আমাদের বিদ্যালয়
ভূমিকা
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষার জন্য চাই আদর্শ বিদ্যাপীঠ বা বিদ্যালয়। এক সময় শিক্ষা ছিল আশ্রমে কেন্দ্রিক। শিক্ষার্থী সেই সময় আশ্রমে থেকেই গুরুর কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করত। আদর্শ বিদ্যালয় এক একটি আশ্রমবিশেষ। এমনই একটি আশ্রম আমার বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের নাম স্বপ্নিল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
আমার বিদ্যালয়
আমার বিদ্যালয়ের নাম রাজা রামমোহন বালিকা বিদ্যাপীঠ। রাজা রামমোহন রায়ের একান্ত ভালোবাসার সংস্থান এটি। এটি কলকাতা শহরের উত্তরে সুকিয়া স্ট্রীট নামক একটি রাস্তার উপর অবস্থিত। আমাদের বিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য হচ্ছে এই বিদ্যালয়ের পিছনেই মস্ত বড় একটি বাগান অবস্থিত।
ইতিহাস ও ঐতিহ্য
আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই জেলার এক অন্যতম নামজাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটির স্থাপনাকাল ১৯৬৫ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর। যাত্রারম্ভে এখানে দশম শ্রেণি অব্দি পড়ানো হতো। তারপর আস্তে আস্তে উচ্চ বিদ্যালয় হওয়ার পর জেলাজুড়ে এটি সুপরিচিতি লাভ করল। রাজা রামমোহন রায়ের স্মৃতি বিজড়িত এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠেছিল ওনার ই এক অন্যতম কাজের সূত্রে। নারী শিক্ষা। আমরা সকলেই জানি রাজা রামমোহন রায় আমাদের দেশে নারীশিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম পথপ্রদর্শক। সেই কার্যক্রমকে সঙ্গে নিয়েই আজ আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সগৌরবে এগিয়ে চলেছে।
প্রতিষ্ঠা
স্বপ্নিল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত। তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত এ বিদ্যালয়ে পাঠদান করা হয়। বিদ্যালয়টি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে বেশ কয়েকবার স্বীকৃক্তি লাভ করেছে।
অবস্থান
ঢাকা মহানগরীর কেন্দ্রবিন্দুতে আমাদের বিদ্যালয় অবস্থিত। জাতীয় সংসদ ভবনের পশ্চিম পাশে মনােম পরিবেশে বিদ্যালয়। এর উত্তর পাশে একটি ব্যস্ত রাস্তা। বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার জন্য ভালাে ব্যবস্থা রয়েছে। মহানগরীর যেকোনাে এলাকা থেকে বিদ্যালয়ে সহজেই আসা যায়।
বিদ্যালয়ের পরিবেশ
বিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের গাছ রয়েছে। বিশাল প্রাঙ্গণে দুটি দীর্ঘকায় চারতলা ভবন। তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত তিনটি করে শাখা এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিকে সাতটি করে শাখা রয়েছে। প্রতি শাখার জন্যই রয়েছে আলাদা ও পরিপাটি শ্রেণিকক্ষ। অধ্যক্ষ ও মূল উপাধ্যক্ষের নিজের কক্ষ রয়েছে। বিভিন্ন অংশে বিভক্ত একটি বড় অফিম আছে। শিক্ষকের জন্য রয়েছে তিনটি সুন্দর কক্ষ। একটি বড় পাঠাগার আছে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের বই রয়েছে। বিদ্যালয় ভবনের সামনে বিশাল মাঠ।
শিক্ষার্থী
আমাদের বিদ্যালয়ে প্রতিটি শ্রেণিতে তিনটি করে শাখা । প্রতি শাখায় পঞ্চান্ন জন করে শিক্ষার্থী। তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মােট শিক্ষার্থীসংখ্যা তেরশাে পঞ্চাশ এবং কলেজ শাখার শিক্ষার্থীসংখ্যা এক হাজার চারশাে। সকালে সব শিক্ষার্থী যখন জাতীয় সংগীত পরিবেশনের জন্য একসঙ্গে দাঁড়াই তখন মনে হয় এ যেন শিক্ষার্থীদের এক বিশাল মিলনমেলা।
শিক্ষক
আমাদের অধ্যক্ষ একজন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ। আমাদের দুজন উপাধ্যক্ষ আছেন। প্রিয় শিক্ষকবৃন্দ আমাদের সন্তানের মতাে স্নেহ করেন এবং আলােকিত মানুষ হবার শিক্ষা দেন। আমরা তাদের গভীরভাবে শ্রদ্ধা করি।
লেখাপড়ার পদ্ধতি
সপ্তায় ছয় দিন আমাদের বিদ্যালয় খােলা থাকে। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। প্রতিদিন আমাদের ছয়টি ক্লাস হয়। প্রতি সপ্তাহে রবি মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার আগের সপ্তাহে পড়ানাে হয়েছে এমন সব বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। এ ছাড়াও বছরে তিনটি পরীক্ষা হয়। সাপ্তাহিক ও টেস্টের ৪০% এবং ত্রৈমাসিক ষান্মাসিক ও বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে চূড়ান্ত ফল তৈরি করা হয়। পরীক্ষার কারণে আমাদের পড়ালেখার টেবিল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপায় থাকে না।
গবেষণাগার
বিজ্ঞানের বিষয়গুলাের ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য পদার্থবিদ্যা রসায়ন গণিত জীববিজ্ঞান গবেষণাগার এবং কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে।
পাঠ্যক্রম অতিরিক্ত বিষয়ের চর্চা
আমাদের বিদ্যালয়ে কতগুলাে ক্লাব আছে। যেমন- নাট্যদল সাংস্কৃতিক সংগঠন বিতর্ক ক্লাব দাবা ক্লাব সায়েন্স ক্লাব সংগীতদল পাঠচক্র ও শরীরচর্চা ক্লাব।
অনুষ্ঠানাদি
ক্লাবগুলাে সারা বছর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের আয়ােজন করে থাকে। এসব অনুষ্ঠানে দেশ বিদেশের বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ আসেন। তাঁদের সঙ্গে পরিচিত হবার সুযােগ যেমন আমরা পাই তেমনি তাঁদের কাছ থেকে নতুন নতুন তথ্য জানতে পারি।
খেলাধুলা
আমাদের বিদ্যালয়ের খেলার মাঠটি অনেক বড়। মাঠে নিয়মিত খেলাধুলা হয়। প্রতিদিন বিকেলে মৌসুম অনুযায়ী ফুটবল ক্রিকেট ভলিবল বাস্কেটবল হ্যান্ডবল ও ব্যাডমিন্টন খেলা হয়। আমাদের বিদ্যালয়ে ফুটবল ক্রিকেট ও বাস্কেটবল টিম আছে। বিভিন্ন প্রতিযােগিতায় অংশগ্রহণ করে আমরা অনেক পুরস্কার লাভ করেছি।
পরীক্ষার ফল
প্রতিবছরই আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় ভালাে ফল অর্জন করে। পিএসসি জেএসসি এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফল সবার দৃষ্টি কাড়ে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় আমাদের বিদ্যালয় প্রতিবছরই সেরা দশে থাকে।
নিজস্ব বৈশিষ্ট্য
পরীক্ষার ভালাে ফল এবং ক্লাবের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের জন্য আমাদের বিদ্যালয়ের সুনাম রয়েছে। আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষাপদ্ধতি ও নিয়ম শৃঙ্খলা অন্য সব প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যতিক্রমী।
বিদ্যালয়ের একটি স্মরণীয় ঘটনা
আমি সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী। স্কুল লীগের খেলায় আমাদের স্কুল ফাইনালে উঠেছে। গতবছর সেমিফাইনালে ভাল খেলেও আমাদের স্কুল হেরে গিয়েছিল। এবছর বিপরীত ঘটনা। আমরা খুবই উৎফুল্ল। কেননা প্রতিপক্ষ স্কুলকে আমরা একাধিকবার হারিয়ে দিয়েছি। জয় আমাদের নিশ্চিত। খেলা হবে আমাদের স্কুলের মাঠে। স্কুল শুরুর আগে প্রার্থনা হয় জাতীয় সংগীত হয়।
প্রার্থনা শেষে প্রধান শিক্ষক মহাশয়া আমাদের স্কুলের খেলোয়াড়দের মঞ্চের উপর আহ্বান করলেন। তাদের উৎসাহ দিলেন। সমবেত ছাত্রীরা ফাইনাল খেলা দেখতে আসার জন্য চতুর্থ ঘন্টার পর ছুটির আবেদন করা হলো। আমি ছিলাম সেই বছর স্কুল লিগ খেলার অন্যতম লিডার। প্রত্যেকে একসাথে মিলে স্কুল লীগের নিয়মিত প্র্যাকটিস সেখান থেকে নানা অচেনা ছাত্রীদের সাথে আলাপ এবং বন্ধুত্ব স্থাপন। এবং নানা রকম অভিজ্ঞতা দিয়ে সেবার শেষ হয়েছিল আমাদের স্কুল লিগ। সেই দিনটি ভোলার মত নয়।
উপসংহার
আমাদের বিদ্যালয় শুধুমাত্র ভালো শিক্ষা এবং ভালো ফলাফল নয় বরং সর্বদা একজন ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে উৎসাহ দেয় বারবার। সেইজন্য আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নানা শিক্ষানুরাগীদের মনে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে রয়েছে। শুধু পুঁথিগতই নয় প্রকৃত মূল্যবোধের শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে প্রতিবছর আমাদের স্কুল থেকে ছাত্রীরা নিজেদের জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমি এই বিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসেবে গর্ব বোধ করি।