ছে। মানুষ ও সমাজের ওপর গণমাধ্যমের প্রভাব এত বেশি যে গণমাধ্যম চাইলেই মানুষের কোনো বিষয় ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে পারে আবার নেতিবাচকভাবেও দেখতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন ইরাকের ওপর হামলা চালায় তখন পশ্চিমা গণমাধ্যম প্রচার করে ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে। আর তা বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। ফলে হামলার স্বপক্ষে জনমত গড়ে ওঠে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় গণমাধ্যমের এই প্রচারণা ভুল ছিল। গণমাধ্যম মানুষের মধ্যে গণজাগরণ তুলতে পারে। আবার গণমাধ্যম ভুল ও বিকৃত তথ্য দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে। খুব সামান্য একটি বিষয়কেও গণমাধ্যম তার উপস্থাপনের মাধ্যমে বড় করে তুলতে পারে।বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। ২০০০ সালের পর থেকে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব গণমাধ্যম বিপ্লব ঘটেছে। এখন ঘোষণাপ্রাপ্ত পত্রিকার সংখ্যা প্রায় ১৫৯৭টি। বেসরকারি টিভি চ্যানেল রয়েছে দুই ডজনেরও বেশি। বেসরকারি রেডিও এখন এক ডজনের বেশি। এছাড়া গড়ে উঠেছে অনলাইন সংবাদমাধ্যম। কিন্তু এসবের লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে নেই কোনো স্বচ্ছতা। কালো টাকার মালিক ভূমিদস্যু অসাধু ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদ এসবের মালিক। ফলে গণমাধ্যমে জনস্বার্থ নয় ব্যক্তি স্বার্থ প্রাধান্য পাচ্ছে। গণমাধ্যমগুলোতে সংখ্যালঘু নারী বহুত্ববাদী গোষ্ঠীরা থেকে গেছে উপেক্ষিত। আমাদের গণমাধ্যমগুলোর সততা বস্তুনিষ্ঠতা নৈতিকতা ও পেশাদারিত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তাই সার্বিকভাবে বাংলাদেশের গণমাধ্যম ব্যবস্থা হতাশাব্যঞ্জক।
গণমাধ্যম কী
জনগণের দ্বারা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত তথ্য ও বিনােদনের মাধ্যমকে বলা হয় গণমাধ্যম। সাধারণত সংবাদপত্র বিভিন্ন পত্রিকা রেডিও এবং টেলিভিশন গণমাধ্যম হিসেবে সমাদৃত। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে কম্পিউটার ও ইন্টারনেটবিপুল তথ্যের এক অবিশ্বাস্য ভাণ্ডার। এ গণমাধ্যমটিরও দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটছে। স্বাধীন ও শক্তিশালী গণমাধ্যম জাতি গঠনেবিশেষ ভূমিকা পালন করে। গণমাধ্যমকে তাই বলা হয় জাতির বিবেক সমাজের দর্পণ।
বাকস্বাধীনতান গণতন্ত্র ও গণমাধ্যম
গণমাধ্যম মানুষের বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করে। গণমাধ্যম যখন স্বাধীনভাবে চলে বাকস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে জনগণের হয়ে কথা বলতে পারে তখন স্বভাবতই সেখানে গণতন্ত্র আছে বলে ধরে নেয়া যায়। তাই গণমাধ্যমকে বলা হয় গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত। গণমাধ্যম গণতন্ত্রকে সুসংহত করে। আর স্বাধীন গণমাধ্যম গণতন্ত্রেরই বহিঃপ্রকাশ। পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষেরই মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। গণমাধ্যম মানুষকে মত প্রকাশের জায়গা তৈরি করে দেয়। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী ও অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং রাষ্ট্রীয় কর্মকা কে গণমাধ্যম সকলের সামনে নিয়ে আসে। এতে করে জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হয় প্রত্যেককেই। তাই তাদেরকে দেশ ও দশের কথা ভাবতে হয়। এর ফলে গণতন্ত্রের ভিত্তিও পাকাপোক্ত হয়।
প্রচারণার হাতিয়ার গণমাধ্যম
যদিও গণমাধ্যমের নিজস্ব কর্মপদ্ধতি নীতি ও বাকস্বাধীনতার অধিকার রয়েছে তবুও বেশির ভাগ সময়ই গণমাধ্যম ব্যবহৃত হয় শাসক শ্রেণির প্রচারণার হাতিয়ার হিসেব। এর সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো আমাদের বাংলাদেশ টেলিভিশন। প্রতিটি সরকারই একে ব্যবহার করেছে নিজেদের প্রচারণা আর মতাদর্শ ছড়িয়ে দেয়ার হাতিয়ার হিসেবে। এমনকি সরকার বদলের সাথে সাথেই এর কর্মকর্তা কর্মচারী কলা কুশলী এমনকি সংবাদ পাঠক পাঠিকারাও বদলে যায়। শাসক শ্রেণি নিজেদের অন্যায় অবিচার শোষণ থেকে জনগণের চোখ ফেরাতে গণমাধ্যমগুলোকে ব্যবহার করে। নিজেদের গুণগান ও উন্নয়নের চমক দিয়ে ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করতে গণমাধ্যমগুলোকে বাধ্য করে। ফলে গণমাধ্যম সরকারের নিয়ন্ত্রণে থেকে হয়ে ওঠে সরকারি প্রচারণার মাধ্যম।
প্রয়োজন গণমানুষের গণমাধ্যম
গণমাধ্যমকে হতে হবে জনকল্যাণমুখী। জনগণের কল্যাণের জন্য গণমাধ্যমকে কাজ করতে হবে নিশ্চিত করতে হবে জনস্বার্থ। সরকার বা মালিকের নয় বরং জনগণের মুখপাত্র হিসেবে গণমাধ্যমগুলোকে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের উচিত নয়। গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিলে তবেই তা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে। সমাজ ও দেশের প্রতি দায়িত্বশীল থেকে গণমাধ্যমকে নিজের কর্ম পরিকল্পনা ঠিক করতে হবে। বস্তুনিষ্ঠভাবে সব কিছু সকলের কাছে তুলে ধরতে হবে। তবেই গণমাধ্যম গণমানুষের জন্য মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারবে।
গণমাধ্যমের অতীত ও বর্তমান
ছাপাখানা আবিষ্কারের পর থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চালু হয় সংবাদপত্র। তবে সেকালের।সংবাদপত্র আজকের সংবাদপত্রের মতাে ছিল না। পৃথিবীর প্রথম সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় রােমে। দৈনন্দিন বিভিন্ন খবরপরিবেশনের পাশাপাশি জন্মমৃত্যুর খবর কোর্টের মামলা অফিসিয়াল ঘােষণা আর্থিক খবর প্রভৃতি প্রকাশিত হতাে সেইসংবাদপত্রে। রেডিও আবিষ্কারের পর গণমাধ্যম এগিয়ে গেল একধাপ। এ শুতিযন্ত্রটি শব্দতরঙ্গের মাধ্যমে মানুষের কথা খবর গান প্রভৃতি পৌছে দেবার উপযােগী হওয়ায় ভীষণভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠল। ১৯২৬ সালে আবিষ্কৃত হলাে টেলিভিশন। শােনারসাথে সাথে গ্রাহকযন্ত্রের পর্দায় ভেসে উঠল ছবি। পরবর্তীকালে কম্পিউটার আবিষ্কার কম্পিউটারে ইন্টারনেটের ব্যবহার ইত্যাদিরমাধ্যমে গণমাধ্যম আধুনিক রূপে বিকশিত হতে লাগল । অতীতে গণমাধ্যম শিক্ষাবিস্তারের কাজে ব্যবহৃত হতাে না। সভ্যতারঅগ্রগতির সাথে সাথে এবং সময়ের পরিবর্তনে গণমাধ্যমগুলাে শিক্ষাবিস্তারের অন্যতম প্রধান অজগ হয়ে উঠেছে।
শিক্ষাবিস্তারে সংবাদপত্রের ভূমিকা
সংবাদপত্রের পাতায় পাতায় থাকে চলমান বিশ্বের চলতি ঘটনার যাবতীয় তথ্য।লেখাপড়াকে শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তােলার জন্য পড়ালেখার পাতা ক্যাম্পাস বিজ্ঞানের পাতা প্রভৃতিশিরােনামে সংবাদপত্রগুলােতে আলাদা পাতা প্রকাশিত হয়। বর্তমানে সংবাদপত্রের সংখ্যাও অনেক বেশি হওয়ায় শিক্ষার্থীরাতাদের পছন্দমতাে বেছে নিতে পারে।সংবাদপত্রে প্রকাশিত কৃতী শিক্ষার্থীদের ভালাে ফলাফলের কৃতিত্বপূর্ণ খবর ছবিসহ ছাপা হয়। এ ধরনের ছবি, সাক্ষাৎকারপৌছে যায় সারা দেশে। এ থেকে উৎসাহিত হয় অন্য শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি অনেক দরিদ্র মেধাবীর জীবনসংগ্রাম এবংকৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের কাহিনি গ্রাম ও শহরের পিছিয়ে পড়া দারিদ্র্যপীড়িত সন্তান ও তাদের বাবা মাকে উৎসাহিত করে।প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার পাশাপাশি দেশ বিদেশের বিভিন্ন তথ্য ও ঘটনার সাথে পরিচিত হওয়া যায় সংবাদপত্রের মাধ্যমে।
শিক্ষা বিস্তারে ইন্টারনেট
বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের যেকোনো বিষয় সম্পর্কে জানা যায় মুহূর্তের মধ্যেই। কোনো অজানা বিষয় লিখে সার্চ দিলেই জানা যায় সেই বিষয়ের সব কিছু। আজকাল অনলাইনে ক্লাসরুম ভিডিও আকারে প্রকাশ করে দূরদূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরাও সেই ক্লাসে অংশগ্রহণ করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। ইউটিউব থেকে যেকোনো বিষয়ে শিক্ষা, সংবাদ বা তথ্যচিত্র ভিডিও আকারে দেখা যায়।
শিক্ষাবিস্তারে রেডিওর ভূমিকা
শিক্ষাবিস্তারে রেডিও অত্যন্ত শক্তিশালী একটি মাধ্যম। গ্রামবাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও রেডিওসহজলভ্য। দামে সস্তা হওয়ায় বিনােদনের এ মাধ্যমটি অনেকের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। বিনােদনের পাশাপাশি শিক্ষার প্রসারে এমাধ্যমটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। রেডিওর মাধ্যমে শিক্ষার গুরুত্ব প্রচার করা হলে অনেক নিরক্ষর লােকও এতেউৎসাহিত হয়। শিক্ষামূলক শিশুতােষ অনুষ্ঠান আকর্ষণীয়ভাবে সম্প্রচার করলে শিশুরাও তাদের দৈনন্দিন পাঠকে আনন্দেরসাথে গ্রহণ করে । রেডিওর মাধ্যমে শিক্ষা আন্দোলনে ব্যাপক গণজাগরণ গড়ে তােলা সম্ভব।
শিক্ষাবিস্তারে টেলিভিশনের ভূমিকা
টেলিভিশন অত্যন্ত জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় বিনােদনমাধ্যম। শােনার পাশাপাশি ।দৃশ্য উপভােগকরার সুযােগ রয়েছে বলে তা আরও বাস্তবসম্মত। কাহিনির মাধ্যমে দৃশ্যদ্রব্য বিষয় উপস্থান টেলিভিশনের একটি ইতিবাচকদিক। শিক্ষার প্রসারে যা সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন বাংলাদেশে টেলিভিশন চ্যানেলগুলােতে প্রচারিত হয়শিক্ষামূলক কার্টুন মীনা ‘সিসিমপুর’ প্রভৃতি। নিরক্ষরদের অক্ষরজ্ঞান শেখানাে লেখাপড়ার গুরুত্বসহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষণীয়কার্টুনগুলােতে খুবই আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা হয়। শিশুদের জন্য তৈরি হলেও বড়রাও এ ধরনের অনুষ্ঠান উপভােগপরেন। রেডিওর মতাে অতটা সহজলভ্য না হলেও টেলিভিশনও এখন পৌছে গেছে গ্রামবাংলার চৌহদ্দিতে।বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টেলিভিশনের চ্যানেলুগুলােতে শিশুদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সেখানে রঙিন ছবি কাটুন বিষয়।পাপেট ইত্যাদি উপকরণ ব্যবহার করে লেখাপড়াকে শিশুদের কাছে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা হয়।
অন্যদিকে তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিকতম মাধ্যম কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট সারা বিশ্বের দরজা খােলা রাখে মানুষের জন্য।পৃথিবীর এমন কোনাে বিষয় নেই যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে জানা যায় না। অবশ্য এটি জ্ঞান অর্জনের অফুরন্ত ভাণ্ডার এবংকেবল শিক্ষিতরাই জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের মাধ্যমে উপকৃত হন। বিভিন্ন শিক্ষামূলক সিডি ব্যবহার করেকম্পিউটারের মাধ্যমেও শিক্ষার প্রসার ঘটানাে যায়। তবে এ মাধ্যম ব্যয়সাপেক্ষ। তাই সরাসরি না হলেও পরােক্ষভাবেকম্পিউটার এবং ইন্টারনেট শিক্ষাবিস্তারে ভূমিকা রাখে।
সার্বিকভাবে গণমাধ্যমগুলাের সাধারণ জ্ঞানের প্রতিযােগিতা শব্দের ধাধা বুদ্ধির খেলা শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করে। তাদেরসাধারণ জ্ঞানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়। অন্যদিকে পাঠ্যপুস্তকের বিভিন্ন ভুল ও অসংগতি শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটিসহ নানা বিষয়সমাজে তুলে ধরার মাধ্যমে গণমাধ্যমগুলাে যে সচেতনতা তৈরি করে তাও পরােক্ষভাবে শিক্ষাবিস্তারেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষাব্যবস্থার চিত্র বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটির কীভাবে শিক্ষাকে আরও আকর্ষণীয় করাযায় সেসব বিষয়েও ধারণা লাভ করা যায় গণমাধ্যম থেকে।
দেশাত্মবোধের জাগরণে গণমাধ্যম
শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো জনগণকে জাতীয় চেতনা ও দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত করা। গণমাধ্যমগুলো শিক্ষার এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। বেতার টেলিভিশন ও সংবাদপত্রসমূহ দেশের জনগণকে স্বাধীনতা ও দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত করে। দেশদ্রোহী বিভিন্ন শক্তি ও অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে অনন্য ভূমিকা রাখে গণমাধ্যম। পাশাপাশি এটা দেশের জন্য কল্যাণকর বিভিন্ন তথ্য ও তত্ত্ব তুলে ধরে। এজন্য বলা হয়েছে –Freedom and sovereignty of people is dependent on mass media.
উপসংহার
গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের রয়েছে প্রবল আকর্ষণ। গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য আমাদের জ্ঞানের এক বিরাট উৎস। গণমাধ্যম আছে বলেই পৃথিবীর কোথায় কি ঘটছে আমরা তা মুহূর্তেই জানতে পারছি। বহু দূরে ঘটেও সব কিছুই যেন ঘটছে আমাদের চোখের সামনে। তা সম্ভব হচ্ছে শুধুমাত্র গণমাধ্যমের কল্যাণেই। কিন্তু এই গণমাধ্যম আমাদের জন্য যেমন ইতিবাচক তেমনি নেতিবাচক। তাই মানুষ হিসেবে নিজের বিচার বুদ্ধি দিয়ে আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে গণমাধ্যমের কোনো দিকগুলো দ্বারা আমরা প্রভাবিত হব।
আরো পড়ুন :
- বাংলা প্রবন্ধ রচনা
- Composition : Newspapers
- রচনা : গণমাধ্যম
- রচনা : সংবাদপত্র
- Essay : The Freedom of the Press in Democracy